পেশাগত ব্যস্ততা তাঁকে সারা বছর রাজনৈতিক কর্মসূচির সাথে যুক্ত রাখলেও পুজোর চার দিন বারাসতের চারবারের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার নিজেকে সরিয়ে রাখেন রাজনীতির অঙ্গন থেকে। পুজোর সময় তিনি সম্পূর্ণ মগ্ন থাকেন তাঁদের ৩৩০ বছরের পুরনো পারিবারিক দুর্গাপুজোর কাজে। নিষ্ঠাভরে দেবীর পুজো থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়নের মতো প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়, সবটাই তাঁর তত্ত্বাবধানে চলে।
ঘোষ দস্তিদার পরিবারের দুর্গাপুজো এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। এর সূচনা স্বাধীনতার অনেক আগের সময়ে, যখন ঘোষ দস্তিদার পরিবারের আদি ভিটে ছিল বরিশালে। পরিবারে প্রচলিত একটি কাহিনীতে জানা যায়, এক রাতে পরিবারের এক সদস্য, কালীপ্রসন্ন ঘোষ দস্তিদার স্বপ্নে দেবী দুর্গার দর্শন পান। স্বপ্নে দেবী তাঁর কাছে খাবার চেয়েছিলেন। দেবী দুর্গার নির্দেশ ছিল, ঘরের এক কোণে রাখা দুধ ও চাল দিয়ে পরমান্ন রেঁধে তাঁকে খেতে দিতে হবে। সেই আদেশ অনুযায়ী, কালীপ্রসন্ন দেবীকে খাওয়ান। সেই ঘটনার পর থেকেই দেবীর পুজোর সূচনা হয় ঘোষ দস্তিদার পরিবারে।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আজও সেই পরমান্ন রান্না করে দেবীকে নিবেদন করার রীতি রয়েছে। পরিবারের মধ্যে এই পরমান্ন “চরু” নামে প্রচলিত । দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও ঘোষ দস্তিদার পরিবারের কিছু সদস্য ওপার বাংলায় থেকে যান এবং সেখানেই পুজো চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে, ৪১ বছর আগে, পারিবারিক সেই পুজো নিয়ে আসা হয় মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়াতে, যেখানে আজও কালীপ্রসন্ন ঘোষ দস্তিদারের ২৯তম বংশধরেরা সেই পুজোর আয়োজন করেন।
পুজোর আয়োজন যেমনই হোক, বিশেষত নবমীর দিন দিগবেড়িয়ার বাড়িতে আয়োজন করা হয় ধুনুচি নাচের, যা ঘোষ দস্তিদার পরিবারের একটি ঐতিহ্যবাহী অংশ। পরিবারের প্রায় সবাই এই নাচে অংশ নেন। এছাড়াও সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত চলতে থাকে সবজি বলির প্রথা, যা এই পুজোর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
সারা বছর সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার অত্যন্ত ব্যস্ত থাকেন তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়ে। বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রীর পদে থাকায় তাঁকে প্রায়ই দলের বিভিন্ন কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। তবে পুজোর চারদিন তাঁর জন্য বিশেষ। এই সময়টি তাঁর রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যখন তিনি একান্তে পারিবারিক পরিবেশে সময় কাটান। তাঁর স্বামী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁদের দুই ছেলে বৈদ্যনাথ ও বিশ্বনাথ দুজনেই চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। পুজোর সময় পরিবারের সবাই মধ্যমগ্রামের বাড়িতে একত্রিত হন। দলের নেতা-মন্ত্রীরাও অতিথি হয়ে আসেন, আর তাঁদের আপ্যায়নের দায়িত্ব নেন সাংসদ নিজেই। পুজো যেন এক মিলন উৎসব হয়ে ওঠে যেখানে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সবাই একসাথে দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন।
কাকলি ঘোষ দস্তিদার জানান, “আমাদের বাড়িতে উমা রক্তকাঞ্চন বর্ণা। বাড়ির সোনার দুর্গামূর্তির সারা বছর পুজো হয়। এই সময়ে দুই প্রতিমার এক সঙ্গে পুজো হয়। প্রতিমা আসে কুমোরটুলি থেকে। দশমীতে মায়ের বিসর্জনে মনটা খারাপ লাগে। কানে কানে দেবীকে বলি আবার এসো গো মা।’