• facebook
  • twitter
Sunday, 22 June, 2025

চাপে পড়ে

২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশের পর দেশজুড়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনার আবহে সে সময় নরেন্দ্র মোদী সরকার জনগণনার প্রক্রিয়া শুরুর তৎপরতা দেখায়নি।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সতেরো বছর পর শুরু হতে চলেছে দেশের জনগণনা। এবারের জনগণনার বৈশিষ্ট্য হলো, একই সঙ্গে হবে জাতভিত্তিক গণনাও। জনগণনার সূচি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এবারের জাতভিত্তিক গণনা সহ জনগণনা হবে দু’টি পর্যায়ে। ২০২৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রশাসিত লাদাখের পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের বরফাবৃত প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে জাতিভিত্তিক গণনার পাশাপাশি জনগণনার কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ২০২৭ সালের ১ মার্চ থেকে দেশের বাকি অংশে পুরোদস্তুর জনগণনার কাজ শুরু হয়ে যাবে।

শেষবার জনগণনা হয়েছিল ২০১০ সালে। রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। নির্ধারিতভাবে ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও কোভিডের যুক্তি দিয়ে জনগণনা পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও জনগণনা করেনি মোদী সরকার। বিশ্বের ২৩৩টি দেশের মধ্যে ৪৪টি দেশ ২০২০ সালের পর জনগণনা বা সেন্সাস করতে পারেনি। সেই তালিকায় রয়েছে ইয়েমেন, সিরিয়া, মায়ানমার, ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকার এক ঝাঁক দেশ। এই সেন্সাস না হওয়া দেশগুলির অন্যতম ভারত। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দাবিদার, ১১ বছরের সুশাসনের ঘোষণা এবং বিকিশিত ভারতের নানা স্লোগান দিলেও সেন্সাস করতে পারেনি মোদী সরকার। বারবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে জনগণনা। ২০২৪ সালের অক্টোবরে বলা হয়েছিল ২০২৫ সালেই হবে সেন্সাস। কিন্তু এখন ‘পপুলেশান সেন্সাস ২০২৭’ নামে জনগণনার কাজ প্রায় দু’বছর পর মার্চ মাসে শুরু হবে। কিন্তু মার্চ মাসে প্রায় সব রাজ্যেই বোর্ড পরীক্ষা হয়। গোটা মাস পরীক্ষার কর্মসূচির পর খাতা দেখা ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ব্যস্ত থাকেন। ফলে মার্চেও সম্ভব নয় সেন্সাস। অথচ বিগত সব সেন্সাস শুরু হয়েছিল ১ এপ্রিল থেকে।

এই জনগণনার সিদ্ধান্ত একাধিক রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে উস্কে দিয়েছে। পরিবর্তিত জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস করে লোকসভার মোট আসন বৃদ্ধি হওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪৩ থেকে বেড়ে ৮৮৮-র কাছাকাছি চলে যাবে। তার পরে মহিলা সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হবে। মোদী সরকার ইতিমধ্যে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বা লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন করার দিকে পা বাড়িয়েছে। জাতগণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বর্তমানে যে সংরক্ষণ নীতি রয়েছে, তার ছবিও পাল্টানোর সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ণমাত্রায়।

২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশের পর দেশজুড়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনার আবহে সে সময় নরেন্দ্র মোদী সরকার জনগণনার প্রক্রিয়া শুরুর তৎপরতা দেখায়নি। এরপর সামনে চলে আসে জাতগণনার দাবি। বিরোধীরা জাতভিত্তিক গণনার দাবিতে সরব হয়। লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রায় প্রতিটি জনসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি জাতগণনা নিয়ে জোরালো সওয়াল করেন। অন্যান্য বিরোধী নেতারাও একই দাবি জানাতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী সহ বিজেপি নেতারা অবশ্য বিরোধীদের এই দাবিকে নানাভাবে শুধু অস্বীকারই নয়, কটাক্ষ করতে শুরু করেন। বিরোধীরা জাতগণনার দাবি তুলত বলে কটু মন্তব্য, বিষোদগারে ভরিয়ে দিতেন বিজেপি নেতারা। বিরোধী নেতাদের ‘বিভেদকামী’, ‘দেশবিরোধী’ এবং ‘শহুরে নকশাল’ বলে অহরহ গালি দিয়ে জাতগণনার দাবিকে সপাটে উড়িয়ে দিয়েই এসেছে মোদী সরকার বা বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা।

তবে লোকসভা ভোটে বিজেপি একক দল হিসাবে ধাক্কা খাওয়ার পর মত বদলাতে শুরু করেন মোদীরা। সেষে জাতগণনার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় মোদী সরকার। সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জাতগণনার সঙ্গে জাতভিত্তিক গণনাও হবে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, নরেন্দ্র মোদী সরকারকে জাতভিত্তিক গণনার দাবি মানতে হয়েছে সামনে বিহারের নির্বাচন আছে বলে। আরজেডি এবং বামপন্থীদের সমর্থনে পরিচালিত বিহারের নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন সরকার জাতভিত্তিক সমীক্ষা ঘোষণা করেছিল। সেই নীতীশ কুমারের সমর্থনেই এখন চলতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে। ফলে রাজনৈতিক বিন্যাসের কথা মাথায় রেখেই জাত গণনায় রাজি হয়ে যায় কেন্দ্র। যাঁরা জাতগণনার দাবিকে কটাক্ষ করতেন, তাঁরাই এখন ডিগবাজি খেয়ে জাতগণনার সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে প্রচার শুরু করেছেন।

১১ বছর দরে ক্ষমতায় থাকলেও মোদী সরকারের আমলে এই প্রথমবার জনগণনা হতে চলেছে। মনে করা হচ্ছে, ২০২৮ সালে সামনে আসতে পারে জনগণনা ও জাতগণনা সংক্রান্ত তথ্য।