নোবেলজয়ীর প্রস্তাব

ভারতকে যদি কেসস্টাডি হিসাবে ধরা যায় তাহলে বলতে হবে কোভিড ১৯ মোকাবিলা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর মত সব বিষয়েই আমাদের রাজনৈতিক সমাজ বিভ্রান্ত।

Written by SNS Kolkata | May 8, 2020 3:45 pm

নোবেল লরিয়েট ও অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। (File Photo: IANS)

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই সহজ সমাধান রেখেছিলেন যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসাবে দরকার এক ঘটি জল ও ডেটল।

কিন্তু মঙ্গলবার তিনি এই সহজ প্রস্তাবের অনেক উর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক সমাজের উদ্দেশে একটা গুরুত্বপুর্ণ বার্তা দিয়েছেন যা শুধু ভারত বা তার বর্তমান দেশ নয় বাকি বিশ্বের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

যে রাজনৈতিক সমাজ শুধুমাত্র লকডাউন ছাড়া কিছু ভাবতে পারছে তাদের উদ্দেশে অভিজিতের যুক্তি করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় একজন শক্তিশালী নেতা প্রয়োজন, এই ধারণা বিপর্যয়কর হয়ে উঠবে।

তিনি কোভিড ১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসক সমাজের ভূমিকার মতোই কোভিড ১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে। তিনি কার্যত শক্তিশালী নেতার তত্ত্ব খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, কেউ যদি এই তত্ত্ব বিশ্বাস করে তাহলে তাকে এটা বলবার সময় এসেছে যে তার ধারণা ভ্রান্ত।

ভারতকে যদি কেসস্টাডি হিসাবে ধরা যায় তাহলে বলতে হবে কোভিড ১৯ মোকাবিলা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর মত সব বিষয়েই আমাদের রাজনৈতিক সমাজ বিভ্রান্ত। তাঁর মতে, ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় বিলুপ সংখ্যক মানুষের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার চেয়েও এবারে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর সমস্যা আরও বড় আকার ধারণ করেছে।

এই নিয়ে শাসন ব্যবস্থার মধ্যেই একটা বিভ্রান্তি রয়ে গেছে, যার দায় কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কেউই এড়াতে পারে না। রাজ্য সরকারগুলি ও আরও নীচ পর্যায়ের সরকারগুলির (পঞ্চায়েত ইত্যাদি) ওপর তার গুরুত্ব আরোপ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিশ্চয়তাকেই তুলে ধরছে।

১৯৮০-এর দশকে বামেদের পুরোধা কর্মসুচি পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েতিরাজ কালের স্রোতে যে আজ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে তা অবশ্য ভিন্ন কথা। আমাদের রাজনৈতিক প্রভুরা যে এখন অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছেন সেটা ভালো কথা।

কিন্তু তিনি চাহিদা-ভিত্তিক ভানাকে পূরণ করার প্রয়াস গ্রহণের যে কথা বলেছেন তার কোনও চিহ্ন কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে না, বা দেখা গেলেও তা খুবই সামান্য। তাই হয়ত গ্রাম বাংলায় রেশন দোকানগুলি হিংসার শিকার হচ্ছে। নোবেল পুরস্কারজয়ী তাঁর স্ত্রী এসথার ডাফলোর সঙ্গে মিলিতভাবে তিনি যে ‘পুওর ইকনোমিকস’ রচনা করেছেন তার নানা যুক্তিই প্রতিধ্বনিত হয়েছে তাঁর কথায়।

তাই সরকারের উৎসাহবর্ধক প্যাকেজের পাশাপাশি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নীচের ৬০ শতাংশ মানুষকে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করার কথা বলেছেন। শক্তিশালী নেতারা ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম বলে যে ধারণা প্রচার করা হচ্ছে তিনি তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এই দুই দেশ সব কিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। দুই দেশের দুই শক্তিশালী নেতা এমন একটা ভান করছেন যেন তারা সব কিছুই বোঝেন। কিন্তু প্রতিদিন তাঁরা যা বলছে সবই হাস্যকর। ব্রাজিলের জায়ের বোলসোনারোর কায়দাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সংক্রমণ রোধক ইঞ্জেকশন’ ও ‘এটা শুধুমাত্র ফ্ল’ এসব কথা বলে হাসির খোরাপ হয়েছেন।

তাই নানা ধরনের দেউলিয়াপনা এখন এড়িয়ে যাওয়ার সময় এসেছে বলে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর আরেকটি প্রস্তাব হল চাহিদা ও ঘাটতির কথা মাথায় রেখে মানুষের হাতে কিছু টাকা তুলে দাও যা, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। অর্থনৈতিক লকডাউন তো অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। তাই তাঁর এইসব প্রস্তাব যথাযোগ্য বলেই গণ্য হবে বলে আশা করা যায়।