তৃণমূলের সামনে আবার একটা পরীক্ষা। ত্রিপুরার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আগামী ২৬ জুন। তৃণমূল প্রতিটি আসনেই প্রার্থী দিচ্ছে। কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম আগরতলা।
এই নির্বাচন উপলক্ষে ত্রিপুরায় রাজনৈতিক উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। শাসক দল বিিেপ নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে চারটি আসনেই জিততে মরিয়া।
Advertisement
আবার তৃণমূল ঘোষণা করেছে এক ইঞ্চি জমিও বিজেপিকে ছাড়া হবে না। বামেরাও আসবে।
Advertisement
সুতরাং এই উপনির্বাচনের প্রচার দেখে অনেকেই ভাবছেন যেন বিধানসভার নির্বাচন। তৃণমূলের প্রচার তুঙ্গে উঠেছে সম্প্রতি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ রোড শোয়ের পর।
খবরে জানা যায়, এই শো’তে প্রচুর লোকসমাগম হয়েছিল। রোড শো শেষে অভিষেক ঘোষণা করেন পুরভোটে আমরা আশানুযায়ী কিছু করতে পারিনি—কিন্তু উপনির্বাচনে দল ভালো ফল করবে বলে তিনি আশাবাদী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপনির্বাচনে দলের প্রচারে ত্রিপুরায় গিয়ে অংশ নেওয়ার কথা।
উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী সাধারণত প্রচারে নামেন না– কিন্তু এই রাজ্যের চারটি আসনের উপনির্বাচন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে আলাদা তাৎর্প বহন করে।
মমতা প্রচারে নামলে নির্বানপর্ব জমে উঠবে সন্দেহ নেই। তৃণমূলের এখন প্রধান লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের বাইরে এই দলের প্রাধান্য বিস্তার করা।
নামে সর্বভারতী তৃণমূল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোথাও এই দলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। বড় আশা নিয়ে তৃণমূল গোয়ায় বিধানসভা ভোটে অংশ নিয়েছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া দলের শীর্ষ নেতারা প্রচারে নেমেছিলেন। একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। তৃণমূল জোট কয়েকটি আসনে জয়লাভ পারে।
কিন্তু ফল হলে দেখা তৃণমূল শূন্য। একটি আসনও তাঁর ঝুলিতে এল না। এটা দলের কাছে একটা বড় বিপর্যয়। এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা কঠিন। অন্য রাজ্যে শিকড় বিস্তার তো আরও চ্যালেঞ্জিং।
ত্রিপুরার উপনির্বাচনে তৃণমূল জেতার জন্য ছটফট করছে বটে, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বড় কঠিন। সাধারণত দেখা যায় , উপনির্বাচনে বিরোধী দল জয়ী হয় না।
কারণ শাসক দল প্রশাসনকে পুরোপুরি কাজে লাগায়। সুতরাং শাসক দল হিসেবে বিজেপির একটি বাড়তি সুবিধা। নতুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ।
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে সরানোর পিছনে যেসব কারণ ছিল, তার মধ্যে তাঁর রাজধর্ম পালনে ব্যর্থতা অন্যতম।
আগামী বছর এই রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন। তাই তৃণমূলের কাছে এই উপনির্বাচন অনেকটা সেমিফাইনাল।
তবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উড়ে এসে নির্বাচনের সময় মানুষের ভোট চাওয়ার ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। সারা বছর দলের কোনও ভূমিকা নেই।
মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শোনা নেই, মানুষের আস্থা অর্জন করা নেই— শুধু তৃণমূলের ঝান্ডা তুলে, মিটিং-মিছিল করে আখেরে লাভ হয় না।
তবে বিজেপি সরকারের প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ বিজেপির শীর্ষ বিজেপির শীর্ষ নেতারা ত্রিপুরার উন্নয়নে ঢালাও অর্থ বরাদ্দ করা হবে বলে যে তা রাখা হয়নি। রাখা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর ত্রিপুরাকে সোনা দিয়ে মুড়ে ফেলায় প্রতিশ্রুতিও।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব যতটা কথার জাদুকর , কাজের জাদুকর , তাঁর শাসন মানুষের মনে দাগ কাটতে পারেনি । তাই ত্রিপুরার উন্নয়নও সেভাবে দানা বাঁধেনি । তবুও নির্বাচন এলে শাসক দলের হম্বিতম্বি বেড়ে যায় ।
পঁচিশ বছর পর নির্বাচনে বামেদের উৎখাতের পর, গত চার বছরে তাঁরা কতটা গুছিয়ে উঠতে পেরেছেন, তা উপনির্বাচনের ফলাফলে বোঝা যাবে। বিজেপির নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁদের পেশীশক্তি কাজে লাগবে না।
সুতরাং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপনির্বাচন হওয়া নিয়ে সন্দেহ জাগে। উপনির্বাচনে ভোটদাতারাও ভোট দেওয়ার তাগিদ ততটা অনুভব করেন না।
কারণ এই নির্বাচন তো সরকার গড়ার নির্বাচন নয়। ত্রিপুরার তৃণমূলের দায়িত্ব দেওয়া আছে বিজেপি থেকে প্রত্যাগত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর।
সুতরাং উপনির্বাচনকে তৃণমূলের ফল ভালো না হলে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কিছুটা অন্ধকারে ঢাকা পড়বে।
সামনে বিধানসভা নির্বাচনে, তৃণমূলকে ভালো ফল করতে হলে ত্রিপুরাবাসীর সুখদুঃখের ভাগী হতে হবে। তাদের সঙ্গে মিশে যেতে হবে।
Advertisement



