• facebook
  • twitter
Thursday, 13 February, 2025

পড়ছে টাকা, উঠছে ডলার

মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হবার লক্ষণ দেখা দেওয়ায়, বেকারি একটু কমায় এবং সুদের হার না কমার সম্ভাবনায় প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নি আমেরিকায় পাড়ি দিচ্ছে।

ফাইল চিত্র

টাকার ধারাবাহিক পতন রুখতে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে টাকার দাম পতনে জ্বালানিরও মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। কেন্দ্রের শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের দেওয়া পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার প্রকাশে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার হলো ২.৩৭ শতংশ। গত দুই মাসে পাইকারি ক্ষেত্রে এটাই সর্বাধিক মূল্যবৃদ্ধি। এতে জ্বালানি পেট্রোল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যসের মূল্যবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। তা হলো ৬.২ শতাংশ। চলতি জানুয়ারি মাসেই ফের জ্বালানির দাম কম করে ৩ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। মাস পার হলেই কেন্দ্রীয় বাজেট। এখনও অর্থনীতির এই বেহাল অবস্থা নিয়ে মোদী সরকারের তরফে বিকশিত ভারতের কোনও বার্তা পাওয়া যায়নি।

রীতিমতো পাল্লা দিয়ে শেয়ার বাজারে যেমন ধস নেমে চলেছে, তেমনই ডলারের নিরিখে অবাধ পতন ঘটে চলেছে ভারতীয় মুদ্রা টাকার। বস্তুত, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শেয়ার বাজারে এবং টাকার মূল্যে যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে, তা বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং রক্তক্ষরণের মাত্রা যেন বেড়েই চলেছে।

মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্ব কালে টাকার মূল্যের পতন নিয়ে যিনি ক্রমাগত আক্রমণ শানাতেন এবং ব্যঙ্গবিদ্রূপ করতেন, সেই নরেন্দ্র মোদীর মুখে এখন কুলুপ। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে ডলারের বিনিময় মূল্য যখন ছিল ৫৮ টাকা তখন নির্বাচনী প্রচারে এই মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে ডলারের মূল্য ৪০ টাকায় নামিয়ে আনবেন। তাঁর দল ক্ষমতায় এসেছে, তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু টাকার মূল্য বাড়েনি। বরং যে কোনও সময়ে টাকার মূল্য পতনের গতিকে ছাড়িয়ে মোদী জমানায় ডলারের বিনিময়মূল্য সর্বকালীন রেকর্ড সৃষ্টি করে ৮৬.৫৯ টাকা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ মনমোহন সিংয়ের জমানায় টাকার মূল্য পতন যতটা হয়েছে মোদী জমানায় সেটা দ্বিগুণের কাছাকাছি হয়ে গেছে। এরপর কোন লজ্জায় টাকার মূল্য নিয়ে তিনি কথা বলবেন। অতএব মৌনীবাবা হয়ে থাকাই লজ্জা নিবারণের সেরা পথ।

ভারতের শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীরা লাগাতার লগ্নি তুলে নিয়ে যাওয়ার ফলে বাজারে ডলারের দাম বাড়ছে। মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হবার লক্ষণ দেখা দেওয়ায়, বেকারি একটু কমায় এবং সুদের হার না কমার সম্ভাবনায় প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নি আমেরিকায় পাড়ি দিচ্ছে। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। উল্টো দিকে ভারতের অর্থনীতি বৃদ্ধির গতি ঢিলে হয়ে যাওয়ায়, কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায়, মানুষের রুজি এবং ক্রয় ক্ষমতা না বাড়ায়, বাজারে পণ্য পরিষেবার চাহিদা বৃদ্ধি না হওয়ার ফলে টাকার মূল্যে প্রবল নেতিবাচক চাপ তৈরি হচ্ছে। রুশ তেলের উপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ফলে সস্তায় রুশ তেলের বদলে অন্যত্র থেকে অনেক বেশি দামে তেল আমদানি করতে হবে। লাগবে অনেক বিদেশি মুদ্রা। তেমনই ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারতের আমদানি ব্যয়ও অনেক বেড়ে যাবে। তাতে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়বে। যত ঘাটতি বাড়বে, ততো বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয়ের ভাণ্ডারে টান পড়বে। ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের অনেক কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। ফলে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যও বেড়ে যাবে। সেটা দেশের মূল্যবৃদ্ধিকে উসকে দেবে। মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়লে সুদের হার কমানোর ঝুঁকি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নেবে না। টাকার মূল্য পতনে বিদেশে ভ্রমণ এবং শিক্ষার জন্য যাওয়ার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

আবার মূল্য যত কমবে ততোই মূলধনী বাজারে বিদেশি লগ্নি কমে যাবে। সেটা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশারই ইঙ্গিত দেয়।
নরেন্দ্র মোদীর সরকার টাকার ধারাবাহিক পতন রুখতে ব্যর্থ। এতে ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। মূল্যবৃদ্ধির বাড়তি বোঝা টানতে হচ্ছে। এই সংকট সামলাতে কেন্দ্রকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। মোদী কতই বিজ্ঞাপনে রঙচঙে ছবি প্রকাশ করে বিকশিত ভারতের প্রচার করুন না কেন, বাস্তব হলো চড়া দামে মানুষের কোমর ভেঙে যাচ্ছে। তবু মোদী নিশ্চুপ। টাকার দাম পতনে অর্থনীতির বিপর্যয় বলে আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সাময়িক বিষয় বলে দায় সারছেন।