• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

পাহাড় রক্ষায় ভাবতে হবে আমাদেরও

ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ২৭ শতাংশজুড়ে রয়েছে পর্বতমালা। গাছপালা এবং প্রাণিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। ভাষা ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়ের আবাসস্থলও এগুলো। তবে পর্বতগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধুঁকছে। তাই তাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য 'আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস' পালন করা গুরুত্বপূর্ণ।

ফাইল চিত্র

হীরক কর

প্রকৃতির অপরূপ দান পাহাড়। পর্বত সুরক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়। তাই পাহাড়ের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আজ পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’। কেননা, আজ ১১ ডিসেম্বর।

Advertisement

প্রতিবছর ১১ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও স্থায়ী ভবিষ্যতকে সামনে রেখে জাতিসংঘ ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বরকে “আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৬ সাল থেকে জাপানে এই দিবসটি উদযাপনে রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে।

Advertisement

পৃথিবীর প্রায় ২২ শতাংশই পার্বত্য অঞ্চল। এ অঞ্চলে পৃথিবীর প্রায় এক-দশমাংশ মানুষের বাস । এবং ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পানীয় জলের উৎস পাহাড় । আর ভারত তো পর্বত ময়। উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ছাড়াও মাঝে আরাবল্লী আর বিন্ধ্য পর্বত। আছে সাতপুরা পর্বতমালা । পশ্চিমে আরব সাগরের তীর ধরে পশ্চিমঘাট, পূর্বে বঙ্গোপসাগরের পাড় বরাবর পূর্বঘাট পর্বতমালা। আরও আছে খাসি বা জয়ন্তীর মত পাহাড়। পশ্চিমবঙ্গের শুশুনিয়া, অযোধ্যা, বিহারী নাথের মত পাহাড়ের কথা কে না জানে। দার্জিলিংয়ের পাহাড় তো বাঙালির প্রিয় ডেস্টিনেশন। সেখানে প্রতিনিয়ত অফবিট গন্তব্য আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে।

পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। পর্বতমালা, নদ-নদী, বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এ অঞ্চলকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ।
পর্বত আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশের বাস পর্বতে। পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হটস্পট এবং বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহকারীর উৎস বলা হয় পর্বতকে। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো, আমাদের জীবনে পর্বতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। বিশ্বের বহু মানুষের জীবিকা পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। সেই কারণে পর্বত পর্যটনকে টিকিয়ে রাখা বহু মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পর্বত পর্যটন যেমন বহু মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে; তেমনই দারিদ্র্য দূর করে, সামাজিক মেলবন্ধন ঘটায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। পর্যটনের মাধ্যমে প্রকৃতি, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া যায়। পর্বত পর্যটন স্থানীয় হস্তশিল্প, কারুশিল্প, উৎসবকে বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে। বহু মানুষই পাহাড়ে বেড়াতে যেতে ভালবাসেন। তাঁদের জন্য আজকের দিনটি গুরুত্বপূর্ণ।নিয়মিত পাহাড়ে গেলে যেমন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা তৈরি হয়, তেমনই মন উদার হয়। যাঁরা পাহাড়ে বেড়াতে যান, তাঁদের দায়িত্ব হল প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা কোনওভাবেই কাম্য নয়। দার্জিলিং-এ প্রাত:ভ্রমণে বেড়িয়ে দেখেছি পুরসভা নয়, স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা নিজেরাই রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করছেন। এলিট মহিলারা প্লাস্টিক কুড়িয়ে পাহাড়কে সাফসুতরো করছেন। যাদের সঙ্গে একসময় প্রায়ই দেখা হত ‘জিমখানা ক্লাবে’। ওরা যথেষ্ট সচেতন। সচেতন হতে হবে দু’দিনের জন্য পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া আমাদেরও।

মুখ্যমন্ত্রীর কথা মত পাহাড় মোটেও হাসছে না। হ্যাঁ, ঠিকই দার্জিলিং, কালিম্পং -এর পাহাড়ে এখন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন স্তিমিত। সেই উগ্রপন্থা বা লাগাতার বনধের রাজনীতি নেই। কিন্তু এই নেই-য়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও অনেক কিছু নেই। ধরুন আমরা যে গ্রামে কাজ করি সেই গ্রাম ‘দূরখোলা’ লাভা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার। তার আশেপাশে একটিও স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া যাবে না । ওই গ্রামে কারোর কিছু হলে ছুড়তে হবে কালিম্পং সদর হাসপাতালে। আর দার্জিলিং এবং কালিংপং হাসপাতালের অবস্থা তথৈবচ। পাহাড়ের বহু জায়গায় স্কুল নেই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ৬-৭ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে পড়তে যেতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ । রাস্তার জন্যই রবীন্দ্রনাথের মংপুতে যেতে গায়ে জ্বর আসে। জায়গায় জায়গায় হিলকার্ট রোড খারাপ। বিভিন্ন গ্রামে লোডশেডিং নিত্য ঘটনা। ফলে অনেক সময় পাম্পে জল তোলা যায় না। পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও বহু গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা বিদ্যমান। তাই, পাহাড়ের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পুনরায় জেগে উঠছে গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্ন। তাঁরা জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা এবং তাঁর রাজনৈতিক দলকে তৃণমূলেরই শাখা সংগঠন বলে মনে করেন। মানে একই সিক্কার উল্টোপিঠ। তাঁদের ধারণা, তৃণমূলের মতই ‘ ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম)-র সর্বেসর্বা শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, পাহাড় এখনও হেসে ওঠে নি। পাথরে ফুল ফোটে নি।

ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ২৭ শতাংশজুড়ে রয়েছে পর্বতমালা। গাছপালা এবং প্রাণিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। ভাষা ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়ের আবাসস্থলও এগুলো। তবে পর্বতগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধুঁকছে। তাই তাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’ পালন করা গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের পার্বত্যাঞ্চলেও প্রায়ই পাহাড় কাটার খবর আসে। পাহাড় জঙ্গল কেটে তৈরি করা হয়েছে হোটেল -রিসোর্ট। অযোধ্যা পাহাড়ের একাংশ কেটে বিরাট বিরাট প্রাসাদ সম হোটেল তৈরি করা হচ্ছে। খয়েড়বেরা ড্যামের কাছে রাজনৈতিক নেতাদের অঙ্গুলি হেলনে ফরেস্টেরই জমিতে অবৈধ ভাবে তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট। তাতে বাধা দিতে গিয়ে অপরাধী হয়েছেন বাঘমুন্ডীর বিডিও। বন‌ বিভাগের জমি দখল হয়ে গেছে বলে বিস্তারিত জানিয়ে জেলাশাসককে চিঠি লিখেছেন পুরুলিয়ার ডিএফও। জেলাশাসক উল্টে বিডিও-র ওপর হম্বিতম্বি করেছেন। কেননা, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতার চাপ, ওই রিসোর্ট করতে দিতে হবে। স্থানীয়রা জঙ্গল ও জমি রক্ষা আন্দোলন করেছেন।

তাতেও শেষ রক্ষা হয় নি। যা খুবই উদ্বেগজনক। দার্জিলিং- কালিম্পং -এর পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে বিলাসবহুল রিসোর্ট। সঙ্গে সুইমিং পুল। যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে হোটেল এবং হোমস্টে। কোথাও কোথাও পাইন গাছের জঙ্গল কাটা পড়েছে। খোঁজ করলে দেখা যাবে যার অধিকাংশই বেআইনি।

পাহাড় কাটার ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, ভূমি ধসের ঘটনাও ঘটছে। সবচেয়ে বড় কথা, পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাছাড়া, পাহাড় পর্বত ধ্বংসের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে, পরিবেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কীভাবে ক্ষইতে থাকা পার্বত্য-প্রকৃতিকে ভিতর থেকে রক্ষা করা যায় তার সমাধান বের করাটাও এখন আমাদের মত পাহাড়-জঙ্গল নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর বড় লক্ষ্য।

মানুষের জীবনে পর্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর মোট স্থলভাগের এক চতুর্থাংশের চেয়েও বেশি প্রায় ২৭ শতাংশ জায়গা জুড়ে আছে বিস্তৃত পর্বতরাশি। এ পর্বতরাশি থেকে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছেন পৃথিবীর ২২ শতাংশ মানুষ। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যুগের পর যুগ পর্বত হতে আহরিত সম্পদ দ্বারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে।

পর্বতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে সারাবিশ্বে পর্বত দিবস পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিকভাবে পর্বত দিবস উদযাপন করা বেশিদিন আগের কথা নয়। ১৮৩৮ সালে পর্বত দিবস প্রথম পালন করার আভাস পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট হোলিওক কলেজের ছাত্ররা ঐ অঞ্চলের পর্বতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ক্লাস বর্জন করে হোলিওক পর্বতের দিকে যাত্রা শুরু করেন। পরে ১৮৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কলেজ পর্বত দিবস উদযাপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের জুনিয়েতা কলেজ তাদের পর্বত দিবসের ঘোষণা করে ১৮৯৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমনিভাবে পর্বত দিবস পালন করা শুরু করে। জনজীবনে পর্বতের গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা অনুধাবন করে ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতি বছর ১১ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা হয়। সেই প্রথম ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর সারা পৃথিবীতে ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’ পালিত হয় ।

পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ স্থল, প্রাণী এবং গাছপালাও পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের আরেকটি ভূমিকা খাদ্যের সংস্থান। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য শস্যের মধ্যে ছয়টি পাহাড়ে জন্মে।‌২০৩০ সালের মধ্যে পর্বত ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার করা-র মাধ্যমে পাহাড়ের ল্যান্ডস্কেপগুলোকে পুনরুজ্জীবিত এবং রক্ষা করাসহ পৃথিবীর ৩০ শতাংশ ভূমি, মহাসাগর, উপকূলীয় অঞ্চল এবং অভ্যন্তরীণ পানীয় জল রক্ষা করার মতো আশা সঞ্চারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং জল সরবরাহ পরিষেবা থেকে শুরু করে মাটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংরক্ষণ পর্যন্ত, পর্বত আমাদের জীবন এবং জীবিকার অবলম্বন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাহাড়কে অতিরিক্ত শোষণ আমাদের মহিমান্বিত পর্বতগুলোকে বিপন্ন করে তুলেছে । ফলে পাহাড়ে বসবাসকারীদের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে পড়েছে। পাহাড়ের মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রদের মধ্যে রয়েছে। তাঁদের এই বিপন্নতা নিয়ে বেঁচে থাকা আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পার্বত্য সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের কঠোর পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মোকাবিলা করতে, দারিদ্র্য হ্রাস করতে এবং পাহাড়ী অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা বা পুনরুদ্ধার করার জন্য নিজেরাই সমাধান তৈরি করেছে। “আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস ২০২৪”-এর লক্ষ্য হল উদ্ভাবনী সমাধান, অভিযোজন কৌশলকে উৎসাহিত করা, এবং স্থায়ী ভবিষ্যতের জন্য তরুণদের ক্ষমতায়ন করা।

যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন পাহাড়ে পরিবেশগত চাপকে বাড়িয়ে দেয়, তাই স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে এবং দুর্বলতা হ্রাস করার জন্য অভিযোজন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। পার্বত্য বাস্তুতন্ত্র এবং মানুষদের জন্য উপযোগী অভিযোজন কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের জন্য বাস্তুতন্ত্র-ভিত্তিক পন্থা এবং আদিবাসী জ্ঞান ব্যবস্থার একীকরণের মতো সমাধান।

পর্বত সমাধানের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে তরুণদের সক্রিয়, অর্থবহ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তরুণরা জলবায়ু কর্ম, লিঙ্গ সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, উদ্ভাবন, সংস্কৃতির প্রচার এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্বতগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে প্রায়শ স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাহত হচ্ছে। যার দরুন মানুষকে প্রতিনিয়ত জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন জলের প্রবাহকে সঙ্কটের মুখে ফেলেছে । দ্রুত ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা পাহাড়ের বিভিন্ন প্রজাতি এবং এই বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল মানুষদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করতে বাধ্য করছে। বসতি বা অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করা, পর্বতের খাড়া ঢালে কৃষিকাজ করায় প্রতিনিয়ত মাটির ক্ষয় হচ্ছে এবং এর ফলে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা আবাসস্থলগুলো প্রায়শই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাটি অবক্ষয়ের কারণে নিচের দিকে প্রবাহিত জলের গুণমানকে বিনষ্ট করছে। এভাবে ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে পাহাড়ী উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাবে । স্থানীয় পর্বত প্রজাতির প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বিলুপ্তির মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা পৃথিবীর পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক সঙ্কট জনক।

রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদও সম্প্রতি স্থায়ী পর্বত উন্নয়নের ত্রিবার্ষিক রেজোলিউশনে ২০২৩-২০২৭ “পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে পাঁচ বছরের কর্মসূচি” ঘোষণা করেছে। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হল পাহাড়ের জন্য অনুদান সহায়তা এবং বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা। “সবুজ” অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির বিকাশ, পার্বত্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার প্রক্রিয়া তৈরি করা । স্থায়ী পর্বত উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশ ঘটানো এই কর্মসূচির একটি উদ্দেশ্য। পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ প্রতিটি সেক্টরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দিকটি নিয়েও খুব বেশি ভাবা দরকার। শুধুমাত্র ‘সরকার ‘ নয়; ভাবতে হবে আমাদেরও। তবেই পাথরে ফুটবে ফুল ।

Advertisement