স্বচ্ছ বনাম অস্বচ্ছ

একেবারে একশত ভাগ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কয়জন প্রার্থী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মানোয়নপত্র পেশ করছেন?

Written by SNS March 30, 2019 7:32 am

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি (Photo: IANS)

একেবারে একশত ভাগ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কয়জন প্রার্থী লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মানোয়নপত্র পেশ করছেন? মনোনয়নের কাগজপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে তাদের যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য বীত্তের হিসেবসহ হলফনামা পেশ করছেন, তাতে কি তারা সত্যটাই প্রকাশ করছেন? যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কেস ঝুলছে এমন অনেক প্রার্থী ভোটে দাঁড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের হয়ে। যদিও দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অভিযুক্ত করা যায় না– তাই নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে কেস রয়েছে, দলের প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে তা বাধা হয়ে দাড়ায় না। নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে এসব বিষয়গুলি, সুতরাং কমিশন এ ব্যাপারে যা বলার সেটাই আসল বলা।

তবে ক’জন তাদের বিষয়সম্পত্তির সঠিক হিসেব দেন, আসন তথ্য গোপন রেখে সম্পদের পরিমাণ হলফনামায় জানান, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। এই যেমন পশ্চিমবঙ্গে একটি কেন্দ্রের দু’জন, দুই দলের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন পেশের সঙ্গে যে সম্পদের হিসেব দিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাড়ি বা ফ্ল্যাটের যে মূল্যের কথা তাঁরা উল্লেখ করেছেন, তার বাজার মূল্য অনেক বেশি। সুতরাং মনোনয়ন পেশ কারীদের বক্তব্য যাই হোক না কেন, মূল্যের পরিমাণ বলতে গিয়ে আসল সত্যকে চেপে গেছেন। যারা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থের কথা উল্লেখ করেছেন, সোনারদানার হিসেব দিয়েছে, সন্দেহ হলে কমিশন তা অনুসন্ধান করে দেখতে পারে। কিন্তু যার বিশেষ সম্পত্তি অসাধু, বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তার একটি অংশের কথা হলফনামায় জানালে্‌ বাকিটা চেপে গেছেন- সে ক্ষেত্রে কিন্তু সত্যের অপলাপ হল।

একটি প্রচলিত ধারণা, যারা মানুষের ভোটে নির্বাচনে জয়ী হয়ে জনপ্রতিনিধি হবেন তাঁরা যদি বিশাল সম্পত্তির মালিক হন, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চালান, তাহলে তাঁরা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অভাব অভিযোগ, দুঃখকষ্ট, কমই বুঝতে পারেন। অভাবের কথা তাদের পীড়া দেবে না। কেউ যদি নিজে ব্যাথা যন্ত্রনায় কাতর না হন, তাহলে অন্যের ব্যথা অনুধাবন করবেন কি করে? কিন্তু বর্তমান সংসদে যাঁরা বিদায়ী সাংসদ, তাঁরা অনেকেই অগাধ সম্পত্তির মালিক, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্য। এই বিত্তই তাদের বিত্তহীনদের দুঃখকষ্ট বোঝার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আবার যারা কোন না কোন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে কেস ঝুলছে তাঁরাও নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন যেহেতু আইনের চোখে তাঁরা এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি। নির্বাচন কমিশন এদের ভোটে দাঁড়াতে দিলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু এদের সম্বন্ধে ভালো ধারণা পোষণ করেন না। এরকম মানুষ জনপ্রতিনিধি হন তাঁরা তা চান না। তাঁদের কথা শুনলে মনে পীড়া দেয়। কারণ কোনো না কোনোভাবে অপরাধের সঙ্গে জড়িত আছেন বলেই, তাঁদের বিরুদ্ধে কেস ঝুলছে, এই ধরনের লোকদের প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড় করানোর আগে রাজনৈতিক দলগুলির দশবার ভাবা উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় অনেক অপরাধে যুক্ত থেকেও দলের প্রার্থী হয়ে ভোট চাইতে তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

আসলে যাঁরা জনপ্রতিনিধি হতে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁরা যদি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির হন, অঞ্চলের মানুষের কাছে দরদী মানুষ হিসেবে পরিচিতি থাকে, তাহলে মানুষ তাদের গ্রহণ করেন। যদিও সংসদীয় গণতন্ত্রে দল যাঁদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাবে, তাঁদের সততা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা না থাকলেও দলের সুবাদে ভোটে জিতে যান। প্রার্থীর গুনাগুন এক্ষেত্রে বিচারের মাপকাঠি হয় না। এখানেই বিপদ! দল যদি প্রিয় মানুষটিকে ভোটে দাঁড় করায় তাহলে দলের সুনামও বাড়ে।

একজন জনপ্রতিনিধি, তিনি সংসদের সঙ্গেই যুক্ত থাকুন অথবা রাজ্যের বিধানসভার সদস্য হন, তাঁর নিজ নির্বাচন কেন্দ্রের মানুষের মুখ বা প্রতিনিধি। একজন সাংসদের দায়দায়িত্ব অনেক বেশি, কারণ তিনি তাঁর কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভারও প্রতিনিধি। তাঁর কাঁধে অনেক গুরু দায়িত্ব, অনেক জনহিতকর কাজে তাঁর যুক্ত থাকার কথা। তিনি সংসদের অধিবেশনে সুযোগ পেলেই তাঁর কেন্দ্রের মূল সমস্যা গুলি তুলে ধরবেন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। তেমনি কেন্দ্রে মাঝে মাঝে এসে মানুষের সঙ্গে মিশলে, তাদের অভাব অভিযোগের কথা মন দিয়ে শুনবেন ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবেন। একজন বিধানসভার সদস্যেরও ছোট পরিসরে একই ধরনের কাজ। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জনপ্রতিনিধি হলে এসব কাজে তার অনেক সুবিধে।