ঘরের কাছেই মৌসুনি দ্বীপ, চোখের সামনে বিস্তীর্ণ বঙ্গোপসাগর

একদিন ছুটিতেই ঘুরে আসা যেতে পারে বঙ্গোপসাগরের কাছে মৌসুনি দ্বীপ।

Written by SNS March 15, 2019 9:45 am

মৌসুনি

হই – হুল্লোড় ছেড়ে একটু নির্জনে যদি ঘুরে আসতে চান, তাহলে মৌসুনি দ্বীপে পৌঁছে যেতে পারেন । একদিন ছুটি করলেই চুটির আমেজ উপভোগ করতে পারবেন। এক অচেনা বঙ্গোপসাগরকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে যাবেন। পর্যটকদের তেমন ভীড় চোখে পড়বে না। সাগর পারের এই দ্বীপ অঞ্চলকে ঘিরে এখনো সেভাবে উৎসাহ তৈরি হ্যনি।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত মৌসুনি। এই দ্বীপের কাছাকাছি বালিয়াড়া বিচ। জন কোলাহলের বাইরে এখানে থাকবে ভিন্ন এক অনুভূতি । পশ্চিমবঙ্গের শেষতম বিন্দু জম্মুদ্বীপকে বালিয়াড়া থেকে দেখতে পাওয়া যায়। পাশে দেখা যাবে সাগর দ্বীপকে।

স্থানীয় বাড়ির মহিলারা মাছ ধরতে আসে জাল নিয়ে। সমুদ্র ওদের খোরাক জোগায়। রুটি-রুজির খোঁজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও লড়াই করে। শহুরে মানুষ মহিলাদের মাছ ধরা দেখে অবাক ই হবে। সমুদ্রতট ধরে হাঁটাহাঁটি করে যতদূর ইচ্ছে চলে যেতে পারেন। ভিড়ে ঠাসা হয়ে নাস্তানাবুদ হতে হবে না। বিচ ধরে বামদিকে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। মনোরম ম্যানগ্রোভের হাতছানিতে আপনার মনে হবে -পৌঁছে গেলাম কোনও এক অচেনা-অজানার দেশে। চোখে পড়বে সমুদ্র তট জুড়ে লাল কাঁকড়ার ভিড়। ছুটোছুটির এক ভিন্ন খেলা দেখে আনন্দ পাবেন। নানা পাখির কলরব শোনা যাবে এখানে। পাখি -প্রেমিকদের কাছে মৌসুনি দ্বীপ গ্রহ্ণযোগ্য হতে পারে।

এখান কার সমুদ্র তটে সন্ধ্যে নামার মুহূর্তটি বড় উপভোগ্য।রঙ্গিন সূর্যটা আস্তে আস্তে ডুবে যায়। সমুদ্রে রং ছড়ায়।অসীম অনন্ত জলরাশিতে ডুবে যায় সূর্য। জ্যোৎস্না রাতে চাঁদ উঠলে শোভা বাড়ে সমুদ্রের। চাঁদের প্রতিফলন পড়ে সমুদ্রের জলে।সমুদ্রে ঢেউয়ের গর্জনে আপনার রোজকার চেনা -জানা জগত হারিয়ে যাবে। ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত মনের সব গ্লানি মুছে যাবে। আবার জ্যোৎস্নাহীন রাতে তারায় তারায় ভরে উঠে আকাশ। অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে ওঠে সমুদ্র-আকাশের মেলবন্ধনে। সমুদ্রের ধারে এক রাত কাটালেই ঘরে ফেরার কথা মনে উঠলেই মন কেমন করবে, এটা নিশ্চিত।

নারকেল গাছ থেকে এখানে ডাবের জলের স্বাদ পেতে পারবেন। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার সময় মেনুতে পাবেন স্থানীয় পুকুর থেকে ধরা টাটকা মাছের স্বাদ। পর্যটকদের খাবার-দাবার রান্না করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় পরিবারের মহিলাদের খুঁজে পাবেন। ঘরোয়া ভাবে করা এই রান্নায় তৃপ্তি পাবেন। একদল কচি-কাঁচার ভিড়ও পাবেন। কৌতূহলী চোখগুলি শহুরে মানুষ দেখলে অবাক হয়। গ্রামের বয়স্ক মানুষগুলোর দেখা মেলে। এই মৌসুনির অনেক ক্তহা-কাহিনি তাঁরা জানে। দ্বীপটির ইতিহাস জানতে একটু ঘা দিয়ে দেখতে পারেন। অনেক অজানা-অচেনা কথা ওঁদের মুখে শুনতে পাবেন।

উষ্ণায়নের প্রভাবও এই দ্বীপে পড়েছে। চাষবাসের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও হচ্ছে। গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করে গ্রামীণ সহজসরল মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বার্তা বলতে পারেন। সরলতা মেশানো মানুষগুলোর সঙ্গে বলে মন ভরে উঠবে।সমুদ্রে মাছ ধরতে আসা মানুষগুলোর বাড়িতে যেতে দ্বিধা করবেন না। এই মানুষগুলো কিভাবে রুটি -রুজির স্বার্থে তীব্র লড়াই করছে, তা আন্দাজ করতে পারবেন।

গ্নতব্যস্থলে পৌঁছতে শিয়ালদহ (দক্ষিণ) থেকে নামখানা লোকাল ধরুন । নামখানা স্টেশনে নেমে সেখান থেকে মোটর ভ্যান যোগে এসে হাতানিয়া – দোয়ানিয়া নদী পার হয়ে সেখান থেকে টোটো যোগে দুর্গাপুর ঘাট পৌঁছে আবার নৌকো করে বাগডাঙ্গা ঘাটে পৌঁছে যান। এই ঘাটই মৌসুনি দ্বীপের প্রবেশ পথ । বাগডাঙ্গা ঘাট থেকে টোটো বা মোটর ভ্যানে করে পৌঁছে যান সমুদ্রতটে। দেখবেন বিস্তীর্ণ বঙ্গোপ্সাগর চোখের সামনে।