যুগকে সাক্ষী রেখে যুগের উন্নতির সাথে সাথে নারী শক্তির যেমন বিকাশ ঘটেছে, নারীরা যেমন স্বাবলম্বী হয়েছে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারছে, তার পাশাপাশি এই নারী শক্তির অনেক ক্ষেত্রেই অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং তা একসময় আইনি সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। আজকে বিজ্ঞান যেমন উন্নতি করছে তেমনি প্রায় বহু নারী নিজের মানসিক প্রচেষ্টায়, নিজের যোগ্যতায় এবং বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় তারা আর্থিক দিক দিয়ে আগের তুলনায় অনেকটাই সাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এটা দেশের উন্নতির পক্ষে খুবই একটি উন্নত থেকে উন্নততর পদক্ষেপ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা একটু খেয়াল করলে দেখব যে বহু ক্ষেত্রে এই নারী শক্তির অপব্যবহারের ফলে বহু পুরুষ সাংসারিক জীবনের সুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে একটি মতভেদ এবং ব্যবধানে সৃষ্টি হচ্ছে।
আজকে পুরুষের যে দাপট, অত্যাচার, প্রভুত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং তাদের থেকে সাহায্য না নেবার জন্য বহু নারীকে দেখা যায় যে তারা নিজে পায়ে দাঁড়াতে চায়, তারা জীবনে নিজে কিছু করতে চায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়টি হলো যে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই স্বনির্ভরতা তাদেরকে অহংকারী, জেদি এবং সর্বদা আদেশপ্রবণ মানসিকতায় পরিণত করছে। এতে অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে স্বামী স্ত্রী উভয়ের পক্ষের মধ্যে কোনোপ্রকার মতবিরোধ, ব্যবধান এবং মানসিকতার তফাৎ দেখা দিচ্ছে। এমনকি সেটি ক্রমশ বাড়তে বাড়তে কোনো আইনি সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। আজকে আমরা একটু খেয়াল করলে দেখব যে আদালতে ডিভোর্সের মামলা আগের থেকে অনেক পরিমাণ বেড়ে গেছে। তার প্রধান কারণ হলো উভয়পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ এবং মানসিকতার তফাৎ।
বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে স্ত্রীরা আদালতে মামলা করে পুরুষের সম্পত্তির ওপর দাবী চাইছে এবং ভরণপোষণের জন্য খরচা চাইছে। কারণ বিয়ের সময় অনেক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলা হয় যে স্ত্রীর ভাত কাপড়ের দায়িত্ব স্বামী নেবে। কিন্তু প্রশ্নটি হল একটি বিতর্কিত – স্বামী এবং স্ত্রীকে যদি উভয়কে উভয়ের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে বলা হয় তাহলে স্ত্রীর যেমন ৫০% অধিকার আছে স্বামী সম্পত্তির ওপর তেমনি তার পাশাপাশি স্বামীরও ৫০% অধিকার আছে স্ত্রীয়ের সম্পত্তির উপর। কিন্তু খুব ভালো করে চিন্তা করলে আমরা দেখব যে নারী শক্তির বিকাশ যেমন উন্নতির পক্ষে, সাবলম্বিতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তার পাশাপাশি জীবনে মানিয়ে চলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরবর্তী জীবনে সুখ শান্তি বজায় রাখার জন্য। সুতরাং পুরুষ শক্তির বিকাশ যেমন প্রয়োজন তেমনি নারী শক্তিরও বিকাশ অবশ্যই প্রয়োজন।
মানুষের চাহিদা, লোভ লালসা এবং ধৈর্যের অভাব এতটাই তীব্রভাবে পৌঁছে গেছে বিশেষ করে এই বিজ্ঞানের যুগে যে কোন মানুষ আর মানসিক দিক দিয়ে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারছে না। সব মানুষেরই সময়ের অভাব, সব মানুষেরই আরো চাই আরো চাই চাহিদা লেগেই আছে। পুরুষেরাও যেমন অল্পেতে সন্তুষ্ট নয় তেমনি নারীরাও অল্পতে সন্তুষ্ট নন। এই অসন্তোষ তাদের জীবনে ঘোর অন্ধকার ডেকে নিয়ে আসছে। অর্থাৎ কোনও কিছুতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, কোনও কিছুতে সন্তুষ্ট হওয়ার ক্ষমতা প্রায় উভয় পক্ষের মধ্যেই অনেকটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানুষ খুব চট জলদি কোনও ফলাফল পেতে চাইছে অর্থাৎ ইউজ এন্ড থ্রো পেন-এর মত।
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনও মতবিরোধ হলেই তারা উভয় উভয়ের নামে ফৌজদারি অভিযোগ করছে। কতটা সত্য, কতটা মিথ্যে তা বিচার না করে নারী বা পুরুষ একজন আরেকজনের নামে অতি সহজেই কোনো ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে কোনও মিথ্যা বদনাম দিচ্ছে। আগে যারা নারীরা ঘর সংসার করতেন তাদের মধ্যেও মতবিরোধ অশান্তি ছিল কিন্তু বর্তমান যুগে দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে নারী এবং পুরুষের মধ্যে এই মতবিরোধ তীব্র থেকে তীব্র আকারে দেখা দিচ্ছে যা উভয়ের জীবনকে অনেক সময় নরকে পরিণত করছে।