• facebook
  • twitter
Tuesday, 15 July, 2025

কে কাকে বলে

রাহুল গান্ধীকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলাতে কংগ্রেস মুখপাত্র বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, অতীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিদেশে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। এক্ষেত্রে তিনি মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন। শাসক দল বিজেপির সঙ্গে আপস করে চলেছে নির্বাচন কমিশন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যে বেজায় চটে গিয়েছে বিজেপি। এ কারণে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে তোপ দেগেছে বিজেপি।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আগেও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সহজ ব্যাপার হলো, মহারাষ্ট্রের মোট ভোটারের থেকে ভোট পড়েছে অনেক বেশি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিন বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট নাগাদ ভোটের হার জানিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে যে তথ্য দেয়, তাতে দেখা যায় মাত্র দু’ঘণ্টার ব্যবধানে ৬৫ লক্ষ মানুষ ভোট দিয়েছেন। এটা বাস্তবে অসম্ভব। একজন ভোটারের ভোট দিতে ন্যূনতম ৩ মিনিট সময় লাগে। ফলে ৬৫ লক্ষ ভোটারের ভোট দিতে কিছু না হলেও রাত দু’টো বেজে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।’
কমিশনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হলো, কমিশনের কাছে ভিডিওগ্রাফি চাওয়ার পর তা শুধু প্রত্যাখানই করা হয়নি, এমনভাবে আইন বদলে দেওয়া হলো যাতে ভিডিওগ্রাফি আর না চাওয়া যায়। এটা থেকেই স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশন শাসক দলের সঙ্গে আপস করে চলেছে। আসলে গোটা ব্যবস্থার মধ্যেই গলদ আছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজেপি-শিবসেনা-এনসিপি’র মহায়ুতি জোট পরাস্ত করেছিল কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (এসপি)-র মহাবিকাশ আঘাড়িকে। তখনই মহাবিকাশ আঘাড়ির তরফে ভোটে কারচুপির অভিযোগ করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনকেই অভিযুক্ত করা হয়েছিল ভোটের তারতম্য নিয়ে।
স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্য হজম হয়নি বিজেপি নেতাদের। ফলে রে রে করে তেড়ে উঠেছেন গেরুয়া বাহিনীর নেতারা। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বিরোধী দলনেতাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন যে, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকা নিয়ে ইডি’র তদন্তে ঘাবড়ে গিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন রাহুল গান্ধী। আসলে কথাগুলি হতাশারই প্রতিফলন। এসব বলে তদন্তের মোড় ঘোরাতে পারবেন না রাহুল। সম্বিত পাত্রের দাবি, কোনওভাবেই ইডি ছেড়ে কথা বলবে না। কারণ ইডি তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তদন্ত চালায়। আর ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা খোলাখুলি দুর্নীতির ব্যাপার। রাহুল গান্ধী ও তাঁর মা সোনিয়াকে জেলে যেতেই হবে।

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কংগ্রেসের বক্তব্য হলো, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার বিষয়ে ইডি-কে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছে কেন্দ্রের সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপির স্যোশাল মিডিয়ার দলবল কংগ্রেস নেতাদের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতেই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সারা দেশে সাংবাদিক সম্মেলন করে জবাব দেবে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধীও বলেছেন, যা বলেছেন তা সর্বৈব সত্য। আগেও প্রকাশ্যেই কংগ্রেস এসব নিয়ে অভিযোগ করেছে।

রাহুল গান্ধীকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলাতে কংগ্রেস মুখপাত্র বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, অতীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিদেশে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এমনকী বিরোধীদের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন। দেশের অভ্যন্তরে শাসক দলের সমালোচনা করলে ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশে গিয়ে ভারতের প্রকৃত চেহারাটা তুলে ধরলে বলা হবে ‘বিশ্বাসঘাতক’। এই বলার মধ্যেই বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের নগ্ন চেহারাটা প্রকাশ্যে উঠে আসে। আসলে স্বীকারোক্তি মেলে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে ইডি-সিবিআই প্রমুখ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে। যে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া হয় না, সে কথাও পরোক্ষে স্বীকার করে নেয় বিজেপি। সঠিক শব্দটি ব্যবহার করায় বিজেপির বুকে বড় লেগেছে।