• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

মোদীর মুখে চুনকালি

যাঁরা দেশে ফিরলেন, তাঁদের মধ্যে ৩০ জন পাঞ্জাব, ৩৩ জন হরিয়ানা ও গুজরাত এবং ৩ জন মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দু’জনের আলিঙ্গনাবদ্ধ ছবি সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। নিজেকে তখন থেকেই ‘বিশ্বগুরু’ বলে প্রচার শুরু করেছিলেন মোদী। এবার এক ধাক্কায় মোদীকে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের মানুষ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে দেখতে পেলেন, আমেরিকা থেকে একটি মালবাহী সামরিক বিমানে অমৃতসরের শ্রীগুরু রামদাসজি বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হলো ১০৪ জন ভারতীয়কে। মার্কিন সরকারের মতে, তাঁরা ‘অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী’। এই কারণে টেক্সাস শহর থেকে তাঁদের বিমানে তুলে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অভিবাসীদের মধ্যে যাঁরা দেশে ফিরলেন, তাঁদের মধ্যে ৩০ জন পাঞ্জাব, ৩৩ জন হরিয়ানা ও গুজরাত এবং ৩ জন মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। মোট ৪৮ জনের বয়স ২৫ বছরের কম এবং ফিরে আসা অভিবাসীদের মধ্যে ২৫ জন মহিলা এবং ১২টি শিশু। এমনকি চার বছরের একটি শিশুকেও ওই বিমানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। হাতে হাতকড়া ও পায়ে শেকলের বেড়ি পরিয়ে এঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ বা নিন্দা করা দূরঅস্ত, বিদেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ এর দায় এড়িয়ে একে ‘স্বাভাবিক’ বলেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

মানবাধিকারের কোনও বালাই না করে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, ‘ভিনদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ জন্য মানবাধিকার বিধি মান্য করার বাধ্যবাধকতা নেই সরকারের’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রসংঘ যে মানবাধিকারের কথা ঘোষণা করেছে, তাতে মানবাধিকার বিচার করতে জাতি, ধর্ম, দেশ ইত্যাদি পরিচয়ের কোনও মাপকাঠি হতে পারে না। মানুষ মাত্রই মানবাধিকারের অধিকারী। কিন্তু ট্রাম্প সরকারের তা মানতে কোনও দায় নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শক্ত কথা বলার মতো সাহস নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু সে সাহস দেখিয়েছে ছোট্ট একটি দেশ কলম্বিয়া। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো সেই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কলম্বিয়ার নাগরিকদের শৃঙ্খলিত অবস্থায় ফেরত নিতে রাজি হননি। আমেরিকার চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করেছেন এবং মার্কিন সামরিক বিমানটিকে তাদের মাটিতে অবতরণ করতে দেননি। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, কলম্বিয়ার নাগরিকদের অসামরিক বিমানে মানুষের মর্যাদা সহকারে ফিরিয়ে আনা হবে।

‘অবৈধ’ চিহ্নিত করে ভারত সহ তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশের অভিবাসীদের ফেরানোর ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এই অভিবাসীরাই বছরের পর বছর মেহনত করেছেন, মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রেখেছেন। এই অভিবাসীদেরই এখন মার্কিন দুর্দশার কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন ট্রাম্প। প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিযায়ী শ্রমিককে ‘অবৈধ’ অভিবাসী হিসাবে চিহ্নিত করে মার্কিন সেনা পরিচালিত বিভিন্ন বন্দি শিবিরে কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে। নারী, পুরুষ, শিশু, প্রতিবন্ধী নির্বিশেষে তাদের হাতকড়া পরিয়ে ধাপে ধাপে ‘দেশছাড়া’ করার পরিকল্পনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মানবাধিকারের কোনও বালাই না করে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, অভিবাসীদের যেভাবেই হোক ফেরত পাঠাবে আমেরিকা।

বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখোজ্জ্বল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এই প্রচার লাগাতার করে আসছে বিজেপি। দেশের গৌরববৃদ্ধির পক্ষে ব্যক্তি মোদী কোনও ভূমিকা পালন করতে পারেন, এমন আশা না থাকলেও আন্তর্জাতিক মহলে দেশের সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর দায়িত্বের কথা তিনি ভুলে যেতে পারেন না। এমন প্রত্যাশা ও দাবি দেশবাসী করতেই পারেন। কিন্তু ন্যূনতম সেটুকু করতেও মোদী ও তাঁর সরকার ব্যর্থ।