মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের জেরে ভারতের শেয়ার বাজারে ধসল নামল ৭ এপ্রিল। তাসের ঘরের মতো ধসে পড়েছে শেয়ার বাজার। একদিনেই বাজার থেকে উবে গিয়েছে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারত থেকে বিনিয়োগ তুলে বেরিয়ে যাওয়ায় এই গতি আরও বেড়েছে। এক দিনেই ভারতের শেয়ার বাজার থেকে তারা ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা লগ্নি তুলে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নি দেশ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডলারের তুলনায় টাকার দামেও রেকর্ড পতন ঘটেছে। ওই দিন টাকার দাম ডলারের তুলনায় ৩৮ পয়সা কমে গিয়েছে। ফলে এক ডলারের দাম টাকার অঙ্কে বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা ৮২ পয়সা। সেনসেক্সেও রেকর্ড পতন হয়েছে, ৫.২২ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯৯৩ পয়েন্ট কমে তা হয়েছে ৭১ হাজার ৪২৫ পয়েন্ট। এনএসই নিফটি রেকর্ড হারে ৫.০৬ শতাংশ বা ১ হাজার ১৬০ পয়েন্ট কমে হয়েছে ২১ হাজার ৭৪৩ পয়েন্ট। রিলায়েন্স, আদানি পোর্ট, টাটা মোটর্স, টাটা স্টিল, লার্সেন টুবরো, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক সহ সমস্ত বড় কর্পোরেটের শেয়ার দরে ধস নেমেছে। শুধু ভারত নয়, আমেরিকা সহ বিশ্বের বহু দেশেই শেয়ার বাজারে ধস নামে।
সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক অথবা জিও পলিটিক্যাল যে কোনও অস্থিরতার সম্ভাবনায় সর্বাগ্রে পূর্বাভাস দেয় শেয়ার বাজার। তেমনটাই দেখা গেল সোমবার ৭ এপ্রিল। গোল্ডম্যান স্যাক্স, এস অ্যান্ড পি, জেপি মরগ্যান, এইচ এসবিসি-র মতো প্রথম সারির আন্তর্জাতিক আর্থিক সমীক্ষক সংস্থার পূর্বাভাস ছিল— ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বেচ্ছাচারী শুল্ক যুদ্ধের জেরে ৯ মাসের মধ্যে বিশ্বকে গ্রাস করতে চলেছে মহামন্দা। ২০০৮ সালের মন্দাকেও ছাপিয়ে যেতে চলেছে এই সঙ্কট। আর ঠিক তারপরই গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজার মুখ থুবড়ে পড়ল।
Advertisement
আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে নেমে গিয়েছে সোমবার। যাদের জন্য এই আর্থিক বিপর্যয়, সেই আমেরিকার ন্যাসডাক সূচকের পতনও সাড়ে ৫ শতাংশ।
Advertisement
যাবতীয় আর্থিক সমীক্ষক সংস্থার পূর্বাভাস হল, বিশ্বজুড়ে মুদ্রার পতন ঘটবে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ছন্দ সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন হয়ে যাবে। যে মহা আর্থিক মন্দা আসতে চলেছে, তার সব থেকে বড় প্রভাব পড়বে আমেরিকায়। এই সম্ভাবনার প্রশ্নেও নিজের অবস্থানে অনড় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। উল্টে চিনের উপর আরও ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন তিনি। সাফ বলেছেন, ‘বড় বড় অসুখ সারাতে আগেই মেডিসিন দিতে হয়। আমি একটু মেডিসিন দিয়েছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। তেলের দাম কমেছে। সুদের হার কমেছে। খাদ্য পণ্যের দাম কমেছে। কোনও মুদ্রাস্ফীতি নেই।’ যদিও ট্রাম্প আমেরিকাকে অন্ধকার সুড়ঙ্গের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, এই অভিযোগ তুলে বিগত ৭২ ঘণ্টায় আমেরিকার সমস্ত বড় বড় শহরে চলছে প্রবল গণবিক্ষোভ, মহামিছিল, প্রতিবাদের ঝড়। এমনকী মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাগুলির পক্ষ থেকেও ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থানের আঁচ পাওয়া গিয়েছে। কারণ, বহুজাতিক কর্পোরেটের কাছে আর্থিক মন্দাই প্রধান উদ্বেগের বিষয়। সোজা কথায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপর ঘরে ও বাইরে চাপ প্রবলভাবে বাড়ছে। শোনা যাচ্ছে, শুল্ক যুদ্ধ থেকে পিছু হটতে মুখরক্ষার পথ খুঁজছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের শুল্কের কোপ বর্তমানে ১৮০টির বেশি দেশের বাজারকে চরম অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুল্কের প্রভাব হয়তো ভারতের উপর সীমিত। কিন্তু মার্কিন অর্থনীতিতে যদি একবার মন্দা দেখা দেয়, তাহলে ভারতের শেয়ার বাজার আরও বড় ধাক্কা খেতে পারে।
মোদী ও ট্রাম্পের আর্থিক নীতি ভারতে শেয়ার বাজারে ধসের মূল কারণ বলে মনে করেন বিরোধী নেতারা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি মোদীর আর্থিক নীতির কল্পনার সব মোহ ভেঙে দিয়েছে। তাই ধস নেমেছে শেয়ার বাজারে। অথচ এই সময় নরেন্দ্র মোদী মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। ভারতের নাগরিকদের হাতে কাজ দিতে উৎপাদন ভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। শেয়ার বাজারের ফাটকা কারবার অর্থনীতির কোনও অগ্রগতি যে ঘটায় না, তা আরও একবার প্রমাণিত হল।
Advertisement



