কেজরিওয়াল গ্রেফতার হলে স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, জল্পনা আপের অন্দরে 

Written by SNS November 8, 2023 6:41 pm

দিল্লি, ৮ নভেম্বর –   আবগারি দুর্নীতি মামলায়  দিল্লিতে আম আদমি পার্টির উপর শঙ্কার কালো মেঘ। দলের দুই সদস্য মণীশ সিসোদিয়া ও সঞ্জয় সিং জেলবন্দী। এবার আশঙ্কা করা হচ্ছে যেকোনও সময়ে গ্রেফতার হতে পারেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হলে, তাঁর স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে,  এমন জল্পনা  শোনা যাচ্ছে দলের অন্দরে।  রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আসনের দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে।

এই অবস্থায় আপের অন্দর থেকেই খবর শোনা যাচ্ছে, কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হলে তাঁর স্ত্রী সুনিতা কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। প্রসঙ্গত, কেজরিওয়াল ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই ভারতীয় রাজস্ব সার্ভিসের প্রাক্তন অফিসার। একসময়ে তাঁরা সহকর্মী ছিলেন। ২০১০ সালে কেজরিওয়াল চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন। সুনীতা ২০১৬ সালে স্বেচ্ছা অবসর নেন। সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও দলের বিভিন্ন কাজের যুক্ত থাকেন তিনি।  

জানা গিয়েছে, আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ মনে করছে আজকালের মধ্যেই আবগারি দুর্নীতি মামলায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । এই পরিস্থিতিতে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এনিয়ে পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত আপের বিধায়ক, সাংসদ ও দিল্লি পুর নিগমের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈঠকে ঠিক করা হয়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হলে তাঁর পদত্যাগ নাকি জেলে বসেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনতার কাছ থেকে নেওয়া হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে হলে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে উপরাজ্যপালের অনুমতি নিতে হবে। উপ-রাজ্যপালের বকলমে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই অনুমতির ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হলে জেল থেকে কেজরিওয়ালের পক্ষে সরকার পরিচালনা করা সম্ভব নয় ।
 
উল্লেখ্য, পশু খাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব গ্রেফতারের আগে তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করে দেন। রাবড়ি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরদিন পাটনার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লালু। তাঁর পরামর্শেই নতুন মন্ত্রিসভায় মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ির হাতেই ছিল কারা দফতর। এবার লালুর পথে হেঁটেই স্ত্রীকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী করতে পারেন কেজরিওয়াল।  আবগারি কাণ্ডে উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া জেলে। আগামী তিন মাসের আগে তাঁর জামিন পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের গত সপ্তাহের রায়ে। একই কেলেঙ্কারিতে জেলে আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং। পরিস্থিতি এমন যে মন্ত্রী অতীশিকে একাই এগারোটি দফতর সামলাতে হচ্ছে। কারণ, কেজরিওয়াল, মণীশের পর দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং প্রশাসন চালানোর মতো নেতা বিশেষ নেই। একই আবগারি  কাণ্ডে কেজরিওয়ালকে গত সপ্তাহে তলব করে ইডি। 

 

সম্প্রতি একটি মামলা সূত্রে দিল্লির আদালতে হাজির হয়েছিলেন সুনিতা। সঙ্গে ছিলেন কেজরিওয়াল। বিজেপি সুনিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশ, দুই রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম আছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর। এই ব্যাপারে বয়ান নিতে সুনিতাকে তলব করেছিলেন নিম্ন আদালতের বিচারক। 

আপের অন্দরে জল্পনা আছে গ্রেফতার করা হলে লালুপ্রসাদের মতো কেজরিওয়ালও স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসাতে পারেন। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালুপ্রসাদ যাদব গ্রেফতার হওয়ার আগে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী করে দেন। তার আগে নানাভাবে লালুও গ্রেফতারি আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সিবিআইয়ের তৎকালীন যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাস এমন চার্জশিট জমা করেছিলেন যে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়। কয়েকদিন পরই সবাইকে চমকে দিয়ে স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে  বসেন। 

শিক্ষাদীক্ষা এবং সামাজিক অবস্থানে রাবড়ি দেবীর সঙ্গে তুলনাই চলে না কেজরিওয়াল পত্নী সুনিতার। প্রাক্তন আমলার পক্ষে দিল্লির মতো ছোট রাজ্যের সরকার চালানো কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ফলে আপের অন্দরে জোর জল্পনা চলছে গ্রেফতারি এড়াতে না পারলে কেজরিওয়ালও হাঁটতে পারেন লালুপ্রসাদের রাস্তায়।