সাঁড়াশি আক্রমণ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথ নেওয়ার পরই করােনার দ্বিতীয় ঢেউ মােকাবিলায় এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দিয়ে শুরু করেছেন।

Written by SNS Kolkata | May 12, 2021 6:22 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথ নেওয়ার পরই করােনার দ্বিতীয় ঢেউ মােকাবিলায় এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দিয়ে শুরু করেছেন। প্রথমেই তিনি লােকাল ট্রেনগুলির চলাচল বাতিল করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি ঘােষণা করেছেন রাজ্যের সকল হাসপাতাল ও নার্সিংহােমগুলিতে চল্লিশ শতাংশ শয্যা বৃদ্ধি করা হবে। এরফলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা কুড়ি হাজার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ত্রিশ হাজার। 

পশ্চিমবঙ্গে করােনার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মােকাবিলায় তথা চিকিৎসার কারণে এমন ঘােষণা জরুরি ছিল। শয্যার অভাবে আক্রান্তদের হাসপাতালের প্রতীক্ষালয়ের মেঝেতে বা বেঞ্চিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যা সত্যিই বেদনাদায়ক। রাজ্যে রােগীর যত্ন না নেওয়ার বিষয়টি এখন হাসপাতালগুলিতে নিয়মে পরিণত হয়েছে তার সাফাই দিতেও স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা যায় না। মানবতার প্রতি এমন অবমাননাকে দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে হাসপাতালের শয্যার অভাবের সঙ্গে প্রতিষেধকের অমিলের ঘটনা। 

আরও আক্ষেপের কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তার চিঠির জবাব দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। সমস্যা আরও জটিল আকার নিয়েছে বলে তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, রাজ্যের অক্সিজেনের বরাদ্দ সরবরাহ অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবস্থার চরম সঙ্কটকালে এমন কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন আচরণে কোনও মুখ্যমন্ত্রীই চুপ থাকতে পারেন না। এব্যাপারে অবিলম্বে অনুসন্ধান করে কেন্দ্রকে রাজ্যের জন্য প্রাপ্য বরাদ্দ অক্সিজেন সরবরাহ রাজ্যকে পাঠাতে হবে। কারণ প্রয়ােজন কারও মর্জির ওপর নির্ভর করে অপেক্ষা করবে না। 

তিনি সঠিক প্রশ্ন করেছেন, কেন কেন্দ্রীয় সরকার অক্সিজেনের সরাহ স্বাভাবিক না করে মানুষকে বিশেষত কমবয়সী যুবকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কেন কেন্দ্র ত্রিশ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের মানুষকে বিনা পয়সায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে না, যেখানে বিশ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সংসদ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এমন সঙ্কটকালে অতিরিক্ত দুই হাজার চিকিৎসক ও সমসংখ্যক নার্স নিয়ােগেরও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তৃতীয় বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের একাজে নিয়ােগের তিনি বিকল্প ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন। কেরল সরকার মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে এমন ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই নিয়েছে এবং সফল হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। 

লােকাল ট্রেনের চলাচলের ফলে সংক্রমণ যে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছিল তা বলাই বাহুল্য। আর মানুষের অবিমিশ্ৰকারিতা-মুখােশ না পরা, বা দূরত্ব না রাখাতেই সংক্রমণ যে বেশি বেশি করে ছড়িয়েছে না বললেও চলে। কিন্তু লােকাল ট্রেনের মতাে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বন্ধ করায় মানুষ চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে বাধ্য। কিন্তু মারণ সংক্রমণ এড়াতে ট্রেন বন্ধ করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। সম্পূর্ণ লকডাউন করা অত্যন্ত জরুরি। 

মেট্রোরেল তার পঞ্চাশ শতাংশ ট্রেন পরিষেবা বাতিল করেছে। এতেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হতে বাধ্য। কিন্তু মানুষ বিশেষত দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ খুবই অসুবিধায় পড়বেন এটা মানতেই হবে। তাদের সমস্যা দূর করতে সরকারকে অতিরিক্ত কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।