বিশ্বভারতীর অবনমন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু সাধনার ফসল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আজ সমস্যায় জর্জরিত। রাজ্যের শাসক দলের কোপে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উন্নয়নমূলক কাজ।

Written by SNS Kolkata | March 21, 2021 4:08 pm

বিশ্বভারতী (Photo: Twitter | @SUNDARmyth)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু সাধনার ফসল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আজ সমস্যায় জর্জরিত। রাজ্যের শাসক দলের কোপে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উন্নয়নমূলক কাজ। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন শাসক দল আবার বিশ্বভারতীর কাজে মদত দিয়ে চলেছে। ফলে এমন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধ টানাটানিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্মই আজ শিকেয় উঠেছে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট অধ্যাপক বিদ্যুৎ চত্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি সম্প্রতি নাকি বলেছেন, তিনি চলে যাওয়ার আগে বিশ্বভারতী বন্ধ করে দিয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেছেন, এটা তার নেহাতই ভয় দেখানাে কথা নয়। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে ‘বিশ্বভারতীর প্রশাসনের কেউ কাজ করতে চায় না, কেবল পুরাে বেতন তোলাতেই তাদের উৎসাহ।’

অচল হয়ে রয়েছে সব কাজ কর্ম। কেন্দ্রীয় এই বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের অন্যান্য সরকারি অফিসের পর্যায়ে নেমে এসেছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। এখানে রাজ্যসরকারের হস্তক্ষেপের ফলে কর্মসংগঠনের পক্ষে এমন বিশ্ববন্দিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশটাই বিনষ্ট হয়েছে বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এখন চোর ডাকাতের আস্তানা হয়েছে বলে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন। বিস্তারিত খােলসা না করে উপাচার্য জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তিনি তিন এমন চোরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এর আগে কোনও উপাচার্যই এমন ব্যবস্থা গ্রহণে সাহস দেখাননি বলে তিনি জানিয়েছেন।

এজন্য তিনি বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মন্ডল’কে দায়ী করে বলেছেন, তিনি একজন বিকৃত মস্তিস্ক ব্যক্তি। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকেই ‘ভাল ছেলে’ বলে তারিফ করেছেন।

স্মরণ থাকতে পারে বর্তমান উপাচার্য রবীন্দ্রনাথকেই বহিরাগত আখ্যা দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। এরপর তিনি নােবেল প্রাপক ও শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা অমর্ত্য সেনকে বিশ্বভারতীর জমি জবরদখল করে রেখেছেন বলে অভিযােগ করেন। শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাসভবন প্রতীচি তার পিতা আশুতােষ সেন নির্মাণ করান এবং সংশ্লিষ্ট জমি বােলপুর পুরসভার অধীন। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতীচি নিয়ে সমালােচন এখনও চলছে।

কিন্তু সড়কের ওপর যে দোকান ঘর রয়েছে সেজন্য অমর্তবাবুকে দোষারােপ করা যায় মাত্র। এগুলি এখন গ্রাম ও শহরে দেখা যায়, কিন্তু বিশ্বভারতীর অধীনে রবীন্দ্রভবনেও এগুলি সমান তালে চলছে। শান্তিনিকেতন এলাকার বাসিন্দা বা আশ্রমিকরা বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ঘেরার জন্য পাঁচিল দেওয়ার তীব্র বিরােধিতা করেন। এই বিরােধিতা সাধারণ আন্দোলনের রূপ নেয়।

চলতি সপ্তাহে উপাচার্য আরও একটি বিতর্কের সৃষ্টি করেন দোলযাত্রার পক্ষকাল আগেই বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব পালনের ঘােষণা করে। এক্ষেত্রে তিনি করােনা সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ের আশঙ্কা এড়ানাের জন্যই নাকি এমন ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অনুষ্ঠান এগিয়ে নিয়ে এলেই কি সংক্রমণ এড়ানাে যাবে? উপাচার্যর জানা উচিত তার আমলেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির তালিকা থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাঁর এখন বিশ্বভারতীর পঠনপাঠনের মান উন্নয়নে ধ্যান দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল।