• facebook
  • twitter
Tuesday, 15 July, 2025

রেগার অন্তিমযাত্রা

কর্মহীন দেশে গ্রামের জীবনরেখা বলা যায় রেগাকে

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় দফার সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ। ১ ফেব্রুয়ারি পেশ হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট। প্রতি বছর বাজেটে দেশে বেকারির হার বেড়ে চলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শ্রমিক সংগঠনগুলি কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানিয়ে আসছে। তাতে কোনও আমলই দেয়নি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বাজারে কাজ নেই, উল্টে ছাঁটাই চলছে। ফলে মানুষের আয় কমে গেছে। এর জেরে শিল্পের বাজারে সঙ্কট।

বাজেটের আগে আলোচনায় কেন্দ্রী অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে ডেপুটেশন দিয়ে বণিকসভা সিআইআই কেন্দ্রকেই কাজের সংস্থান করে আয় বাড়িয়ে বাজার চাঙ্গা করার দাবি জানিয়েছে। ফলে মোদী সরকারের বাজেটে এবার কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হবে বলে প্রচার শুরু করে দিয়েছে কর্পোরেট মিডিয়া। তবে সেই কর্মসংস্থানে উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে ‘রেগা’ প্রকল্প। এবারের বাজেটেও রেগায় গুরুত্ব দেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেই। গত বাজেটেও কমেছিল রেগায় বরাদ্দ। এই বরাদ্দ কমানোর প্রতিবাদে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রকের যুক্তি ছিল রেগা চাহিদা-নির্ভর প্রকল্প। বরাদ্দ কমে যাওয়ার পিছনে চাহিদা কম হওয়ার যুক্তি টেনেছিল মোদী সরকার। কিন্তু যেটা বলা হয়নি, রেগা তালিকার দেদার নাম ছাঁটা হয়েছে। গোটা মোদী জমানায় ছাঁটা হয়েছে রেগা তালিকায় থাকা ৯ কোটি কর্মপ্রার্থীর নাম। এতো কর্মপ্রার্থীর নাম বাদ দেওয়ার ফলেই চাহিদা কম বলে দেখানো সম্ভব হয়েছে। চাহিদা মতো কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ কমানোর এই কায়দা নজিরবিহীন।

দ্বিতীয় দফায় মোদী সরকার কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রোডাকশন লিঙ্ক ইনসেনটিভ (পিএলআই) বা উৎপাদন ভিত্তিক ভরতুকি চালু করেছিল। কর্পোরেট সংস্থার এই প্রকল্পের ভরতুকি মিললেও এতে কর্মসংস্থান বিশেষ কিছু বাড়েনি। তবে, তৃতীয় দফার মোদী সরকার রেগায় বরাদ্দ না বাড়িয়ে পিএলআই প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বলে খবর। মোদী বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাতে যেমন কোনও কর্মসংস্থানে গুণগত পরিবর্তন হয়নি, তেমনই এবারেও নতুন কোনও উদ্যোগ থাকছে না বলেই খবর। রেগাকে কার্যত বাতিলের তালিকায় তুলে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চলছে তা এবারেও অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

রেগায় বাজেট বরাদ্দ কমানো নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনা করে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, গত বছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ সালে রেগায় বরাদ্দ কমেছে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.২৬ শতাংশ। যেখানে বিশ্বব্যাঙ্ক গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ এই রেগা প্রকল্পে জিডিপি-র ১.৭ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত বলে জানিয়েছে। সেখানে বাড়ানো তো দূরের কথা, বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে শুধু বরাদ্দ কমানো নয়, দেখা গেছে যে অর্থ বরাদ্দ হয় তার ২০ শতাংশ অর্থ খরচ হয় প্রকল্পের গত বছরের খরচের দায় মেটাতে। উল্লেখ্য, রেগা প্রকল্পে চলতি জানুয়ারি মাসে ৯.৩১ কোটি রেগা কর্মপ্রার্থীর কাজ মিলেছে। এই কর্মপ্রার্থীর ৭৫ শতাংশ মহিলা।

এদিকে কর্মহীন দেশে গ্রামের জীবনরেখা বলা যায় রেগাকে। এই প্রকল্পকে খয়রাতি প্রকল্প বলে চিহ্নিত করেছেন মোদী। তাই পরিকল্পিতভাবে রেগা তালিকার নাম কেটে বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে দেখা গিয়েছে রেগা তালিকার কর্মপ্রার্থীদের নাম কোনও কিছু না জানিয়েই বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত রেগা তালিকা থেকে ৪ কোটি জব কার্ডের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর নতুন জব কার্ড হয়েছে মাত্র ১.২ কোটি। ১৫ শতাংশ জব কার্ড কোনও কারণ ছাড়াই বাদ দেওয়া হয়েছে। নথিভুক্ত নাম বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে আরটিআই আইনে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

জানতে চাওয়া হয়েছিল, এতো বিপুল নাম বাদ দেওয়া নিয়ে কারণ অনুসন্ধানে কোনও সমীক্ষা চালানো হয়েছে কিনা। জবাব এড়িয়ে এর দায় রাজ্য সরকারগুলির উপর চাপানোর চেষ্টা করে কেন্দ্র। কর্মহীন ভারতে কর্মসংস্থান প্রকল্প ‘রেগা’ এখন মোদীর কোপে। আসন্ন বাজেটেও এর থেকে উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই। রেগা প্রকল্পটিকেই আসলে তুলে দিতে চাইছে মোদী সরকার।