মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ব্যয়বহুল এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান কেনার কি খুব প্রয়োজন ছিল ভারতের? এ ব্যাপারে কি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কিংবা সশস্ত্র বাহিনীর পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ভারত-মার্কিন বেশ কয়েকটি চুক্তির কথা প্রকাশ্যে আসার পর এইসব প্রশ্ন উঠছে। এর মধ্যে নতুনভাবে আগামী ১০ বছরে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণসহ উৎপাদনকারী হওয়ার চুক্তি রয়েছে। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, নয়াদিল্লিকে কয়েক লক্ষ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করবে, যার মধ্যে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও আছে।
ওই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের অনেক ত্রুটি আছে এবং বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কেউ কেউ একে ‘জঞ্জাল’ আবার কেউ কেউ একে ‘অকেজো’ বলেও মন্তব্য করেছেন। ওই যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে মোদীর। কিন্তু মোদী সরকার একবারও ভারতের সুরক্ষার দিকটি বিবেচনার মধ্যে আনেনি। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের প্রতি ঘণ্টা উড়ানের খরচ ২৮ লক্ষ টাকা। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই বিমান, যা কিনতে খরচ প্রতিটির ক্ষেত্রে ৯৬৮ কোটি টাকা। প্রতি ঘণ্টা উড়ানের জন্য ২৮ লক্ষ টাকা খরচের কথা কি ভেবেছেন মোদী? এ ব্যাপারে ভারতীয় বায়ুসেনা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে কি? এই যুদ্ধবিমান কেনার আগে খরচের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে, না কি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? দেশের স্বার্থ না ভেবে কি ট্রাম্প প্রশাসনের স্বার্থ দেখা হয়েছে? ভারতীয় বায়ুসেনা কি এই যুদ্ধবিমান কিনতে চেয়েছে? এ ব্যাপারে মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থা পেন্টাগনের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হয়েছে কি? ওই রিপোর্টে স্পষ্টতই এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানের কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার ২৪ দিন পর দেখা হল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। ২০১৯ সালে ‘হাউডি ট্রাম্প’-এর মুখ্য উদ্যোক্তা নরেন্দ্র মোদীর এবারে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ডাক না পাওয়ার বেদনা কিছুটা হলেও মোচন হল অবশেষে। মোদী এই বৈঠক শেষে ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (এমএজিএ) স্লোগান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘মেক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেইন’ (এমআইজিএ) স্লোগান উপস্থিত করেন এবং উভয়ের মধ্যে সমন্বয়কে ‘সমৃদ্ধির জন্য মেগা অংশীদারিত্ব’ হিসাবে বর্ণনা করেন। মোদী দু’দিনের সফরে গিয়েছিলেন এমন সময়ে যখন ট্রাম্প আদেশ জারি করেছেন, ভারত সহ সকল মার্কিন বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর ব্যাপক পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে হবে। যদিও দুই নেতা একে অপরের পিঠ চাপড়েছেন, তবে একই সঙ্গে ট্রাম্প ভারতকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চ বাণিজ্য শুল্ক রাখার জন্য সমালোচনা করে এটিকে ‘বড় সমস্যা’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
রুষ্ট ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য নরেন্দ্র মোদী মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক কমাতে, অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয়দের ফিরিয়ে নিতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির কোম্পানি ‘লকহিড মার্টিন’ থেকে সামরিক যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫ স্টেলথ’ কেনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পকে। আলোচনা হয়েছে আরও কয়েকটি বিষয়ে, যার মধ্যে অন্যতম আমেরিকা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা। চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল ও গ্যাস কেনার বার্ষিক পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার করতে হবে। এখন ভারত মুখ্যত রাশিয়া, ইরান সহ অন্যান্য দেশ থেকেই জ্বালানি আমদানি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনার অর্থ জ্বালানির ক্রয়মূল্য বেড়ে যাওয়া। কারণ ডলারের অনুপাতে টাকার মূল্য তলানিতে এসে ঠেকেছে মোদী সরকারের দাক্ষিণ্যে। এখন ট্রাম্প সে দেশের তেল কোম্পানিগুলির মুনাফা বাড়াবার লক্ষ্যে আবার অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল আমদানি করতে বাধ্য করছেন ভারতকে। আর অনুগত বাধ্য মোদী দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ‘জো হুকুম’ বলে তা মেনে এলেন কার স্বার্থে?
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় এসেই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে ২০ লক্ষ ভারতীয়কে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ভারতীয়কে ইতিমধ্যে বন্দিশিবিরে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত অমানবিকভাবে এঁদের হাতে পায়ে শিকল পরিয়ে মালবাহী বিমানে পশুদের মতো ফেরত পাঠানো হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের এই কাজে অপমানিত না হয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর উল্টে সাফাই গেয়েছেন আমেরিকার পক্ষে। যা আদানির কৃপাধন্য মোদী আহ্লাদিত অন্য কারণে। কারণ মার্কিন মুলুকে ট্রাম্প আসার পর প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতা বলে আদানির বিরুদ্ধে সে দেশে চলা ঘুষের মামলা স্থগিত করে দিয়েছেন ট্রাম্প। নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রাপ্তি এটাই। সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে ট্রাম্পের পশুর মতো আচরণেও মোদীর হেলদোল নেই। দেশের সম্মান বিকিয়ে দিচ্ছেন মোদী। এরপর হয়তো দেশটাকেও বিক্রি করে দেবেন। সাধু সাবধান!