মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ নিয়ে সমীক্ষার দাবিতে সায় শীর্ষ আদালতেরও

Written by SNS December 15, 2023 4:28 pm

মথুরা, ১৫ ডিসেম্বর – উত্তরপ্রদেশের মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ নিয়ে সমীক্ষার দাবিতে সায় দিল এবার সুপ্রিম কোর্টও। বৃহস্পতিবারই ওই দাবিতে সায় দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। শুক্রবার শীর্ষ আদালত এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে। হিন্দু পক্ষের আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন, বিষ্ণুশঙ্কর জৈন, প্রভাস পাণ্ডে এবং দেবকী নন্দন মথুরার শাহি ঈদগাহকে  ‘শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি’ বলে চিহ্নিত করে সেখানে জমি মাপজোক এবং বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার দাবি তুলেছিলেন। যার বিরোধিতা করেছিল মুসলিম পক্ষ।  আদালতে দাবি করা হয়েছিল, মসজিদের ১৩ একর জমিই শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি। সেখানেই ছিল মূল মন্দির। 

শুনানি শেষের পর গত ১৬ নভেম্বর রায় সংরক্ষিত রেখেছিল বিচারপতি মায়াঙ্ক কুমারের নেতৃত্বাধীন এলাহাবাদ হাই কোর্টের বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার সেই রায় ঘোষিত হয়। বিচারপতি মায়াঙ্ক নির্দেশ দেন, এক জন কোর্ট কমিশনারের পর্যবেক্ষণে সমীক্ষার কাজ করতে হবে শাহি ইদগাহের বিতর্কিত ১৩.৩৭ একর জমিতে। কোর্ট কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত শুনানি হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর।

গত ২৯ অগস্ট হিন্দু পক্ষের আবেদন মেনে এলাহাবাদ হাই কোর্ট মথুরার শাহি ইদগাহ মসজিদে ভিডিয়ো সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি পীযূষ অগ্রবাল সেই সমীক্ষা তত্ত্বাবধানের জন্য এক আইনজীবীকে কোর্ট কমিশনার এবং দু’জনকে সহকারী কোর্ট কমিশনার নিযুক্ত করেছিলেন। আগামী চার মাসের মধ্যে সমীক্ষার রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু উচ্চতর বেঞ্চ তাতে স্থগিতাদেশ দেয়।
 
মথুরার প্রাচীন কাটরা স্তূপ এলাকায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান কমপ্লেক্সের পাশেই শাহি ইদগাহ মসজিদ। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ইদগাহের ওই জমিতে কৃষ্ণের জন্মস্থানে ছিল প্রাচীন কেশবদাস মন্দির। কাশীর ‘আসল বিশ্বনাথ মন্দিরের’ মতোই মথুরার মন্দিরটিও ধ্বংস করেছিলেন মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব। অভিযোগ, অওরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৬৯ থেকে ১৬৭০ সালে তৈরি করা হয়েছিল মসজিদটি। কাটরা কেশবদাস মন্দিরের ১৩.৩৭ একর জমিতে। সেই জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদের জেরেই সমীক্ষার নির্দেশ।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের মতো মথুরা শাহি ইদগাহেও রয়েছে ‘হিন্দুত্বের প্রমাণ’। সেগুলির সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফির দাবি ঘিরে একটি মামলা ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারাধীন। সেই মামলায় রায় ঘোষণার আগেই ইদগাহ থেকে ‘হিন্দুত্বের প্রমাণ’ নষ্ট করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে পুরো চত্বরটি সিল করার দাবিতে এর পর নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল মথুরা আদালতে।
তার আগে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অধীনে সেখানে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল মথুরা আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশকে ১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনাস্থল আইনে চ্যালেঞ্জ জানানো হয় এলাহাবাদ হাই কোর্টে। ১৯৯১ সালের ওই আইনে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্টের পর দেশে যে ধর্মীয় স্থান যে অবস্থায় ছিল, সে ভাবেই তা থাকবে। কিন্তু মুসলিম পক্ষের সেই যুক্তিতে সায় দিল না এলাহাবাদ হাই কোর্ট।

উল্লেখ্য, বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়েও একই ধরনের সমীক্ষা গত বছর শেষ হয়েছে। সেই সমীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে সেখানে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের কাজ করছে এএসআই। চলতি মাসের শেষে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার কথা। 

মুসলিম পক্ষ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়ে বলে ১৯৯১ সালের প্রোটেকশন অফ প্লেসেস অফ ওরশিপ আইন অনুযায়ী কোনও ধর্মীয় স্থানের কাঠামো, রূপ বদল করা যাবে না। ১৯৪৭ এর ১৫ অগাস্ট যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই রাখতে হবে। হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বলে, কাঠামো বদলের অনুমতি আদালত দিচ্ছে না। তবে ওই আসনে ইতিহাস পুনরুদ্ধারে বাধা নেই। হিন্দু পক্ষের দাবি সত্যি কিনা তা খতিয়ে দেখা যেতেই পারে। অনেকেই আদালতের রায়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন, হিন্দু পক্ষের দাবি সত্য প্রমাণিত হলে তখন মসজিদ ভেঙে মন্দির করার দাবি ওঠা অসম্ভব নয়।