একলা চলার লড়াই

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘একলা চলো’র লড়াই শুরু হয়ে গেল। কথার তুবড়ি ছোটানোর শক্তি যতই থাকুক, এখন ভোটে মানুষের সমর্থন লাভে কোন দলের কত শক্তি যাচাই হবে। আর সেটাই হবে কোনও রাজনৈতিক দলের আসল শক্তি।

Written by SNS March 27, 2019 7:51 am

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘একলা চলো’র লড়াই শুরু হয়ে গেল। কথার তুবড়ি ছোটানোর শক্তি যতই থাকুক, এখন ভোটে মানুষের সমর্থন লাভে কোন দলের কত শক্তি যাচাই হবে। আর সেটাই হবে কোনও রাজনৈতিক দলের আসল শক্তি।

এই বাংলার দুই রাজনৈতিক শত্রু মিত্র হতে চেয়েছিল। আসন ভাগাভাগি করে নিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেস কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিল। উভয় দলেরই প্রার্থীদের জেতার রাস্তাটা এই সমঝোতার পর অনেকটা সহজ হয়ে যেত। তার জন্য এই দুই দলের নেতাদের মধ্যে কথা চালাচালি চলছিল। এমন সময় থেকে যখন নির্বাচন কমিশনও ভোট নিয়ে তেমন তোরজোড়ও শুরু করেনি। আলোচনার নির্যাস, দুই দলের নেতারাই রাজধানীতে উভয় দলের হাইকম্যান্ডকে অবহিত রাখতেন।

নির্বাচনের সূচী ঘোষিত হল। আচরণবিধি চালু হল। এই দুই দল উঠে পড়ে লাগল সমঝোতার প্রশ্নে। কিন্তু সিপিএম যা চায়, কংগ্রেস তা দিতে আগ্রহী নয়, আবার কংগ্রেস যা চায়, সিপিএম তা মানা থেকে দূরে। এই টালবাহানা শুরু হল গভীর রাতেও মিটমাটের কথা বলল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাতেই ইতি পড়ল। মুখ ফিরিয়ে নিল সিপিএম, মুখ ফিরিয়ে নিল কংগ্রেস। সুতরাং অতীতের এই দুই দলের সেই অহিনকুল সম্পর্ক ফিরে এল। এখন আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়াতে সিপিএম দেখছে এর পিছনে টাকার খেলা, আর কংগ্রেস বলছে সিপিএমের একগুঁয়ে মনোভাব। বাস্তবটা না বোঝা। কোনও টাকার খেলা নেই। সুতরাং কংগ্রেস সিপিএমের কাঁধে কাঁধ রেখে নির্বাচনে লড়াই হল না। এখন একলা চলো।

শাসক তৃণমূল বড় দল, শক্তিধর দল। এই দল একাই লড়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু বিজেপির হাত ধরার এ বাংলায় কেউ নেই– সুতরাং এই দলকেও একাই লরতে হবে। এই দলের পশ্চিমবঙ্গের মাতি খুব শক্ত, না হলেও রাজ্যকে নিয়ে বড় স্বপ্ন আছে। তাই প্রধানমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে দলের শীর্ষ নেতারা এই বাংলায় প্রচারে আসবেন। খুব সম্ভব তার শুরু আগামী মাসের তিন তারিখ ব্রিগেড ময়দানে জনসভা নিয়ে। সেখানে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর দলের অন্য নেতারা এই রাজ্যে সভা মিছিল করতে আসবেন। বিজেপি সাংগঠনিক কাজেও অনেক এগিয়ে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রামেও এই দলের শাখা অফিস স্থাপিত হয়েছে। সুতরাং এই দলের লক্ষ্য, শাসন ক্ষমতা প্রথম ধাপে আসা। সে ধাপে পৌছনো কঠিন হলেও, চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? চেষ্টায় অনেক কিছুই মিলে যায়।

কংগ্রেসকে একা লড়ার সাহস ও দলের নেতাদের মনোবল বাড়িয়ে গেলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহিল গান্ধি। সম্প্রতি মালদার চাঁচলে যে জনসভা করলেন তাতে তিনি বুঝে গেলেন কংগ্রেসের ডাকে মানুষ এখনও ছুটে আসে। আর মালদার মাটি, কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। আজ নয়, সেই গণি খান চৌধুরীর আমল থেকেই। রাহুলকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতে যে জনসমাগম হয়ছিল, তা অতীতে খুব কম দেখা গেছে। যদিও উচ্ছাসে মেতে ওঠা মানুষের মন ভরল না, রাহুলের অতি অল্প সময় বোলার কারণে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত ভাষণ, এরই মধ্যে তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। ছাড়লেন না সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নুরকে। তিনি জনতার উদ্দেশে বললেন, এই বেইমানির জবাব আপনারা দেবেন। বললেন, ‘এখানে একজনের শাসন চলছে, সেই শাসনের পরিবর্তন আনুন, যেমন এনেছিলেন সিপিএম শাসনের সময়ে’।

অথচ কিছুদিন আগেও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাহুলের স্বর এমন তীক্ষ্ণ ছিল না। এইদিন তাঁর শাসিত রাজ্যে এসেই তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করে গেলেন। সেই সঙ্গে জেনে গেলেন একা লড়াইয়ের ফল কী হতে পারে। মঞ্চে উপস্থিত রায়গঞ্জের প্রার্থী দীপা দাসমুন্সি রাহুলকে জানিয়ে দিলেন জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী, তবে লড়াই তীব্র হবে। রাহুল কথা বললেন রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গেও। কিন্তু সোমেনবাবুকে এদিন অনেকটাই ম্রিয়মান দেখাল। চাঁচলের সভায় মানুষের যে সাড়া মিলল, তাতে উল্লসিত রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা। তাঁদের আশা মালদা চিরদিনই কংগ্রেসের ‘বড় আশার স্থল’- এই জেলায় কংগ্রেস প্রার্থীরা সবসময়ই জয়ের মুখ দেখেছেন। তাঁরা বলছেন রাহুল গান্ধি যদি আরও দু-একটি সভা এই রাজ্যে করেন তাহলে কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল আরও বৃদ্ধি পাবে।

নির্বাচনের প্রচার আস্তে আস্তে জমে উঠছে। উত্তাপ বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী আসছেন। মুখ্যমন্ত্রীও শীঘ্রই প্রচারের আসরে নামবেন। তিনি রাহুলের কথার জবাব দেবেন। সুতরাং ভোটের আবহ ভালভাবেই তৈরি হতে চলেছে এই বাংলায়।