মােদি ম্যাজিক উধাও

বিজেপি একই ভুল বারবার করছে, যে ভূল কংগ্রেসের মজ্জাতেও রয়েছে। সেটা হল অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ।

Written by SNS Kolkata | December 27, 2019 8:00 am

নরেন্দ্র মোদি (Photo: IANS)

ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনের রায় থেকে গুরুত্বপুর্ণ শিক্ষা হল, শুধুমাত্র মােদি-শাহ ক্যারিশমার ওপর নির্ভর করে বিজেপি রাজ্যগুলির নির্বাচন জিততে পারবে না। ২০১৯-এর লােকসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের সময় বিজেপি-আজসু জোট ঝাড়খণ্ডে ১৪টি লােকসভা আসনের মধ্যে ১২টিতে জিতেছিল, কিন্তু সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে তাদের শােচনীয় হাল হয়েছে। স্থানীয় কারণ ও অ-উপজাতি মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে ক্ষোভের কারণে এই ফল হয়ে থাকতে পারে। তবু নাগরিকত্ব নিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থা এবং বেহাল অর্থনীতির প্রশ্নে দেশবাসীর মনােভাব এই নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে।

ইঙ্গিতটা অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু পথ সংশােধনের পরিবর্তে গেরুয়া দল ভেবেই নিয়েছিল তাদের জোড়া ট্রাম্প কার্ড নরেন্দ্র মােদি ও অমিত শাহই নির্বাচন উতরে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঝাড়খণ্ডে ১৯টি জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন এবং তাঁরা তিন তালাক, ৩৭০ ধারা, অযােধ্যায় রামমন্দির ও নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের মতাে নানা জাতীয় বিষয় নিয়েই বক্তব্য রেখেছেন। নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের যারা বিরােধিতা করেছেন তাঁদের কড়া সমালােচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পােশাক দিয়েই বিরােধকারীদের চেনা যায়। আর অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দেন যে, চার মাসের মধ্যেই আকাশচুম্বী রামমন্দির নির্মিত হবে। কিন্তু এসব কথা রাজ্যের ভােটদাতাদের মনে দাগ কাটেনি, যে রাজ্য সম্প্রতি অনাহারে মৃত্যুর জন্য সংবাদে উঠে এসেছে।

ভােটদাতাদের অসন্তোষের আরেকটি বড় কারণ হল, উপজাতি অধ্যুষিত এই রাজ্যে অরণ্যের অধিকার আইন রূপায়ণে শ্লথ গতি। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিজেপির খারাপ ফলের পর ঝাড়খণ্ডের রায় বিভেদমূলক বিষয়গুলি সম্পর্কে ভােটারদের ক্লান্তিবােধের পরিচয় পাওয়া গেছে। অ-উপজাতি ভােটকে এককাট্টা করে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য বিজেপির গেমপ্ল্যান কাজে আসেনি, কারণ বিরােধী জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোট উপজাতি ও অ-উপজাতি উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য শাখার অন্তর্দ্বন্দ্বকে শীর্ষ নেতৃত্ব আমল দেয়নি, কারণ তাদের ধারণা ছিল মােদি ম্যাজিকেই সাফল্য আসবে। দলীয় নেতৃত্ব ব্যর্থতার জন্য রাজ্য শাখার ওপর দায় চাপিয়েছে। পুরনাে শরিক আজসুর সঙ্গে আঁতাত করতে ব্যর্থতার জন্যও রাজ্য শাখাকে দায়ী করা হয়েছে।

বিজেপি একই ভুল বারবার করছে, যে ভূল কংগ্রেসের মজ্জাতেও রয়েছে। সেটা হল অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ। সব সিদ্ধান্তই যদি দলের হাইকম্যান্ড নেয় তাহলে রাজ্য নেতাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযােগ আর কি থাকে? পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কংগ্রেস জিতেছে, কারণ সেসব শক্তিশালী রাজ্য নেতৃত্ব রয়েছে। দিল্লি থেকে নেতারা উড়ে এসে টিকিট বণ্টনের মতাে খুটিনাটি। বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন, স্থানীয় নেতাদের কথা শুনবেন না, তাহলে তাে বিপর্যয় ঘটবেই, যা বিজেপির ক্ষেত্রে ঘটেছে। ২০১৯-এর লােকসভা নির্বাচনে চমকপ্রদ সাফল্যের পর সারা দেশে বিজেপির অস্তিত্ব লঘু হতে শুরু করেছে। দলের মােদি-ম্যাজিক ফর্মুলাতেও আর কাজ হচ্ছে না।