ডা. শামসুল হক
পরিবেশের মধ্যে সদা দৃশ্যমান বস্তু সামগ্ৰীর উপর ধ্যান ধারণার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করা এবং তা থেকে সঞ্চিত উপলব্ধির উপর নির্ভর করেই শুরু হতে পারে একজন শিশুর পরিবেশগত চেতনা শক্তির বোধ জাগ্রত করে তোলার পদ্ধতিও। আর এই ব্যাপারে বেছে নেওয়া যেতে পারে আমাদেরই এই নির্মল প্রকৃতির মাঝখানে দৃশ্যমান সবুজ বনস্পতসহ অন্যান্য সব প্রাকৃতিক সম্পদকেই। বলাবাহুল্য, সেইসব সম্পদ শিশুমনে নির্ভেজাল অনুভূতির জন্ম দিতে পারে বলেই শিশুদের ক্ষেত্রে পরিবেশবিদরাও উপদেশ দেন এই ধরণের মাধ্যমকেই বেছে নেওয়ার জন্য।
প্রতিটি শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানোর তাগিদে যদি এই ধরণের কাজ নিয়মিতভাবেই চালানো সম্ভব হয় তাহলে তাদের মনে নতুনত্বের ছোঁয়া লাগবেই লাগবে। শুধু তাই নয়, শিশু মনে জন্ম নেবে নতুন নতুন অনেক কৌতুহলেরও। আর তাদের সহজ ও সরল অনুভূতিই তখন তাদের মনের মধ্যে নিশ্চিতভাবে সঞ্চিত করবে অনেক জ্ঞানেরও। সুতরাং সেইসময় কাছাকাছি পরিবেশের মধ্য থেকেই নিত্যনতুন উপাদান সংগ্রহ করা এবং সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই তাদের নরম মনের অন্দরে শিক্ষনীয় নতুন নতুন অনেক উপকরণ হাজির করাই হল অবিভাবকদের একমাত্র কর্তব্য। আর সেই কাজ যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় তাহলে একজন শিশুর দৈনন্দিন কৌতুহলের সীমারেখা যেমন বিস্তারিত হওয়ার সুযোগ পাবে, ঠিক তেমনই একদিন না একদিন অপরের কোনরকম সহায়তা ছাড়াই সে নিজে নিজেই নিজের মনের মধ্যে গেঁথে নিতে পারবে সব ছবি এবং তারপর নিজে থেকে সে বুঝে নিতেও শিখবে নিজের ভালোমন্দের বিষয়গুলোও।
সময় এগিয়ে চলে তার নিজের নিয়মেই। আর শিশুদের দুরন্ত দুরন্ত মনটাও ছুটে চলে সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখেই। দিন যত এগিয়ে চলবে চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটবে আপনার সোনামণিরও। তারপর একসময় সে নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যাবে তার নিজস্ব জ্ঞানের শীর্ষস্থানেও এবং তখন নিজের ভালো এবং মন্দের ব্যাপারটা উপলব্ধি করার ক্ষমতাও সে অর্জন করে নিতে পারবে নিজে নিজেই।
অবশ্য সেইসময় আপনার শিশুর দৈনন্দিন জীবনের পদক্ষেপ ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা সেই বিষয়েও কড়া নজর রাখতে হবে আপনাকেই। খেয়াল রাখতে হবে, তাদের সেইসময়ের ভাবাবেগ, প্রতিদিনের চালচলন, সব ধরণের কাজকর্ম ইত্যাদি বিষয়গুলোও। সবকিছুই সম্পন্ন হবে বাড়ির ঘনিষ্ঠজনদের নজরদারির মধ্যে এবং অতি অবশ্যই তাদের দৃষ্টির অলক্ষ্যেই।
সেইসময় একটা বিষয় অতি অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন যে, তাদের সব ধরণের কাজকর্মের মধ্যে অতি অবশ্যই স্বাধীনতার ছোঁয়া থাকবে। কিন্তু তার মধ্যে থাকবে সঠিক নিরীক্ষণ পর্বও। তখন কেউ ভুল করলে অযথা শাসন নয় সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে কোনটা ভুল এবং কোনটা সঠিক। এই কাজের পাশাপাশি করতে হবে আরও একটা কাজ। কাজের মধ্যেই তাদের পরিবেশ চেতনা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটিও মনের মধ্যে যাতে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয় খেয়াল রাখতে হবে সেইদিকেও ।
দৈনন্দিন পঠনপাঠন, খেলাধুলা, কাজ ইত্যাদির মাঝে তাদের মানসিক শক্তিটুকুও যাতে বৃদ্ধি পায় তীক্ষ্ম নজর রাখতে হবে সেই দিকেও। আর সেটাও কিন্তু তৈরি হবে কাছাকাছি থাকা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করেই। সুতরাং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাফল্যের কথা চিন্তা করেই আমাদের ঘর এবং বাহির উভয় স্থানের পরিবেশ সবসময়ই যাতে উৎকৃষ্ট মানের হয় এবং তার মধ্যে যেন কোন ধরণের গোঁড়ামি অথবা রাজনীতির ছোঁয়া না থাকে খেয়াল রাখতে হবে সেইদিকেও ।
তারপরই আসবে আপনার শিশুকে শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করানোর প্রথম পদক্ষেপ। অতএব তাদের সেই পর্ব শুরুর আগেই তার মনের মধ্যে যদি আনা সম্ভব হয় এই পরিবেশ চেতনারই মূলমন্ত্র , তাহলে তার নিজস্ব চলার পথে সে যে কখনই হোঁচট খাবে না সেই বিষয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যাবে একশো শতাংশই।