জবাব তলব নির্বাচন কমিশনের
দিল্লি, ২৫ এপ্রিল— আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে৷ তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বিভিন্ন দল৷ এই বিষয়ে বিজেপি-র কাছে জবাব চেয়েছে নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই প্রথম পদক্ষেপ করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন৷ এদিকে রাহুলের বক্তৃতা নিয়েও কমিশনে গিয়েছিল বিজেপি৷ তাই পাল্টা কংগ্রেসের কাছেও জবাব চাওয়া হয়েছে৷ আগামী ২৯ এপ্রিল, সকাল ১১টার মধ্যে দুই নেতাকে তাঁদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে৷
লোকসভা ভোট যত এগোচ্ছে, ততই সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতির ময়দান৷ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে একে ওপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন৷ শাসক-বিরোধী দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ গত ২১ এপ্রিল, রাজস্থানের বাঁসওয়াড়ায় প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসের ইস্তাহারকে নিশানা করে এমন কিছু মন্তব্য করেন, যা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতি৷ অন্যদিকে কংগ্রেসের কাছ থেকেও জবাব তলব করেছে নির্বাচন কমিশন৷ দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং ওয়েনাড়ে প্রার্থী রাহুল গান্ধির মন্তব্য নিয়ে বিজেপি কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায়৷ মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে বিজেপি, কংগ্রেস- দুই দলকেই নোটিস পাঠানো হয়৷ বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা ও কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কাছ থেকে তাদের দলের নেতাদের ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জবাব চাওয়া হয়েছে৷
দুই পাতার বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারকা প্রচারকদের কাছ থেকে উচ্চ মানের বক্তৃতা আশা করা হয়, কিন্ত অনেক সময় নির্বাচনের উত্তাপে তাঁরাও নিম্ন স্তরে নেমে আসেন৷ দলগুলির প্রাথমিক দায়িত্ব তাদের প্রার্থীদের, বিশেষ করে তারকা প্রার্থীদের আচরণ স্থির করা৷ এক্ষেত্রে বিজেপির জেপি নাড্ডা ও কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে তাদের তারকা প্রচারকদের আচরণ ও মন্তব্যে রাশ টানতে বলা হয়েছে৷ এর আগে কংগ্রেসের সুপ্রিয়া শ্রীনাথ ও বিজেপির দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়েও দলকে সতর্ক করেছিল নির্বাচন কমিশন৷
উল্লেখ্য, মোদি এবং রাহুল- উভয়ের বিরুদ্ধেই ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল৷ গত রবিবার ভোটপ্রচারের জন্য রাজস্থানের বাঁসওয়াড়ায় একটি জনসমাবেশে যোগ দেন মোদি৷ সেখানে গিয়ে তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন, কংগ্রেস তার ইস্তাহারে দেশের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের৷ সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস৷ যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম এবং অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়৷’’ এরপরে সোমবার উত্তরপ্রদেশের আলিগডে় গিয়ে মোদি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে৷
ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে৷’ সম্প্রতি হায়দরাবাদে কংগ্রেস নেতা রাহুল মন্তব্য করেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কোন শ্রেণির হাতে কত সম্পদ আছে, তা সমীক্ষা করে দেখবে৷ সেই মন্তব্যের রেশ ধরেই বাঁসওয়াড়া এবং আলিগডে় ওই মন্তব্য করেন মোদি৷ সেই মন্তব্যের নিন্দা করে সরব হয় কংগ্রেস এবং বামেরা৷ কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পডে়৷
অন্যদিকে, রাহুলের বিরুদ্ধে ভাষা এবং অঞ্চলের ভিত্তিতে ঘৃণা ও বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপিও৷ বিজেপির অভিযোগ, দেশের দারিদ্র বৃদ্ধি নিয়ে রাহুল যে দাবি করে চলেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ রাহুলের বিরুদ্ধে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করার অভিযোগও তোলে গেরুয়া শিবির৷ মল্লিকার্জুন খাড়গেও আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি৷
লোকসভা ভোটের উত্তপ্ত আবহে মোদি এবং রাহুল— উভয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগই বিবেচনা করেছে কমিশন৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে চিঠি পাঠিয়ে জবাব তলব করা হয়েছে৷ আগামী ২৯ এপ্রিল সকাল ১১টার মধ্যে সেই জবাব দিতে হবে৷
