বিশ্বজিৎ সরকার
উদাসী সম্প্রদায়ভুক্ত শিখপন্থ সম্বলহীন “সন্ত লালবাবা” সুদূর পাঞ্জাব থেকে বেলুড় গঙ্গা তীরে আশ্রয় নিয়েছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে।দিনরাত সাধন ভজন ও অধ্যাত্ম চর্চায় নিমগ্ন থেকে অর্জন করেছিলেন বিশেষ ঐশ্বরিক ক্ষমতা। বিংশ শতকের তৃতীয় চতুর্থ দশকে তাঁর আলোকসামান্য দ্যুতিতে আকৃষ্ট হয় বেলুড় বালি অঞ্চলের সাধারন মানুষ থেকে এলাকার অনেক শিল্পপতি। মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গঠিত হয় লালবাবা ট্রাস্ট। দীন দুঃখীদের পাশে থাকা, অনাথালয়, সাধুনিবাস থেকে শুরু করে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার মত মহতী কাজে নিযুক্ত ছিল এই ট্রাস্ট। প্রথম দিকে যে কাজ দীন দুঃখীর সেবা ও আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলের মধ্যে সীমায়িত ছিল পরবর্ত্তী ক্ষেত্রে তা শিক্ষাবিস্তারে রূপ নেয়। ভারতবর্ষের নানা প্রান্ত থেকে আগত মানুষের সমাগমে সম্পৃক্ত এই জনপদ, যাদের অধিকাংশই শ্রমিক ও চটকল মজুর।
এই সমস্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার কথা ভেবে ট্রাস্ট গঠন করে কলেজ –লালাবাবা কলেজ। ১৯৬৪ সালে শুরু হয় কলেজ, প্রথম দিকের দিনগুলি খুব একটা মসৃণ ছিল না কিন্তু ধীরে ধীরে সুদীর্ঘ ষাট বছরে লালবাবা কলেজ আজ নানান কারণেই সংবাদ -আলোচনার বিষয়। অনেক চড়াই-উতরাই পথ অতিক্রম করে লালবাবা কলেজ আজ পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কলেজে পরিণত। ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৩২০০ অধ্যাপক ৬০। পশ্চিমবঙ্গের এমন উদাহরণ বেশি নেই যেখানে বাংলা, ইংরাজি, সংস্কৃত, হিন্দি এবং সংস্কৃত এই পাঁচ ভাষার অনার্সের পঠন পাঠনের ব্যবস্থা আছে। আজকাল শোনা যায় অধ্যাপনাকে অনেকেই কেবল ১০টা ৫টার ডিউটি এবং নুন্যতম ৫ ঘণ্টা ডিউটির কর্মশালা হিসেবে গন্য করেন। এখানে ব্যতিক্রমী অধ্যাপককূল।
অধ্যাপক দেবাশিষ লাহিড়ী এবং প্রদীপ্ত বাগচীর নাম না করলেই নয়। যারা জীবন-জীবিকার গণ্ডী অতিক্রম করে বহুমুখী সারস্বত সাধনায় শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ব্যতিক্রমী প্রিন্সিপাল ড. সঞ্জয় কুমার। এই কলেজে আসার পর থেকেই (২০১৬) কিভাবে কলেজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটাই তাঁর ধ্যান জ্ঞান।লালবাবা কলেজ শুধুমাত্র পঠন পাঠন ভিত্তিক কলেজ নয়, এই কলেজের মধ্যেই ছাত্রদের উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ইউনিট। “শিক্ষার্থরা পড়াশোনার সাথে সাথে সবাধীন চিন্তা করতে শিখুক, নিজেকে জানুক” এই ভাবনা প্রিন্সিপ্যাল প্রতিনিয়ত প্রাণিত করে চলেছেন ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে।কলেজের মধ্য গঠিত হয়েছে বিভিন্ন ক্লাব যেমন সঙ্গীত ক্লাব, পরিবেশ ক্লাব, নাটক ক্লাব, খেলার ক্লাব ইত্যাদি, যেগুলি নিয়ত চর্চায় রত।
ছাত্ররা শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবে না এই ভাবনাকে আরো বেগবান করতে কলেজ প্রাঙ্গনে বসছে লিটল ম্যাগাজিন মেলা। বালী লিটল ম্যাগাজিন সমনবয় গোষ্ঠীর উদ্যোগের এই লিটল ম্যগাজিন মেলার মূল আয়োজক এবার লালবাবা কলেজ। এই মেলায় ছাত্র ছাত্রী এবং অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের অংশগ্রহন যেমন থাকছে তেমনি থাকছে সাংস্কৃতিক জগতের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি। যাঁরা তাঁদের জীবনা ভাবনা এবং সৃষ্টি তুলে ধরবেন ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে। আগামী ২৬-২৮ এপ্রিল বিকাল ৩টে থেকে ৭টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। তবে শুধু কলেজের ছাত্র নয় এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের জন্য থাকছে কিছু ভিন্ন ধর্মী অনুষ্ঠান যেখানে ছাত্র ছাত্রীরা পাবেন মৌলিক ভাবনা ও মত প্রকাশের মত প্ল্যাটফর্ম।