• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

পাঞ্জাবে আপ-ঐক্য অটুট, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান

কেজরির বৈঠকে হাজির পাঞ্জাবের ৯১ জন আপ বিধায়ক

ফাইল চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী বদলের কোনও প্রশ্ন নেই, দলে ভাঙনেরও কোনও আশঙ্কা নেই। আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর একথা জানিয়েছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান। মঙ্গলবার দিল্লিতে বৈঠক ডাকেন আপ-এর শীর্ষ নেতা কেজরিওয়াল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ পাঞ্জাবের মোট ৯৩ জন আপ বিধায়কদের মধ্যে ৯১ জন।  বৈঠকের পর পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন,  ‘পাঞ্জাবের আপ সরকারের কোনও সঙ্কট নেই।’ দিল্লিতে বিপর্যয় হলেও পাঞ্জাবে সরকার ও দল অটুট রয়েছে এবং থাকবে।

দিল্লি বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরই পাঞ্জাব বিধানসভার পরিষদীয় দলের সদস্যদের বৈঠকে ডেকেছিলেন আপের শীর্ষ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেজরিওয়াল-সহ দলের শীর্ষনেতারা দিল্লির কপূরথালা হাউসে বৈঠকে হাজির ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন পাঞ্জাবের  ৯১ জন আপ বিধায়ক। সেই বৈঠকের পরই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মানের দাবি,  দলবদল কংগ্রেসের সংস্কৃতি, আম আদমি পার্টি-র নয়।  

দিল্লির বিধানসভা ভোটে আপের ভরাডুবির পরেই পাঞ্জাব সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। দিল্লির নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন পাঞ্জাবে আপ পরিবারে অসন্তোষের খবর শোনা যাচ্ছিল। ফল প্রকাশের পর পাঞ্জাবের বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা প্রতাপ সিংহ বাজওয়া আপে ভাঙনের ইঙ্গিত দিয়ে দাবি করেছিলেন, আপের ৩০ জন বিধায়ক আগে থেকেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মানের ওপর কেজরিওয়াল প্রসন্ন নন। তাঁকে বদলানো হতে পারে। বাজওয়ার আরও দাবি ছিল, মানও দল বদল করতে পারেন। এর পরেই তড়িঘড়ি পাঞ্জাবের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করলেন কেজরিওয়াল।

দলের বিধায়কদের সঙ্গে কেজরিওয়ালের বৈঠকের শেষে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মান বলেন, আপের বিধায়কদের দিকে না দেখে কংগ্রেস নেতাদের উচিত দিল্লিতে তাঁদের বিধায়কদের সংখ্যার হিসাব করা। তিনি বলেন, ‘আমি দল ছাড়ব কিনা সেই জল্পনাতে তাঁদের লাভ নেই। কারণ সেই প্রশ্নই ওঠে না। এই দল আমরা নিজেদের ঘাম রক্ত দিয়ে গড়ে তুলেছি।’ মান জানান, দিল্লি ভোটে নিরলসভাবে কাজ করার জন্য পাঞ্জাবের বিধায়কদের কেজরিওয়াল আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 

মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মানকে সরানোর আশঙ্কার কথা তোলেন দিল্লির রাজৌরি গার্ডেন কেন্দ্র থেকে জয়ী বিজেপি বিধায়ক মনজিন্দর সিং সিরসা। এক ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেন, আপ সুপ্রিমো কেজরিওয়াল পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে চাইছেন। কারণ, কেজরিওয়াল মনে করেন, মান তাঁর দায়িত্ব যোগ্যতার সঙ্গে পালন করতে পারছেন না। রাজ্যের মহিলাদের মাসে ১ হাজার টাকা করে দেোয়ার প্রতিশ্রুতি্ তিনি এখনও রাখতে পারেননি। মাদকের কারবার বন্ধ করতেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এই সমস্ত অভিযোগের জবাবে মান বলেন, বিরোধীরা যা খুশি বলতে পারেন।     

পাঞ্জাব বিধানসভার মোট সদস্যসংখ্যা ১১৭ । আপের মুখ্যমন্ত্রী মান-সহ আপের বিধায়ক সংখ্যা ৯৩। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। তাদের বিধায়ক সংখ্যা ১৬। অন্য বিরোধী দলের মধ্যে শিরোমনি আকালি দলের সদস্য ৩, বিজেপির ২। এছাড়াও ১ জন করে বিএসপি ও নির্দল বিধায়ক রয়েছেন পাঞ্জাব বিধানসভায়। অর্থাৎ, বাজওয়ার দাবিমতো ৩০ জন আপ বিধায়ক দল ত্যাগ করলেও সরকার পতনের আশঙ্কা নেই। সরকার গড়তে সমর্থন প্রয়োজন কমপক্ষে ৫৯ জনের। 

তবে রাজনৈতিক তরজার সূত্রপাত হয়েছিল অন্য অঙ্কে। দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের এক সপ্তাহ আগে একটি গাড়ি থেকে নগদ ৮ লক্ষ টাকা এবং মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে শোরগোল ছড়ায় দিল্লিতে। কারণ, টাকা ও মাদকের সঙ্গে সেই গাড়ি থেকে আপের প্রচারপত্র মিলেছিল বলে দাবি করে দিল্লি পুলিশ। গাড়িটি আটক করা হয় পাঞ্জাব ভবনের সামনে থেকে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও ছিল পাঞ্জাবের। সেই সময় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সরকার ফেলার ‘চক্রান্ত’ করছে বিজেপি। দিল্লিতে আপ সরকারের পতনের পরে কেজরি-ঘনিষ্ঠ মানের ভবিষ্যৎ ঘিরে তাই জল্পনার শুরু। এমনকি মান এবার কেজরিকে ছেড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ককে নিয়ে এনডিএতে শামিল হতে পারেন বলেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির বৈঠকে অধিকাংশ বিধায়ক হাজির হওয়ায় স্বস্তি মিলল আপ সুপ্রিমোর।