মেধা শক্তিতে ভারত চিরকালই অন্য দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু সেই মেধা দেশের মধ্যে ধরে রাখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই। মেধাবী ভারতীয়রা যোগ্য সম্মান ও আর্থিক সুবিধা এদেশে না পাওয়ায় সাতের দশক থেকেই বিদেশে চলে যাচ্ছে। জীবিকার তাগিদে বিদেশে গিয়ে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে থাকা ভারতীয় সংখ্যা আজ রাষ্ট্রসঙ্ঘেরও নজর কেড়েছে। ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘের অর্থনীতি ও সামাজিক দপ্তরের প্রকাশিত রিপোর্টে আন্তর্জাতিক পরিযায়ীর সংখ্যা বলা হয়েছে মোট ২৭ কোটি ২০ লক্ষ।
এর মধ্যে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়র সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ। ভারতের পরেই রয়েছে মেক্সিকো (১ কোটি ১৮ লক্ষ)। তারপর চিন, ১ কোটি ৭ লক্ষ। এরপর রাশিয়া, ১ কোটি ৫ লক্ষ। নীচের দিকে রয়েছে সিরিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ওই তিন দেশের বিদেশে বসবাসকারী বাসিন্দা যথাক্রমে ৮২ লক্ষ, ৭৮ লক্ষ ও ৬৩ লক্ষ।
Advertisement
রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় মোট আন্তর্জাতিক পরিযায়ীর সংখ্যা বেড়েছে ৫ কোটি। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ। আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর আশ্রয়চ্যুত মানুষের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।
Advertisement
ভারতে কাজের সূত্রে অন্য দেশের অনেকে আসছেন। আবার ভারতেরও অনেকে কাজের সূত্রে অন্য দেশে থাকছেন। উৎস ও গন্তব্য, দু’দিক থেকেই বিচার করা হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিযায়ীদের গতিবিধি। তবে ওই রিপোর্টে তাঁদের অভিবাসী বলা হয়নি। অভিধানিক অর্থে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন যাঁরা, তাঁদের বলা হয় অভিবাসী। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পরিযায়ীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মহিলা ও কিশোরী। এমন মানুষের প্রতি ৭ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ২০ বছরের কম।
জন্মসূত্রে ভারতে রয়েছেন অন্য দেশের ৫১ লক্ষ মানুষ। ২০১৫ সালের তুলনায় ভারতে এমন আন্তর্জাতিক পরিযায়ীর সংখ্যা গত বছর ১ লক্ষ কমে গিয়েছিল। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫২ লক্ষ। রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে, ভারতে রয়েছেন এমন আন্তর্জাতিক পরিযায়ীদের বেশির ভাগের উৎস দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপাল। এঁদের মধ্যে ২ লক্ষ ৭ হাজার শরণার্থীও আছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এমন শরণার্থী রয়েছেন। ভারতে থাকা এমন আন্তর্জাতিক পরিযায়ীদের মধ্যে ৪ শতাংশ শরণার্থী। তবে ভারতে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে এমন বিদেশি মাত্র ০.৪ শতাংশ। ২০১০ সাল থেকে এই অনুপাত প্রায় একই রয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরিযায়ীদের অধিকাংশই থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই সংখ্যা মোট পরিযায়ীদের ১৯ শতাংশ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ওই রিপোর্ট থেকে আরও জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক পরিযায়ীদের অর্ধেক যাচ্ছেন, ১০টি দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরই সকলের নজর জার্মানি ও সৌদি আরব। এই দুই দেশে ১.৩ কোটি আন্তর্জাতিক পরিযায়ী আছেন। এরপরই রয়েছে রাশিয়া (১.২ কোটি) এবং ব্রিটেন (১ কোটি)। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে আছেন ৯০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন প্রায় ৮০ লক্ষ করে। ইতালিতে এই সংখ্যা ৬০ লক্ষ। মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও মোট জনসংখ্যার মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিযায়ীদের অনুপাতের বিচারে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
সারা বিশ্বের পরিস্থিতি বোঝার জন্য আন্তর্জাতিক পরিযায়ীও তাঁদের গতিবিধি বোঝা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নিজের জন্মভূমি দেশের ক্ষেত্রে তাঁরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই যে দেশে থাকছেন, সেখানেও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিরাপদে ও নির্দিষ্ট নিয়মবিধির আওতায় এমন পরিযায়ীরা যাতে কাজ করতে পারেন তা দেখা জরুরি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘সহনশীল উন্নয়নের লক্ষ্যের’ সঙ্গে তাঁদের অন্য দেশে কাজে যাওয়ার নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশ সাযুজ্যপূর্ণ। বিদেশি হটানোর নামে অভিবাসী বা আন্তর্জাতিক পরিযায়ী তাড়ানোর নীতি কখনই উন্নয়নের পক্ষে ইতিবাচক নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রশাসনকেও আজ তা ভাবতে হবে।
Advertisement



