• facebook
  • twitter
Monday, 2 December, 2024

বহুগামী ও নায়িকাদের টাকায় চলা বিবাহিত পুরুষেই দুই রানি শেষ 

সুনিতা দাস  মুম্বাই ,১৪ ফেব্রুয়ারি — মধুবালা যেমন সৌন্দর্যের দেবী, তেমন মীনাকুমারী আবেগ ও সুষমাদীপ্ত অভিনয়ের ট্র্যাজেডি কুইন। দু’জনেই জন্মেছিলেন একই সালে, ১৯৩৩। দু’জনেই শিশুশিল্পী হিসেবে ফিল্মে অভিষিক্তা। তার পরে নায়িকা হয়ে দু’জনেই প্রথমা। তবে তাঁদের মিল এখানেই শেষ নয়। মধুবালা আর মীনাকুমারীর ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে মিল। একজন পুরুষকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে দুই নায়িকার প্রেম। প্রেমিক

সুনিতা দাস 

মুম্বাই ,১৪ ফেব্রুয়ারি — মধুবালা যেমন সৌন্দর্যের দেবী, তেমন মীনাকুমারী আবেগ ও সুষমাদীপ্ত অভিনয়ের ট্র্যাজেডি কুইন। দু’জনেই জন্মেছিলেন একই সালে, ১৯৩৩। দু’জনেই শিশুশিল্পী হিসেবে ফিল্মে অভিষিক্তা। তার পরে নায়িকা হয়ে দু’জনেই প্রথমা। তবে তাঁদের মিল এখানেই শেষ নয়।

মধুবালা আর মীনাকুমারীর ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে মিল। একজন পুরুষকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে দুই নায়িকার প্রেম। প্রেমিক কবি ও পরিচালক কামাল আমরোহী, যিনি বয়সে অনেকটাই বড় ছিলেন দুই নায়িকার চেয়ে। কিন্তু কামাল আমরোহীর হাত ধরেই এই দুই নায়িকার ফিল্মের নায়িকা রূপে অভিষেক এবং প্রতিষ্ঠা পাওয়া। এর পর শ্যুটিং থেকে ঘনিষ্ঠতা।

১৯৪৯ সালের বিখ্যাত রহস্য রোমাঞ্চ ছবি ‘মহল’। ‘বম্বে টকিজ’ ও অশোক কুমারের উদ্যোগে এই ছবি তৈরি হয়। নায়ক অশোক কুমার। কামাল আমরোহীর একক পরিচালক হিসেবে নিজের ডেবিউ ছবি ছিল এই ‘মহল’। অশোক কুমার নায়িকার ভূমিকায় চান সুরাইয়াকে। কিন্তু সুরাইয়ার চেয়ে নবাগতা মধুবালা নতুন মুখ, তাই তাঁকে নিলে ছবি বেশি হিট হবে বলে মধুবালার ছবি অশোক কুমারের দিকে এগিয়ে দেন কামাল আমরোহী। ষোল বছরের মধুবালাই ফাইনাল হন। মধুবালা নায়িকা রূপে সুযোগ পান কামাল আমরোহীর জন্যই। ষোলো বছরেই স্টারডমের স্বাদ পান মধুবালা।

তখন থেকেই মধুবালা বলিউডের সব হিরোদের নয়নমণি হয়ে যান। মধুর রূপ-মাধুরীতে পাগল হয়ে যায় সব ক্ষমতাশালী পুরুষের হৃদয়। প্রযোজক থেকে পরিচালক সবার ছবিতেই তখন চাই মধুবালাকে। এমনকি এও শোনা যায়, মধুবালা যখন শাম্মি কাপুরের প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন। তাই শাম্মি তাঁর মায়ের আঁচল ধরে খুব কেঁদেছিলেন।

এ হেন মধুবালাই পড়েছিলেন ওই সময়ে বলিউডের বিবাহিত ও সন্তানের বাবার প্রেমে।

সেই যুগে ‘মহল’ ছিল প্রথম সাসপেন্স থ্রিলার, সর্বকালীন সুপারহিট ছবি। সে ছবি নাবালিকা মধুবালাকে স্টার বানিয়ে দেয় এবং সে ছবির গান লতা মঙ্গেশরকে দেয় সঙ্গীতশিল্পীর স্টারডম। এই দুই নারীর উন্নতির কেরিয়ারে তাই জড়িয়ে আছে কামাল আমরোহীর অবদান।

কিন্তু গন্ডগোল বাঁধল, যখন মধুবালা কামাল আমরোহীর প্রেমে পড়ে গেলেন। প্রথমদিকে এই প্রেম মধুবালার দিক থেকে একতরফা ছিল, কিন্তু বিবাহিত কামাল আমরোহীও সাড়া দিয়েছিলেন মধুর প্রেমে। মধুবালা ও কামাল মেকআপ রুমে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটাতেন এবং মধুর জীবনে এই প্রেম পর্ব ছিল সেরা সময়। কামাল আমরোহী মধুবালার চেয়ে বয়সে অনেকটাই বড় হওয়ায় কখনও শাসনে, কখনও আবার স্নেহে রাখতেন মধুকে। মধুও আমরোহীকে ভালবেসে সুখী ছিলেন কারণ মধুবালার বাবা আতাউল্লাহ খান এই সম্পর্ককে সম্মতি দিয়েছিলেন। আশীর্বাদ করেছিলেন। অথচ এই মধুবালার পিতাই মধুবালা-দিলীপ কুমারের প্রেমে পরবর্তীকালে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।

আমরোহী শুধু মধুর ভালোবাসা ছিলেন না, ছিলেন মধুর মেন্টরও। আমরোহী সহ-পরিচালক হিসেবে এর আগেও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন। আমরোহী যে অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করতেন বেশি, তাঁর সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন। আমরাহীর প্রথমা স্ত্রী অবশ্য কোনও সেলেব ছিলেন না। এর পরে মধুবালার সঙ্গে প্রেম চলাকালীনই মীনাকুমারীকে তাঁর পরের ছবিতে কাস্ট করেন আমরোহী। আর তখনই প্রেমেও পড়েন মীনার।

এদিকে মীনা ও মধু দু’জনেই তখন জানতেন না, আমরোহী তাঁদের দু’জনকেই নাচাচ্ছেন। দুই কোমল মনের নায়িকাই পিতৃসম আমরোহীকে মন দিয়ে বসেছিলেন।

মীনা কুমারীর গাড়ি দুর্ঘটনা হলে আহত মীনার খারাপ দিনে তাঁর পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়ান আমরোহী। সেখান থেকেই মীনা আরওই প্রেমে পড়ে যান ফাদার ফিগারসম আমরোহীর। এর পরে মধুবালার সঙ্গে সম্পর্কে রেখেই আমরোহী মীনাকে বিয়ে করেন। আমরোহী প্রথম স্ত্রীকেও ডিভোর্স দিয়েছিলেন কিনা তা নিয়ে দ্বিমত আছে। একরকম লুকিয়ে বিয়ে হয়ে যায় আমরোহী-মীনার। যখন আমরোহীর আগের পক্ষের তিনটি সন্তান ছিল। সব জেনেও মাত্র আঠারো বছর বয়সের মীনা দেহমন সঁপে দিলেন আমরোহীকে।তবে বহুদিন গোপন ছিল মীনা ও আমরোহীর বিয়ে।

এদিকে মধুবালাও তখন আকুল আমরোহীর জন্য। তিনি দেখা করতে চাইতেন আমরোহীর সঙ্গে এবং চাইতেন আমরোহীর স্ত্রী হিসেবে বৈধ স্বীকৃতি। শেষমেশ কামাল আমরোহী মধুবালাকে বলে দেন, মীনাকুমারীর সঙ্গেই মধুবালাকে মানিয়ে নিয়ে থাকতে হবে। এ কথা শুনে অবসাদে ডুবে যান মধুবালা।

তবে অবসাদ থেকে ঘুরেও দাঁড়ান মধুবালা। তিনি তাঁর উপার্জনের সঞ্চিত ন’লক্ষ টাকা রীতিমতো ‘অফার’ করেন কামাল আমরোহীকে, যাতে তিনি মীনাকুমারীকে ডিভোর্স দিয়ে মধুবালাকেই বিয়ে করে স্ত্রীর সম্মান দেন। ওদিকে কামাল ও মধুবালার সম্পর্কের কথা মীনাকুমারীও জেনে যান। তিনি ডিভোর্স দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। কারণ মীনা নিজেও কামালকে ডিভোর্স দিয়েই পেয়েছিলেন।

এর পরে মধুবালা আর চাননি কামাল আমরোহীকে। কারণ এর পরেও তিনি সম্পর্কে থাকলে তাঁকে রক্ষিতা হয়ে থাকতে হতো। কারণ তাঁদের সম্পর্ককে কোনও দিনই বিয়ের স্বীকৃতি দিতে পারতেন না আমরোহী।

কামাল আমরোহী পরিচালক হিসেবে কতটা ভাল ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বহু কঠিন গানের শট সিঙ্গেল টেকে নিয়ে ছবি হিট করার ক্ষমতা রাখতেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে কামাল আমরোহী ছিলেন বহুগামী ও নায়িকাদের টাকায় চলা ব্যক্তি। কারণ মীনার টাকাতেই তিনি ছবি প্রোডিউজ থেকে সব খরচা চালাতেন।

নিজে এমন হলেও, আমরোহী স্ত্রী মীনাকে নানা বিষয়ে সন্দেহ করতেন। মীনার উপর তিনি আদেশ জারি করেন, মীনার মেক আপ রুমে মেকআপ ম্যান বাদে কোন পুরুষ যেন না প্রবেশ করে এবং সন্ধ্যে সাড়ে ছটার মধ্যেই রোজ যেন মীনা বাড়ি ফেরেন। প্রথম দিকে এসব শর্ত মীনা মেনে নিলেও পরে আর পেরে ওঠেন না। মীনার জীবনে পরে অনেক ভালবাসা এলেও শেষ জীবন অবধি কামাল আমরোহী তাঁকে শোষন করে গেছেন, ডিভোর্সও দেননি।

আবার অসুস্থ মধুবালার শেষ সময়েও কামাল আমরোহীকে একবারের জন্যও দেখা যায়নি। মধুবালার বোন অবশ্য পরবর্তী কালে মধুর আমরোহীকে ন’লাখ টাকা অফার করার কাহিনি রটনা বলে উড়িয়ে দেন। তিনি দাবি করেন, ‘মধু আমাদের সংসারে একা রোজগেরে মেয়ে ছিল, ও কোথা থেকে অফার করবে এত টাকা?’