বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি। আগামী সপ্তাহে সেটি প্রকাশ করার কথা। তার আগেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একাংশের গঠিত দল— জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার দলটি প্রথম দফায় মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১২৫টি কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে।
সকালে ঢাকার বাংলা মোটর এলাকায় এনসিপি’র অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দফার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব।
Advertisement
এই ঘোষণায় স্পষ্ট হয়েছে, নির্বাচনে দলের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান। নাহিদ ইসলাম লড়বেন ঢাকা–১১ নম্বর আসনে। নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারিকে প্রার্থী করা হয়েছে ঢাকা–১৮ নম্বর কেন্দ্রে। সদস্য সচিব আখতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রংপুর–৪ থেকে। দলের দুই পরিচিত মুখ— মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) সারজিস আলম এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাকেও লড়াইয়ে নামিয়েছে দল। সারজিস আলম পঞ্চগড়–১ এবং হাসনাত কুমিল্লা–৪ কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে দাঁড়াবেন। এছাড়া নোয়াখালি–৬ কেন্দ্রে সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ এবং ঢাকা–১৬-তে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিবকেও প্রার্থী করা হয়েছে।
Advertisement
একটি সাংবাদিক বৈঠকে কথা বলতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার জন্য নির্বাচন করছি না। কতটা আসন পাব বা পাব না, সে হিসেব করেও ভোটে নামছি না। আমাদের লক্ষ্য, পরিবর্তনের পথে জনগণকে সঙ্গে নেওয়া।’ তাঁর এই মন্তব্যে দলের অবস্থান যে ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বাইরে, তা দলীয় বার্তায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল, জাতীয় নির্বাচনে এনসিপি কিছু সমমনোভাবাপন্ন দলের সঙ্গে জোট বা বোঝাপড়ায় যেতে পারে। বিশেষ করে গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছড়িয়ে পড়া গণবিক্ষোভের পর যে পালাবদল হয়েছিল, তার পর থেকেই জামাত ও এনসিপির মধ্যে বিচারব্যবস্থা, সংস্কার এবং নির্বাচনসংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয়ে মিল লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তাই তাদের সম্ভাব্য রাজনৈতিক জোট হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
কিন্তু জুলাই সনদে সই করা নিয়ে আচমকা বদল আসে সমীকরণে। এনসিপির অভিমত ছিল, পর্যাপ্ত আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না পেলে সই করা ঠিক হবে না। দলের নেতৃত্ব ধরে নিয়েছিল, জামাতও সেই অবস্থানেই থাকবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জামাত সিদ্ধান্ত বদলে সনদে সই করে। এনসিপি অনড়ই থাকে। ফলে দুই দলের সম্ভাব্য জোটের জল্পনা থমকে যায়।
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনের আরও কয়েকদিন বাকি। তার আগেই ১২৫টি আসনে এনসিপি’র লড়াইয়ের ঘোষণা, রাজনৈতিক অঙ্গনে এই উদীয়মান দল দেশের জনগণের মনে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
Advertisement



