আগামী আগস্ট মাসের মধ্যেই রাজ্যে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (স্পেশ্যাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) শুরু হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। এর আগে রাজ্যে ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি ভোটার তালিকার এসআইআর বা ‘স্পেশ্যাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’-এর কাজ শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ফের সেই কাজ শুরু হতে চলেছে।
কার্যত বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু হওয়ার পরে এ বার নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। সম্প্রতি কালীগঞ্জের উপনির্বাচনেও সেই কাজ করেছিল নির্বাচন কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী, স্পেশ্যাল ইন্টেনসিভ রিভিশন-এর কাজ করার জন্য প্রথমে অনলাইনে আবেদন শুরু হবে। তার পরে কমিশনের প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাইয়ের কাজ করবেন। কারও বিরুদ্ধে ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরির প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে।
যদিও নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন। দলের লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক এবং রাজ্যের তিন মন্ত্রী— ফিরহাদ (ববি) হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং অরূপ বিশ্বাস কমিশনের সদর দপ্তরে গিয়ে তাঁদের একাধিক আপত্তির বিষয়টি জানিয়েছেন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোনও ভোটারের নাম যাতে বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করার জন্য মঙ্গলবার কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল।
প্রসঙ্গত, কমিশনের সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী, যাঁরা ১৯৮৭ সালের পরে জন্মেছেন, তাঁদের মা-বাবার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান সংক্রান্ত তথ্য় দেওয়ার শর্ত ছিল। এখন যদিও তা থেকে কমিশন কিছুটা সরে এসেছে। সাংসদ কল্য়াণ বলেছেন, এদিন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে কর্তারা বারবার বলেছেন, তৃণমূলের দাবি ‘বিবেচনা’ করে দেখা হবে।
বাবা-মায়ের জন্মতারিখ ও জন্মস্থানের প্রমাণ দেওয়ার ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ দাবি, আসলে তৃণমূল সমর্থকদের বাদ দিয়ে ‘বহিরাগত’দের নাম ভোটার তালিকায় ঢোকানোর ষড়যন্ত্র করছে মোদী সরকার। বিহারের বিরোধী দলনেতা আরজেডির তেজস্বী যাদবও বিষয়টি নিয়ে সরব হন। এরপরই ভোটার তালিকার ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হল নির্বাচন কমিশন। সোমবার রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে কমিশন জানিয়ে দিল, বিহারে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের কোনও নথি দিতে হবে না। স্রেফ ‘এনিউমেরেশন ফর্ম’ ভরলেই চলবে। এমনকী, তাঁদের সন্তানরাও বাবা-মায়ের নথি দেওয়ার হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। তবে নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ আর এনিউমেরেশন ফর্ম ‘ফিল-আপ’ করতে হবে।
অর্থাৎ এখন শুধুমাত্র ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় নাম আছে উল্লেখ করলেই চলবে। তাছাড়া এখন খসড়া তালিকা তৈরি হচ্ছে। যাদের কাছে কোনও ডকুমেন্ট নেই, তারাও ‘এনিউমেরেশন ফর্ম ‘‘ফিল-আপ’ করতে পারবে। তবে যখন ফাইনাল তালিকা তৈরি হবে, তার আগে বুথ লেভেল অফিসারকে নথি দেখাতে হবে।
যদিও নির্বাচন কমিশনের মতে, এই ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের মধ্যে কোনও বিতর্ক নেই। সংবিধানের ৩২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই কাজ করা হচ্ছে। রাজ্যের কোনও ভোটারই যাতে ভোটাধিকার থেকে বাদ না পড়ে, সেই লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। পাশাপাশি কোনও অবৈধ ভোটারের নাম যাতে তালিকায় না থাকে, সেটাও সুনিশ্চিত করা হবে।