• facebook
  • twitter
Wednesday, 21 May, 2025

রাজনীতিতে নীতিহীনতা

আজকাল দলের এই প্রাক্তন সভাপতিকে দলের হয়ে তেমন কোনও কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না। প্রাতর্ভ্রমণ কালে কোনও কোনও বিষয়ে তাঁর মন্তব্য ছাড়া।

প্রতীকী চিত্র

রাজনীতিতে নীতিহীনতার স্খলন সবসময়ই আমাদের চোখে পড়ে। নেতারা যে দলের সঙ্গে যুক্ত সেই দলের হয়ে নীতিকে বিসর্জন দিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। কেউ ঘোলাজলে মাছ ধরার আনন্দে থাকে। নীতি, শৃঙ্খলা ভাঙার জন্য তাঁদের মনে কোনও আপশোস নেই। এই যেমন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির তিন প্রধান সারথী— অস্থায়ী সভাপতি এবং সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য এবং দলের প্রধান মুখপাত্র। এঁদের মধ্যে সমন্বয়, সহযোগিতার অভাব বড় প্রকট হয়ে দেখা দেয়। দলের নীতি ও শৃঙ্খলা মেনে চলার বালাই নেই। আর বিজেপির এই চার নেতার সমন্বয় না থাকার জন্য দল শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে উঠতে পারছে না। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনেই, সে লোকসভাই হোক অথবা বিধানসভা— বিজেপি শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে লড়ে বেশি আসন লাভ করার চেষ্টা করে। রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু নেতাদের মধ্যে সহযোগিতার অভাবে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ছে না তো বটেই, বরং দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। অথচ কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্য বিজেপির নেতাদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেয়। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আসার ডাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশানুযায়ী কি কাজ করছেন রাজ্য গৈরিক শিবিরের নেতারা?

এই অবস্থার মধ্যে দিলীপ ঘোষ এক কাণ্ড করে বসলেন। দলকে না জানিয়ে এবং অবাক বিস্ময়ের মধ্যে ফেলে, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সস্ত্রীক দিঘায় জগন্নাথ ধামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে হাজির হলেন।

তাঁকে স্বাগত জানালেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দু’জনে পাশাপাশিবসে আলাপ-আলোচনা করতেও দেখা গেল। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তাঁর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন— দেখা গেল উভয়েই উৎফুল্ল এবং হাসিমুখ। যে দিলীপ ঘোষ উঠতে বসতে মুখ্যমন্ত্রীর কাজের সমালোচনা করেন, তাঁকে শাসক দলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখে বঙ্গ রাজনীতিতে জল্পনা-কল্পনার উদ্ভব হল। তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে একেক জন একেক রকম কথা তথা মন্তব্য করলেন বিষয়টি নিয়ে। প্রাতর্ভ্রমণ কালে সদ্য বিবাহিত দিলীপবাবু সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের জবাব দেন— তার বেশিই সরকারের কঠোর সমালোচনা। তাঁর একটি উপমা— শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চার-পাঁচতলা আবাসন হেলে পড়ছে পাশের আবাসনের, তা নিয়ে সাংবাদিকদের উত্তরে দিলীপবাবু তির্যক মন্তব্য, সরকারই যখন হেলে পড়েছে, তখন আবাসনগুলি হেলে পড়বে তাতে আর বৈচিত্র্য কী? আবার দিঘার এই অনুষ্ঠানে যোগদান নিয়ে তাঁর সহকর্মীরা কে কী বললেন? দলের বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায় বললেন, দিলীপ ঘোষ দলের নীতি ভঙ্গকারী।

শমীক ভট্টাচার্য বললেন, কে কোথায় যাবেন সেটা তাঁর নিজস্ব ইচ্ছে। অস্থায়ী সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বললেন, দল এটা সমর্থন করে না। আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, যিনি দলের হয়ে সবচাইতে বেশি সক্রিয়, গর্জে উঠে বললেন, এই প্রশ্নের জবাব আমি দেব না। অপর এক নেতা সৌমিত্রবাবু বললেন, ‘দিলীপবাবু বঙ্গ রাজনীতির লজ্জা।’ দিলীপ ঘোষ তাঁর সহকর্মীদের এইসব মন্তব্য নিয়ে বলেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন। এটা সৌজন্য। তবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে দিঘার অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে দলের মধ্যে অনেক গুঞ্জন তো উঠলই এবং অনেক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিল। দলের নীচু তলার দু-একজন নেতাকে বলতে শোনা গেল দিলীপ ঘোষ সস্ত্রীক তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আছেন। এটা তারই প্রথম ধাপ এবং সেই কারণেই তাঁর দিঘায় জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া। তাঁকে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা অভ্যর্থনা জানালেন, তা অর্থবহ তো বটেই। মুখ্যমন্ত্রী ও দিলীপবাবুর কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হল, তা জানতে আগ্রহী বিজেপির অন্যান্য নেতারা।

এখন দেখার রাজ্য বিজেপি নেতাদের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হয় কিনা। আজকাল দলের এই প্রাক্তন সভাপতিকে দলের হয়ে তেমন কোনও কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না। প্রাতর্ভ্রমণ কালে কোনও কোনও বিষয়ে তাঁর মন্তব্য ছাড়া। এখন যখন তৃণমূল সহ বামেরা আগামী বিধানসভার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিয়েছে, তখন বিজেপির রাজ্য নেতাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব দলকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। একমাত্র বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন কাজের কঠোর সমালোচনা করে রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্যে পূর্ণ সময়ের জন্য সভাপতি নিয়োগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন, কে হতে পারেন এই সভাপতি? দিলীপ ঘোষের অনুরাগীরা তার এই পদে নিয়োগ করার জন্য তদ্বির আরম্ভ করে দিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি দিঘার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তৃণমূল নেতাদের সংবর্ধনা পাওয়া— চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রাজ্যের সভাপতি বাছার কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। দিলীপ ঘোষের সহকর্মীরা অপেক্ষা করে আছেন তাঁর পরবর্তী কাজকর্ম দেখার জন্য। তবে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল মনে করে দিলীপ ঘোষের তৃণমূলে যোগদান কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।