নিজের জীবন দিয়ে যাত্রীদের প্রাণ বাঁচালেন বায়ুসেনার পাইলট দীপক শাঠে

বিশেষজ্ঞদের দাবি, স্কোয়াড্রন লিডার (অবসরপ্রাপ্ত) দীপক এবং তাঁর সহকারী (কোপাইলট) অখিলেশ কুমারের তৎপরতায় মৃতের তালিকা দীর্ঘায়িত হয়নি।

Written by SNS New Delhi | August 9, 2020 11:56 am

দীপক শাঠে (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

আমরা অনেককেই নিয়ে মাতামাতি করি। কিন্তু গর্ব কার মতো অনেক মানুষ থাকেন যারা রয়ে যান আঁধারে। কোঝিকোড়ের বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট দীপক শাঠে এবং ফাস্ট অফিসার অখিলেশ কুমাররা হলেন প্রকৃত অর্থে রিয়েল হিরো।

শুক্রবার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে নিজের জীবনের বিনিময়ে সিংহভাগ যাত্রীর প্রাণ রোক্ষা করলেন। এয়ার ইন্ডিয়ার আইএক্স ১৩৪৪-এর পাইলট দীপক শাঠে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, স্কোয়াড্রন লিডার (অবসরপ্রাপ্ত) দীপক এবং তাঁর সহকারী (কোপাইলট) অখিলেশ কুমারের তৎপরতায় মৃতের তালিকা দীর্ঘায়িত হয়নি। কিন্তু প্রাণ গিয়েছে এই দুই পাইলটের।

ভারতীয় বায়ুসেনার প্রশিক্ষণপর্বে ‘সোড় অব অনার’ জিতেছিলেন দীপক শাঠে। ফাইটার পাইলট হিসেবেও তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমান অবতরণ করতে সমস্যা হয়। বিমানটি দু’বার নামতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। আকাশে বেশ কিছুক্ষণ চক্কর কাটে। দৃশ্যমানতাও ছিল অনেক কম। দীপকের বুদ্ধিমত্তায় প্রবল বৃষ্টিতে টেলি টপ রানওয়ে থেকে বিমান পিছলে পড়ে দু-টুকরো হলেও বিমানে আগুন কিংবা বিস্ফোরণ কোনওটাই ঘটেনি।

ভয়ঙ্কর বিপদ সামনে অপেক্ষা করছে বুঝতে পেরেও সিদ্ধান নিয়েছিলেন সঠিক। সেকারণেই বিমানটিকে আকাশে চক্কর কাটিয়ে জ্বালানি কমিয়ে নিয়ে এসেছিলেন পাইলটরা। বিমানটিতে যদি আগুন লাগত, তাহলে আরও বড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটত। হায়দ্রাবাদ ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স আকাদেমির প্রাক্তনী দীপক শাঠে ২২ বছর বায়ুসেনায় নানাধরনের বিমান চালিয়েছেন। সেকারণে তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক।

পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স আকাদেমিতেও তিনি বিমান চালিয়েছেন। হিন্দুস্তান অ্যারোনোটিস লিমিটেড (বেঙ্গালুরুর হ্যাল)-এও পাইলটের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিভাবে বিমান চালাতে হয় তারও প্রশিক্ষণ ছিল তার। শুক্রবার রাতে এর সবকিছুই তিনি প্রয়োগ করেছিলেন। তাই সিংহভাগ যাত্রীর প্রাণ বাঁচলেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি।

এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৩৭ বিমান চালানো শুরু করেন দীপক বায়ুসেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর। কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করেন। কোঝিকোড় বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছোট হওয়ার কারণে বোয়িং-৭৭৭ এবং এয়ারবাস এ ৩৩০-এর মতো বড় বিমান ওঠানামা যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেকথা জানতেন দীপক। বিপদ জেনেও যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে ঝুঁকি নিতে হয়েছিল দীপককে। দু’বার আকাশে চক্কর দিয়ে তৃতীয়বার বিমানটিকে অবতরণ করানোর চেষ্টা করেন ক্যাপ্টেন শাঠে। বিমানটি নামানোর পর বুঝতে পারেন ব্রেক ধরেনি সঠিকভাবে। সেকারণেই বিমানটি পিছলে যায়। বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই বোঝা মাত্র তিনি বিমানটির প্রথমে ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন।

বিমানটি রানওয়ে পার হয়ে ৩৫ ফুট গভীর খাদে গিয়ে দু-টুকরো হয়ে যায়। বিমানের সামনের অংশটিও ভেঙে পড়ে খাদে। বাকি অংশ থেকে যায় অক্ষত অধিকাংশ যাত্রীদের নিয়ে। শাঠে যদি বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ না করতেন, তাহলে দশ বছর আগে ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার মতোই সমস্ত যাত্রী নিয়ে দাউ দাউ করে জ্বলে যেতে পারত বিমানটি।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২২ মে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান দুবাই থেকে ম্যাঙ্গালোর এয়ারপোর্টে অবতরণ করছিল। কোঝিকোড়ের মতো ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরটিও টেবিল টপ। সেদিন রাতেও তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। সেবার ১৬০ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন দীপক শাঠে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের প্রাক্তন পাইলট। ২০০৩ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি রাষ্ট্রপতি মেডেলও পেয়েছিলেন।

অন্যদিকে, ৩২ বছরের ফাস্ট অফিসার অখিলেশ কুমার ২০১৭ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট হিসেবে যোগ দেন। উত্তরপ্রদেশের মথুরার বাসিন্দা অখিলেশ বন্দে ভারত মিশনে এর আগে দুবাই থেকে কোঝিকোড়ে যাত্রী নিয়ে এসেছিলেন। ঠিক তিনমাস পরে এমনই এক মিশনে নিবন্দরে তিনি ফিরে এলেন। তবে এবার অখিলেশ বাড়ি ফিরবেন কফিনে। বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তাঁর অপেক্ষায়।