• facebook
  • twitter
Saturday, 20 December, 2025

তিন বছরে তিন পরীক্ষা, ফিরে এল টোলের সংস্কৃত ধারা

পদ্মশ্রী ড. রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ড. গোপাল মিত্র, আচার্য ধ্যানেশ নারায়ণ চক্রবর্তী ও পণ্ডিত নিত্যানন্দ স্মৃতিতীর্থ প্রমুখ এই উদ্যোগের পথপ্রদর্শক ছিলেন।

নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘদিন স্তব্ধ হয়ে থাকা বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃত টোল পরীক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে প্রাণ ফেরানোর এক নীরব কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ নজর কেড়েছে শিক্ষাবিদ মহলে। শ্রী শ্রী ওঙ্কারনাথদেব বৈদিক বিদ্যাপীঠের উদ্যোগে টানা তৃতীয় বর্ষের মতো সফলভাবে অনুষ্ঠিত হল টোলের সংস্কৃত পরীক্ষা।

প্রাচীন শিক্ষাধারাকে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে ফিরিয়ে আনার এই প্রচেষ্টাকে অনেকেই সংস্কৃত শিক্ষার পুনর্জাগরণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছেন। ২০ ও ২১ ডিসেম্বর মহামিলন মঠে আয়োজিত এই পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন টোল, চতুষ্পাঠী, স্কুল ও কলেজ থেকে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেন বলে জানান ড. সুরেশ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন ভাইস প্রিন্সিপাল, শ্রী সীতারাম বৈদিক আদর্শ সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন পরে আবার টোল পরীক্ষার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ তৈরি হওয়া অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।”

Advertisement

বিদ্যাপীঠের কর্তৃপক্ষ সেক্রেটারি ও ডিরেক্টর ড. শোভন কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথদেবের আদর্শবাণী— “ভূতলে সংস্কৃত ভাষার হউক প্রচার”—কে সামনে রেখেই এই উদ্যোগ। শুধু সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের পাঠ নয়, এখানকার বৈদিক গুরুকুলে ইতিমধ্যেই ঋগ্, যজুঃ, সাম ও অথর্ব—চার বেদের পঠনপাঠন শুরু হয়েছে।

Advertisement

এই পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি হয়েছিল অখিল ভারত জয়গুরু সম্প্রদায়ের তৎকালীন সর্বাধীশ কিংকর মহিমানন্দ-সহ একাধিক বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদের হাত ধরে। পদ্মশ্রী ড. রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ড. গোপাল মিত্র, আচার্য ধ্যানেশ নারায়ণ চক্রবর্তী ও পণ্ডিত নিত্যানন্দ স্মৃতিতীর্থ প্রমুখ এই উদ্যোগের পথপ্রদর্শক ছিলেন। বর্তমানে সম্প্রদায়ের সর্বাধীশ কিংকর বিট্ঠল রামানুজের অনুপ্রেরণায় এবং বিদ্যাপীঠের সেক্রেটারি ও ডিরেক্টর ড. শোভন কুমার ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এই প্রয়াস আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় বেদ, ব্যাকরণ ও সংস্কৃত সাহিত্য-সহ মোট আটটি বিষয়ে মূল্যায়ন হয়। দূরদূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের জন্য আহার ও আবাসনের সুব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

পরীক্ষা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অধ্যাপক অর্ঘ্য চক্রবর্তী, জন্মেজয় আচার্য, অভিনন্দন রেজ, রমেন সিংহরায়, ড. চন্দ্রাবলী গোস্বামী ও ড. গঙ্গারাণী সাহু।শিক্ষাবিদদের মতে, প্রাচীন জ্ঞানপরম্পরা ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে এই ধরনের উদ্যোগই পারে সংস্কৃত ভাষা ও শিক্ষাকে আগামী প্রজন্মের কাছে নতুন করে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে।

Advertisement