পুরস্কার কেন বন্ধ নয়?

করোনা পরিস্থিতিতে দেবীর মর্ত্যে আগমন। বাঙলির শ্রেষ্ঠ পুজো দুর্গাপূজা। সারা পৃথিবীতে যে যেখানেই আছে, পুজোর এই দিনগুলির জন্য সাগহে অপেক্ষা করে থাকেন।

Written by SNS Kolkata | October 14, 2020 5:59 pm

স্যানিটাইজ করা হচ্ছে পুজো মণ্ডপ। (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

আসন্ন দুর্গোৎসবে হই হুল্লোড়, মাত্রাতিরিক্ত ভিড় যাতে করােনা ভাইরাসের থাবা বসানাের আর সহায়ক না হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সপ্তাহ দুই আগেই সতর্ক করেছে। কারণ বাংলায় এখন পর্যন্ত সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষণ নেই। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। 

এই পরিস্থিতিতে দেবীর মর্ত্যে আগমন। বাঙলির শ্রেষ্ঠ পুজো দুর্গাপূজা। সারা পৃথিবীতে যে যেখানেই আছে, পুজোর এই দিনগুলির জন্য সাগহে অপেক্ষা করে থাকেন। পুজো কেমন কাটবে, কী করা হবে, কেমন পােশাকপরিচ্ছদ হবে, ইত্যাদি তার একটি পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই তারা করে থাকেন। 

এবার সেই পরিকল্পনার ছাপ ফেলেছে মারণ এই করােনা, যা মানুষকে সবসময়ই দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনার মধ্যে রেখেছে। হাজার হাজার করােনা আক্রান্ত মানুষ সারা রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা লড়ছেন– করােনার থাবা থেকে মুক্ত হয়ে স্বগৃহে ফিরতে। সুতরাং বড় দুঃসময়ের মধ্যে দেবী দুর্গা এসেছেন। বর্তমান অবস্থায় তাই পুজোর এবার আনন্দ, অন্যবারের মতাে করা যাবে না– করা যাবে না পুজো নিয়ে নানা পরিকল্পনার বাস্তবীকরণ। 

রাজ্য সরকার পুজোর আনন্দে যাতে ভাটা না পড়ে, তার জন্য পুজো উদ্যোগদের যেমন উৎসাহ দিয়েছে, তেমনই সাধারণ মানুষকেও পুজোর আনন্দ প্রাণ ভরে ভােগ করতে বলেছেন– যদিও মারণ করােনা প্রতিরােধের বিধিনিষেধ, যা এখন আরােপিত, তা পুঙক্ষানুপুঙক্ষ রূপে পালন করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ দুর্গোৎসবের আনন্দ যাতে মাটি হয়ে না যায় তার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছেন, ক্লাবগুলিকে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, পুরােহিতদের ভাতা চালু করেছেন। শহরের বড় বড় পুজোর উদ্যোক্তাদের কিছু নিয়মনীতি মেনে পুজোর আয়ােজন করতে বলেছেন– তার মধ্যে সবচাইতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ওপর। 

ঐতিহ্যশালী পুজো মণ্ডপের সামনে অন্যান্য বারের মতাে যাতে বাঁধনহারা দর্শনার্থীদের স্রোত বয়ে না যায়, তা অশ্যই রােধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পুজো উদ্যোক্তাদের। কারণ এই কাজে বিচ্যুতি ঘটলে, সংক্রমণ কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। আনন্দেও যেন নিয়মনাস্তি না হয়।

রাজ্য প্রশাসন এই মহামারির প্রেক্ষিতে রেড রােডে বিখ্যাত পুজোগুলির প্রতিমা নিয়ে যে বর্ণময়, দর্শনীয় এবং উজ্জ্বল শােভাযাত্রা বের হয়, তা বাতিল করেছে। ভালাে সিদ্ধান্ত। কারণ এই কার্নিভালে বহু মানুষের সমাগম হয়। এবার তা হলে দূরত্ব বিধি ঘুচে যাবে, যা করােনা সংক্রমণের বড় সহায়ক হবে।

কার্নিভাল বন্ধ হল, কিন্তু বড় পুজোগুলির মধ্যে নানা বিষয়বস্তু নিয়ে অন্যান্য বার যে প্রতিযােগিতা হয়, এবার তা কেন বন্ধ হল না? সকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে ঘােষণা করা হয়েছে, অন্য বারের মতাে এবারও শ্রেষ্ঠ প্রতিমা, শ্রেষ্ঠ মণ্ডপ সজ্জা, শ্রেষ্ঠ আলােকসজ্জা, শ্রেষ্ঠ পরিবেশ, শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনার জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে। বিচারকরা তা ঠিক করবেন। 

এবার একটি নতুন বিষয় অবশ্য যােগ হয়েছে– তা হল করােনা সংক্রমণ এড়াতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে নানা বিধিনিষেধের বাস্তবীকরণের রূপ। এই ক্যাটাগরিতে যদি পুরস্কার দেওয়া হয়, তা সমর্থনযােগ্য। কিন্তু অন্যান্য ক্যাটাগরি নিয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতিযােগিতা এবার বন্ধ রাখা হলেই, সরকার সুবিবেচনার পরিচয় দিত। তার কারণ এই প্রতিযােগিতাকে সরকার যেহেতু অনুমােদন করে পুরস্কার ঘােষণা করেছে, এইসব পুজোমণ্ডপে তা দেখার জন্য ভিড় উপচে পড়বে। পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীরা যত বেশি সংখ্যারই থাকুক না কেন, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। সংক্রমণ ছড়ানাের তা সহায়ক হবে কারণ দূরত্ববিধি রক্ষা বলে কিছু থাকবে না।

এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বজনীন পুজো এবার হােক কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে। পুজো যেহেতু বন্ধ করা যাবে না, তাই তা হােক, আড়ম্বরহীন। এই রাজ্যের কত মানুষের গৃহে শােকের আবহ, তাঁরা আপনজনকে হারিয়েছেন করােনা-কোপে, কত মানুষ দীর্ঘ লকডাউনে কাজ হরিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে চরম দারিদ্র, অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্য এখন অস্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানুষের দীর্ঘশ্বাস তুলেছে।