• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

একতরফা নিষেধাজ্ঞা খারিজ

যে সব সাংবাদিককে সরাসরি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা, রবি নায়ার, আবীর দাশগুপ্ত, অয়সকান্ত দাস এবং আয়ুস যোশী।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আদানি গ্রুপকে ঘিরে তৈরি বেশ কিছু কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিল কেন্দ্রের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। এই মন্ত্রকের সাম্প্রতিক নোটিশে বলা হয়েছে, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত মোট ১৩৮টি ভিডিও এবং ৮৩টি পোস্ট অবিলম্বে মুছে ফেলতে হবে। মন্ত্রকের এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে দিল্লির উত্তর-পশ্চিম জেলার একটি আদালতের একতরফা আদেশ। এই মামলাটি দায়ের করেছিল আদানি এন্টার প্রাইজেস, যেখানে বেশ কিছু সাংবাদিক ও সামাজিক কর্মীর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ আনা হয়।

যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কনটেন্ট মুছে ফেলতে বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে নিউজলন্ড্রি, দ্য ওয়্যার, সাংবাদিক রবীশ কুমার, অজিত অঞ্জুম, জনপ্রিয় ইউটিউবার ধ্রুব রাঠি, আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় (দেশভক্ত) এবং আরো অনেকে। নোটিসে চিহ্নিত হয়েছে দ্য ওয়্যার-এর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টও, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছিল, যা প্রকাশিত নথির অংশ।

Advertisement

অন্যদিকে, অভিযোগ, নিউজলন্ড্রির একটি তালিকাভুক্ত ভিডিও আসলে কোনও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নয়, বরং সাবস্ক্রিপশন আহ্বানমূলক ভিডিও, যেখানে কেবল আদানি গ্রুপ সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধের স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছিল।

Advertisement

আদালতের আদেশে বলা হয়েছিল, অভিযুক্ত সাংবাদিকরা আদালতের সামনে হাজির না হলেও অভিযোগ প্রাথমিকভাবে গ্রহণযোগ্য। তবে বিচারক অনুজকুমার সিং পরিষ্কার করে দেন যে, এই আদেশ ন্যায্য, যাচাইকৃত ও প্রমাণসিদ্ধ প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা হবে না।

যে সব সাংবাদিককে সরাসরি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা, রবি নায়ার, আবীর দাশগুপ্ত, অয়সকান্ত দাস এবং আয়ুস যোশী। মন্ত্রকের নোটিসে বলা হয়েছে, ‘উল্লিখিত আদালতের আদেশ কার্যকর করতে আপনাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রককে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।’ এছাড়া গুগল ও মেটা প্ল্যাটফর্মসকেও কপি পাঠানো হয়েছে।

সাংবাদিক রবীশ কুমার ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে ১৭ সেপ্টেম্বর দিনটিকে ‘আদানি ভিডিও টেকডাউন ডে’ হিসাবে চিহ্নিত করে বলেছেন, ‘দিনটি যেন উদযাপনের দিন এবং প্রভাবিত চ্যানেলগুলিতে আদানি-আয়েজিত অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। অন্যদিকে পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই আদেশ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর এক ধরনের ‘শীতল প্রভাব’ ফেলবে। সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা জানিয়েছেন, তিনি আদানি গ্রুপের দায়ের করা সব ক’টি মানহানি মামলায় লড়বেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি ভারতের বিচারব্যবস্থার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি। আমি যেসব লেখা লিখেছি বা বক্তব্য রেখেছি, সেগুলি সত্যনিষ্ঠ, সঠিক এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট। আদালতে যথাসময়ে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করবো।’

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আদানি গ্রুপকে ঘিরে যেসব প্রশ্ন উঠেছে— বিশেষ করে মার্কিন সংস্থা হিল্ডেনবার্গ রিসার্চ ও পরবর্তীতে এসইসি-র অভিযোগ—তার পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরাতে সরকারের এমন দ্রুত পদক্ষেপ মিডিয়া স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। একটি দেওয়ানি আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিধি ২০২১-এর সীমা ছাড়িয়েছে বলেই প্রশ্ন উঠছে। এই বিধি মূলত জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়, কিন্তু এখানে তা মানহানি মামলায় প্রয়োগ করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে নোটিস ছাড়া আর কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। ভারতে কর্পোরেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে আদানি গ্রুপের মতো বহুজাতিক শিল্পগোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সমালোচনা করা সংবাদ কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের পদক্ষেপ গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

আদানি গোষ্ঠীর ‘মানহানি’ হয়, এমন খবরের ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের একতরফা নিষেধাজ্ঞা চার সাংবাদিকের আর্জির প্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর খারিজ করে দিয়েছে দিল্লির রোহিনী আদালত। ওই চার সাংবাদিক হলেন রবি নায়ার, আবির দাশগুপ্ত, অয়স্কান্ত দাস ও আয়ুব জোশী। নিম্ন আদালতের গত ৬ সেপ্টেম্বরের নির্দেশ খারিজ করে জেলা বিচারক আশিস আগরওয়াল তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনগুলি দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্যে রয়েছে। তাই সেগুলি সরাতে নির্দেশ ওদওয়ার আগে জরুরি ছিল ওই সাংবাদিকদের
বক্তব্য শোনা।

Advertisement