সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। ভারতের প্রতিবেশী দেশ চিন রয়েছে ৭৬তম স্থানে। আর দুর্নীতিমুক্ত দেশের মাপকাঠিতে আরও তিন ধাপ নেমে গেছে ভারত। এক্ষেত্রে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ২০২৩ সালে ভারত ছিল ৯৩তম স্থানে। সম্প্রতি প্রকাশিত স্বচ্ছতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালে ভারতের অবস্থান নেমেছে ৯৬তম স্থানে। ওই রিপোর্টে দুর্নীতির ধারণা সূচক বা করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্সের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের ক্রমাঙ্ক নির্দেশ করা হয়েছে। সরকারি স্তরে দুর্নীতিকেই এই সূচকের মান নির্ধারণের জন্য বিবেচনা করা হয়।
সরকারি স্তরে দুর্নীতিতে ভারতের আরও তিন প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অনেক এগিয়ে আছে, যা মোদী সরকারের সান্ত্বনার বিষয় হতে পারে। ওই সূচকে বাংলাদেশ রয়েছে ১৪৯তম স্থানে, পাকিস্তান ১৩৫তম স্থানে এবং শ্রীলঙ্কা আছে ১২১তম স্থানে। ২০১৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় স্লোগান ছিল ‘সুশাসন সংকল্প, বিজেপি বিকল্প’। মোদী সরকারের আমলে সরকারি স্তরে দুর্নীতিমুক্ত দেশের মাপকাঠিতে ভারতের অবস্থানের অবনমন নিশ্চিতভাবেই সেই স্লোগানের অন্তঃসারশূন্যতাকেই সামনে নিয়ে এলো।
স্বচ্ছতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে বিশ্বের সমস্ত অংশে দুর্নীতিকে বিপজ্জনক সমস্যা বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, অনেক দেশ দুর্নীতির মোকাবিলায় উদ্যোগ নিলেও তা সামগ্রিকতার বিচারে একেবারেই উল্লেখযোগ্য নয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে ৩২টি দেশ তাদের দুর্নীতির মাত্রাকে তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে কমিয়ে আনতে পেরেছে। কিন্তু বাকি ১৪৮টি দেশে এক্ষেত্রে বিপুল কাজ বাকি। এই দেশগুলিতে দুর্নীতির ব্যাপকতা হয় একই মাত্রায় রয়ে গিয়েছে, অথবা দুর্নীতি বেড়েছে। তার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ওই সব দেশের কোটি কোটি মানুষের উপরে। দুর্নীতি তাদের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে, মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের কর্মসূচির রূপায়ণের সামনেও বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, দুর্নীতি।
গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে এবং পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দুর্বল অংশের মানুষকে রক্ষা করতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে, তা হয় চুরি হয়ে যাচ্ছে অথবা তার অপব্যবহার হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত দেশের মাপকাঠিতে যেসব দেশ পিছিয়ে আছে, তাদের অনেকেরই দুর্নীতি রুখে পরিবেশ বাঁচানোর কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও শক্তি আছে। কিন্তু তার সদ্ব্যবহার না করে ওইসব দেশের বেশি ভাগই জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবসায় যুক্ত কোম্পানিগুলির স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতি শুধু উন্নয়নের পথে বাধা নয়। এর জেরে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটছে, বাড়ছে অস্থিরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। দুর্নীতির মোকাবিলাকে প্রত্যেক দেশেরই বিশেষ ও দীর্ঘমেয়াদি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
দুর্নীতি নিয়ে কংগ্রেস সহ বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ করে যাওয়াটাই রুটিন প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু রাফাল থেকে সড়ক, বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সে ব্যাপারে নীরব থাকাটাই মোদীর পছন্দ। যদিও সেই অভিযোগ খাতায়-কলমে ধামাচাপা দেওয়া যায় না। এরই প্রতিফলন মিলেছে আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়। ১০০-র মধ্যে কোন দেশ কত নম্বর পাচ্ছে, তার ভিত্তিতে তৈরি হয় তালিকা। শূন্য পেলে সেই দেশ ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’। আর ১০০ পেলে ‘দুর্নীতিহীন’ বলে জানানো হয়। সংস্থার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মোদীর ভারত ক্রমশ কম নম্বর পেয়ে চলেছে। ২০২২ সালে সেই নম্বর আরও কম ৩৮। দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির প্রশ্নে মোদীর ভারত কখনওই সন্তোষজনক অবস্থায় নেই।