‘বাংলা’ নামে অ্যালার্জি

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে কোনও ইস্যু,দাবিদাওয়ার প্রশ্ন উঠলেই কেন্দ্রীয় সরকার মাথা চুলকোতে শুরু করে।ন্যায্য বা অন্যায্য,তা নিয়ে গবেষণা চলে।

Written by SNS New Delhi | July 9, 2019 5:33 pm

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

কেউ যদি সােজা জিনিস বাঁকা করে দেখে ,তাহলে অবশ্য বলার কিছু থাকে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে কোনও ইস্যু,দাবিদাওয়ার প্রশ্ন উঠলেই কেন্দ্রীয় সরকার মাথা চুলকোতে শুরু করে।ন্যায্য বা অন্যায্য,তা নিয়ে গবেষণা চলে।যদি ন্যায্য হয় তাহলে কী করে সময়ের স্রোতে তা ফেলে রাখা যায় তার উপায় খোঁজা হয়।সােজা কথায় পশ্চিমবঙ্গের ফাইলটা যদি স্তুপীকৃত ফাইলের নীচে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়,তা হলে তাতে যেমন ধূলাে জমবে না,আবার তা চোখের সামনেই থাকবে না।তা নিয়ে কোনও আশু সিদ্ধান্ত নেওয়ার গরজও কমে যাবে।মনে আসার তাে কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

যেমন পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন ইস্যু।কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অফিসে ফাইলের চাপে দমবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে আজ দীর্ঘদিন।নতুন নাম হবে ‘বাংলা’। পাশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’।বাংলা ভাগ হয়ে পূর্ব বাংলা আর পশ্চিম বাংলা হল।এর সঙ্গে ইতিহাস জড়িত।পূর্ব বাংলা স্বাধীন বাংলাদেশ।সুতরাং পশ্চিমবাংলা থেকে যদি পশ্চিম কথাটি বাদ দেওয়া যায় এবং শুধু বাংলা থাকে তাহলে ক্ষতি কী ?এপার বাংলার নাম হবে ‘বাংলা ’–কী সুন্দর হবে দুইয়ের অবস্থান।

২০১৮ সালে ২১ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।সুতরাং রাজনৈতিক কোনও মতভেদ নেই।সবদলের নেতৃবৃন্দের সমর্থনেই “বাংলা” নাম রাখা হয়।পরের কাজটি কেন্দ্রীয় সরকারের।এই বাংলা নামের সম্মতি জানাতে কেন্দ্রকে কোনও কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না – কোনও মহলের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার ব্যাপার নেই।শুধু এই নাম রাখতে গেলে সংবিধান সংশােধনের জন্য একটি বিল সংসদে আনতে হবে।এটা কী এমন কোনও কাজ যে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে ? তাহলে ফেলে রাখা কেন ?মজার ব্যাপার,এই নাম পরিবর্তনের ইস্যুটি পুরােপুরি খারিজ করেনি কেন্দ্রের মােদি সরকার।শুধু ফেলে রাখা হয়েছে।কিন্তু কেন ?পশ্চিমবাংলার ব্যাপার বলে?তা না হলে কেন বিষয়টি নিয়ে এত গড়িমসি?এর আগে ওড়িশা, বেঙ্গালুরু , মুম্বই , চেন্নাই- এই রাজ্যগুলির নামের পরিবর্তন হয়েছে।সুতরাং শুধু পশ্চিমবাংলার নামেই বদল করার কথা বলা হয়েছে এমন তাে নয়।তাছাড়া কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও তো অনেক জায়গার নাম পরিবর্তন করে ইতিহাসকে মুছে দিয়েছে।মােগলসরাই রেল স্টেশনের নাম পাল্টানাে হয়েছে।এমনকী পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য তাজমহলের নামও পাল্টানাের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

রাজ্য সরকার মাঝেমাঝেই খােঁজ নেয়—কী হল নাম পরিবর্তনের?উত্তর নেই।কেন্দ্র যদি বােবা হয়ে বসে থাকে তাহলে কী করা যায় ?এবার প্রশ্নটি উঠল।রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এক সাংসদের প্রশ্নের জবাবে বললেন,নাম পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।যা করতে হলে সংবিধান সংশােধন বিল আনতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদরাও এ ব্যাপারে যে একটি সদর্থক ভূমিকা পালন করবেন,তাও দেখা যায় না।এখানেই সেই অর্থহীন রাজনীতি।উল্টে বিজেপি সাংসদরা নাম বদলের বিরােধিতা করেছেন।তাঁদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ নাম পাল্টানো মানেই ইতিহাসকে পাল্টানাে।সুতরাং যে নাম  আছে,তা রাখারই পক্ষপাতী তাঁরা।বিরােধিতা করতে হবে বলেই কি এই  বিরােধিতা ?এ বঙ্গের বিশিষ্টজনেরাও পশ্চিমবাংলা থেকে শুধু বাংলা হলে ভাল হয় বলে মতপ্রকাশ করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী হাল ছাড়েননি।তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সম্প্রতি একটি চিঠি লিখে এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি সহানুভূতি সহকারে বিচার বিবেচনা করতে অনুরােধ করেছেন।তিনি বলেছেন এই বাংলা নামের সঙ্গে রাজ্যবাসীর আবেগ জড়িয়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী এই নাম পরিবর্তন নিয়ে গত তিন-চার বছর হল,রাজ্য সরকার যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার বিবরণ দিয়েছেন এই চিঠিতে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলার সঙ্গে নেতাজি ,মহাত্মা গান্ধি , বিদ্যাসাগর , রামমােহন প্রমুখ মনীষীর নাম জড়িয়ে আছে।বাংলা ভাষা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম ভাষা। অনেকেই অবশ্য মনে করেন কেন্দ্রে বিজেপি সরকার যতদিন আছে,ততদিন এই নাম পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই।কারণ বিষয়টি নিয়ে কোনও জটিলতা না থাকলেও তা ফেলে রাখা হয়েছে।এর থেকেই এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দৃষ্টিভঙ্গি বােঝা যায়।

দ্বিতীয়বার নরেন্দ্র মােদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর,মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকার ঘটেনি।প্রধানমন্ত্রীর ডাকা দুটি বৈঠকে যােগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও তিনি যাননি। সুতরাং ভবিষ্যতে যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হবে,তখন নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলােচনা হতে পারে।সরকারিভাবে বাংলা নামের স্বীকৃতি না পেলেও,অনেকেই কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গ না লিখে বাংলা লেখেন। মুখ্যমন্ত্রীও পশ্চিমবঙ্গ না বলে বাংলা নামটিই ব্যবহার করেন বেশি।কিন্তু সরকারি কাজে তাে বাংলা লেখা যাবে না – পশ্চিমবঙ্গই লিখতে হবে।মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠির কোনও প্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা জানার জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে। শহরের কিছু বুদ্ধিজীবী অবশ্য মনে করেন,এই নাম পরিবর্তনের পক্ষে রাজ্যব্যাপী একটি আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত,তাতে যদি কেন্দ্রীয় সরকারের টনক নড়ে।