বেকারদের জন্য মোদী সরকারের খুবই দরদ। বছরে কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সামান্য পূরণ না হলেও ক্ষমতার কুর্সিতে দীর্ঘদিন থেকে যেতে পারেন। দুর্বল, অসহায় বেকারবাহিনীকে সামনে রেখেই ক্ষমতালোভী এবং ক্ষমতাসীন নেতারা যখন তখন যা-খুশি বলে পার পেয়ে যেতে পারেন। তবু ভয় থাকে। তাই নিত্য নতুন কায়দায় নতুন মোড়কে হাজির করেন নতুন প্রতিশ্রুতি। মোদী সরকারের তরফে এমনই সর্বশেষ চাকচিক্যময় প্রতিশ্রুতি হল প্রধানমন্ত্রী ইন্টার্নশিপ স্কিম, (পিএমআইএস)। এই বহুচর্চিত ল্যান্ডমার্ক ইন্টার্নশিপ স্কিম দেশের ৭৪৫টি জেলার জন্য উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল ২ ডিসেম্বর। ঠিক ছিল এই প্রকল্পের মাধ্যমে যুবরা উন্নত মানের প্রশিক্ষণে যোগ দেবেন। পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের এক কোটি যুবক-যুবতীকে তাঁদের যোগ্যতার নিরিখে কর্মদক্ষ করে তোলা হবে।
স্কিমটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে টিভিতে, কাগজে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার এমন তুঙ্গে তোলা হল যা সাম্প্রতিককালে অভূতপূর্ব। সব মিলিয়ে যুব শ্রেণি যখন বড় আশায় বুক বেঁধে রয়েছে, তখনই ঠান্ডা জল ঢেলে দেওয়া হল তাতে। কেননা, নির্দিষ্ট দিনে পিএমআইএস চালু করতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকারের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের সূত্রে বলা হল, স্কিমটি অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হল। তবে এই স্থগিতাদেশ কবে উঠবে, আশায় আশায় বসে থাকা বেকার যুবরা সত্যিই কবে প্রশিক্ষণ পর্বে প্রবেশাধিকার পাবেন, তাও জানানো হয়নি। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড সহ চার রাজ্যের বিধানসভার যুব সমাজের ভোট নিজেদের ঝুলিতে আনতেই শাসক দল এই কৌশল নিয়েছিল।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ২৩ জুলাই বাজেট ভাষণে বলা হয়েছিল, ৩ অক্টোবর এই সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। তা নেওয়ার কথা ছিল ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। সময়সীমা পরে বাড়িয়ে করা হয় ১৫ তারিখ। সব মিলিয়ে আবেদন জমা পড়েছে সাড়ে ৬ লক্ষাধিক। ঘোষণা করা হয়েছিল যে পাইলট ফেজে মোট ২৪টি ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ২৫ হাজার যুবক-যুবতী ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন। যে সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁরা প্রশিক্ষণ পাবেন তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্যাস ও শক্তি, ধাতু ও খনি, গাড়ি, ব্যাঙ্কিং ও এনবিএফসি, ভ্রমণ ও পর্যটন ইত্যাদি। ইন্টার্নশিপের সুযোগ দাতা শীর্ষ সংস্থাগুলির মধ্যে নাম রয়েছে মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, টিসিএস, এলঅ্যান্ডটি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, মারুতি সুজুকি, টেক মাহিন্দ্রা, ওএনজিসি, বাজাজ ফিনান্স, আইশার মোটর, ম্যাক্স লাইফ ইন্সুরেন্স, মুথুট ফিনান্স, শ্রীরাম ফিনান্স, জুবিল্যান্ট ফুডওয়ার্কস প্রভৃতি।
ইন্টার্নশিপের পর ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, পরিকাঠামো ও কনস্ট্রাকশন, আইটি ও সফটওয়্যার, খাদ্য শিল্প (এপএমসিজি) এবং টেলিকম ক্ষেত্রে চাকরি লাভের প্রশ্নে প্রশিক্ষিণ লাভের রসঙ্গে ট্রেনিরা আপাতত পাবেন প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা স্টাইপেন্ড। এই উদ্যোগে শামিল শ’তিনেক কোম্পানি দেবে ৫০০ টাকা করে এবং বাকি ৪,৫০০ টাকা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। এজন্য সরকার মোট ২ লক্ষাধিক কোটি টাকা খরচ করবে। এই উদ্যোগে শামিল হওয়ার জন্য দেশের সেরা ৫০০ কোম্পানিকে সরকার আহ্বান জানায়। কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) বাবদ কোম্পানিগুলির খরচ বিচার করেই এই ভলান্টারি পাটিসিপেশনে তাদের আহ্বানে জানানো হয়।
আড়াই বছর আগে ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি দেবেন বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ২০২২-এর অক্টোবর থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লাগাতার হয়েছে ‘রোজগার মেলা’। কিন্তু পরে আবিষ্কৃত হয় যে, এর মাধ্যমে কোনও অতিরিক্ত চাকরি দেয়া হয়নি। চিরাচরিত প্রথায় সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র বাড়িতে না পাঠিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তা দেওয়া হয়েছিল রোজগার মেলা বসিয়ে। মোদী সরকার ফের একবার প্রকাশ করল যে, কাজকর্ম নয়, প্রচার সর্বস্বতায় চলে তার সরকার। তার জন্য প্রয়োজনে বেকারদের নিয়ে খেলতেও তাঁর দ্বিধা নেই।