গাজায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিয়ে আলোচনা করতে মিশরের আল-শেখে এক আন্তর্জাতিক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানেই যোগ দিতে পশ্চিম এশিয়া সফর করেন ট্রাম্প। মিশরে যাওয়ার আগে ইজরায়েলের সংসদে ভাষণ দেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গাজায় সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে নিজের কৃতিত্বের দাবি জানিয়ে ‘যুদ্ধ মিটিয়ে দিলাম’ বলে বাগাড়ম্বর করেন ট্রাম্প। ‘গোটা দুনিয়ার সঙ্গে ইজরায়েল লড়তে পারবে না’ বলে সেদেশের পার্লামেন্টে দা3ঁড়িয়ে যখন ট্রাম্প এই ঘোষণা করেন, তখন ইজরায়েলের বামপন্থী সাংসদ আয়মান ওদেহ ও ওলেফ কাসিফ উঠে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের বিরোধিতায় সরব হন। ‘প্যালেস্তাইনকে আমেরিকার স্বীকৃতি দিতে হবে’ বলে তাঁরা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। গাজা গণহত্যায় মদত দেওয়ার জন্য সংসদ ভবনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিতির প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
স্বাধীন প্যালেস্তাইনের স্বীকৃতির দাবিতে ইজরায়েলের দুই বামপন্থী সাংসদ সরব হওয়া মাত্র তাঁদের উপর একদল উগ্র জায়নবাদী, দক্ষিণপন্থী সাংসদ ঝাঁপিয়ে পড়েন। চার-পাঁচজন মিলে ওই দুই বামপন্থী সাংসদকে কার্যত তাঁরা ধাক্কা দিয়ে সংসদ ভবন থেকে বের করে দেন। এই ঘটনার বিরোধিতা তো দূরের কথা, মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাহবা দেন ট্রাম্প। পরে বামপন্থী সাংসদ আয়মান ওদেহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষণ ভণ্ডুল করতে আসিনি। ন্যায় চাইতে এসেছিলাম। ইজরায়েলের পাশাপাশি স্বাধীন প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিলেই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। বেআইনি দখলদারি বন্ধ করতে হবে। ইজরায়েলের গণহত্যাকারী সরকারকে উৎখাত করতে হবে।’
এরই মধ্যে ইজরায়েলের সংসদে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য ওদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোটি কোটি ডলার অর্থ তছরুপ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ২০১৯-এ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে একটিতে বলা হয়, তিনি নাকি ব্যবসায়ীদের থেকে প্রায় ৭ লক্ষ শেকেল (১৮ লক্ষ টাকা) মূল্যের উপহার, শ্যাম্পেন ও চুরুট গ্রহণ করেছেন। এর দায়ে ইজরায়েলের সংবিধান অনুযায়ী ওদেশের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের তাঁকে বরখাস্ত করার কথা। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলায়, এই বিষয়ে আদালত রায় দেয়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে। খানিকটা সেই কারণেই কিছুতেই গাজায় সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হচ্ছিলেন না নেতানিয়াহু। সংঘর্ষ বন্ধ হলে তিনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না আশঙ্কা করছিলেন।
Advertisement
এদিকে ইজরায়েলের বিরোধী দলগুলি নেতানিয়াহুকে চাপে ফেলতে মুখিয়ে রয়েছে। বর্তমানে সংসদে শাসক দলের অবস্থাও টলমল। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যে কোনও মুহূর্তে অনাস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা করছেন বিরোধীরা। তবে বেনজিরভাবে নেতানিয়াহুর চেষ্টা করছেন বিরোধীরা। তবে বেনজিরভাবে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের জনপ্রতিনিধিদের কাছে ট্রাম্পের আর্জি, ‘ওঁকে ক্ষমা করে দিন। আমি ইজরায়েলের মাননীয় প্রেসিডেন্টকে বলেছি, এবারের জন্য ক্ষমা করে দিন। কয়েকটা চুরুট আর শ্যাম্পেন নিয়ে কার এত মাথাব্যথা।’
Advertisement
গাজায় সংঘর্ষ বিরতির কারিগর বলে দাবি করে নানা ফাঁপা হম্বিতম্বির মধ্যেই ইজরায়েলকে তাঁর অনুমোদিত সমঝোতা প্রস্তাব মানতেই হবে বলে নরম কথায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবু সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মদত দিয়ে গাজায় ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে ইজরায়েল। সরাসরি হামলা না করলেও গাজায় নানাভাবে অশান্তি তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে মদত জুগিয়ে চলেছে ইজরায়েল। গাজায় হামাস পরিচালিত প্রশাসনের নানা পরিকাঠামোয় তাদের দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। এই সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে— পপুলার ফোর্স, কাউন্টার টেররিজম স্ট্রাইক ফোর্স ও দোগমুশ গোষ্ঠী।
ট্রাম্পের সংঘর্ষ বিরতির শর্ত অনুসারে, শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে এক ‘আন্তর্জাতিক স্থিতি-রক্ষা বাহিনী’ মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত শহরের ৫৮ শতাংশ অঞ্চলে ইজরায়েলের সেনা রেখে দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। এই সমস্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা তাঁদের বাড়ি ফিরতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত ইজরায়েল এই সমস্ত অঞ্চল দখলে রাখবে। ট্রাম্প এই অনুমোদন দিতে দেরি করুক এমনটাই চাইছে ইজরায়েল। ট্রাম্পের ‘শান্তি প্রস্তাবের’ ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করেই ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের কায়দায় বেআইনি অসামরিক বসতি গড়ে গাজাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে ইজরায়েল, এমনটাই বলছেন পর্যবেক্ষকরা। গাজা দখল করে প্যালেস্তাইনকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। আর সে কাজে পরোক্ষভাবে মদত জুগিয়ে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
Advertisement



