শিবশঙ্কর দাস
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর যে দিন বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয় সে দিন রাখি বন্ধন ও আরন্ধন পালিত হয়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসবের উদ্যোক্তা। লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ ঘোষণাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সর্বত্র বঙ্গ ভঙ্গ বিরোধ আন্দোলন শুরু হয়। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বেঙ্গলি পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গকে এক গুরুতর জাতীয় বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে বাংলার বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে প্রায় দুই হাজার সভা আনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গভঙ্গ কার্য করার দিন দ্বিখণ্ডিত বাংলার যুক্ত প্রতীক হিসেবে কলকাতা ফেডারেশান হলের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ওই দিন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শে ও অন্যান্য নেতাদের পরামর্শে সেই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস রূপে পালিত করা হয়। সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই অনশন পালন করে এবং এবং হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরকে রাখি পরিয়ে দেয়।
Advertisement
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন, জনগণের ক্ষোভ ও ক্রোধের কথা প্রকাশ করেন। বাঙালি সর্বত্র এক মন ও এক প্রাণ নিয়ে চরম দুঃখ ও দুর্দশা ও আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়। এমন কি দূর মফস্বলে, বরিশালে, ময়মনসিংহে ও দেশাত্মবোধের অদ্ভুত প্রকাশ লক্ষ করা যায়। কংগ্রেসের বারাণসী অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে গোখেল বলেন যে, ‘বঙ্গভঙ্গ একটি নিষ্ঠুর অধ্যায়’ অপরদিকে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিনে দুই বঙ্গের অখণ্ডতা কে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এক মহতী জনসভা হয় ওই সভায় আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে এই মর্মে এক প্রস্তাব গৃহীত হয় যে সকল বাঙালি সকল দুঃখকষ্ট ও নির্যাতন ভোগ করে বাংলার অখণ্ডতা রক্ষা করবে।
Advertisement
এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসমোজ, দেশিয় সংবাদপত্র সর্বত্র একটা তিরস্কার ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত হয় এই আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবে। স্বদেশি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক রচনার মধ্যে দিয়ে জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমের আদর্শ প্রচারিত হয়। এদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বীজেন্দ্র লাল রায়, অতুল প্রসাদ সেন, রজনীকান্ত-এর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতি সর্ব প্রথম উপলব্ধি করে যে ব্রিটিশ ও ভারতীয়দের স্বার্থ পরস্পর বিরোধী। ব্রিটিশ শাসন সভ্যতা ও উপকারিতা সম্পর্কে ভারতীয়দের যে মোহ ছিল বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলনের ফলে তা কেটে যায়।
সুতরাং বলা যায় যে, স্বদেশি আন্দোলন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করতে সাহায্য করে। তিনি আশা করেছিলেন, রাখী বন্ধনের মাধ্যমে ভাই-বোনের সম্পর্কের মতো, হিন্দু ও মুসলিমরাও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং ব্রিটিশদের এই বিভেদ সৃষ্টিকারী নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হবে। এবং পরিশেষে বলা চলে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখি বন্ধন উৎসব সমস্ত শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধ দৃঢ়চেতা করতে সাহায্য করে।
Advertisement



