ভারত–পাকিস্তান দ্বন্দ্ব মেটাতে চিনও মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়েছে। বেজিংয়ের এমন দাবির মধ্যেই নতুন বছরের শুরু থেকে চিনের উপর বাণিজ্যিক চাপ বাড়াল দিল্লি। চিন থেকে আমদানি হওয়া নির্দিষ্ট কিছু ইস্পাত পণ্যের উপর আগামী তিন বছরের জন্য ১১ থেকে ১২ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থ মন্ত্রকের গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রথম বছরে চিনা ইস্পাতের উপর ১২ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে ১১.৫ শতাংশ এবং তৃতীয় ও শেষ বছরে ১১ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সস্তা চিনা ইস্পাতের আমদানিতে লাগাম টানতেই এই পদক্ষেপ। কারণ, এই আমদানির জেরে দেশের বড় ইস্পাত প্রস্তুতকারী সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
Advertisement
সূত্র মতে, তিন বছর পর মেয়াদ শেষে নতুন করে লোকসভা ভোটে যেতে হবে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। তার আগেই দেশীয় শিল্পকে চাঙ্গা করতে চাইছে এনডিএ সরকার। বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে চলা শুল্কযুদ্ধের আবহে দেশীয় বাজারকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানো জরুরি বলেই মনে করছে কেন্দ্র। সেই লক্ষ্যেই চিনা ইস্পাতের উপর ধাপে ধাপে শুল্ক বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত।
Advertisement
এদিকে, বছরের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সুরে সুর মিলিয়ে চিনও জানিয়েছে, ভারত–পাকিস্তান সংঘর্ষ থামাতে তারাও মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র এই দাবিকে দিল্লির তরফে কার্যত উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ভাবে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া না মিললেও বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্রের বক্তব্য, চিনের এই দাবি সম্পূর্ণ উদ্ভট।
দিল্লির যুক্তি, পহেলগাম জঙ্গি হামলার পর ভারতের অপারেশন সিঁদুর ছিল সম্পূর্ণ নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক। সেই অভিযান শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তানের তরফে সংঘর্ষবিরতির অনুরোধ জানানো হয়। তার পরই ভারত সংযম দেখায়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় তৃতীয় কোনও দেশের মধ্যস্থতার কোনও ভূমিকা ছিল না।
উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর গত এপ্রিল থেকে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মে মাসে দুই দেশ চার দিন ধরে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১০ মে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। তার পরেই ট্রাম্প দাবি করেন, শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনিই সংঘর্ষ থামিয়েছেন।
ভারত সরকার শুরু থেকেই সেই দাবি নাকচ করে জানায়, সামরিক স্তরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সংঘর্ষবিরতি হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, আমেরিকা বা চিন— কারও পরামর্শেই অপারেশন সিঁদুর থামেনি। পাকিস্তান সংঘর্ষ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ভারত আক্রমণ বন্ধ করে।
Advertisement
