• facebook
  • twitter
Friday, 23 May, 2025

নিরুপায় মোদী

বিরোধীদের জাতি গণনার দাবিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে গেরুয়াবাহিনী।

মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী এবং অর্জুন সিং শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সংবিধানের ৯৩তম সংশোধন গৃহীত হওয়ায় ১৫(৫) নং ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলিত, আদিবাসী এবং ওবিসি পড়ুয়াদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়। তখন একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। পরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের দাবি তুলে মামলা হয়। সেই মামলা এখনও চলছে। তবে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন মনমোহন সিং সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, সরকার মনে করলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলিত, আদিবাসী এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এরপরে ওই বছরে লোকসভার ভোট হয় এবং বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে। গত ১১ বছর ধরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলিত, আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য সাংবিধানিকভাবে সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারলেও আইনে পরিণত না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলেই রয়েছে। দুঃখজনক হলো, মোদী সরকার এখনও এই বিষয়টিকে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সমাজের সবচেয়ে বঞ্চিত এবং শোষিত অংশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে না।

৫০ শতাংশ সংরক্ষণ হলো সামাজিক ন্যায়ের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এই ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে চলেছে বিরোধী দলগুলি। রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের চাপে কেন্দ্রীয় সরকার জাত গণনা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এর আগে রাহুল গান্ধী যখন জাত গণনার দাবি তুলেছিলেন, তখন মোদী এবং বিজেপি বাধা দিয়েছিল। ফলে বিজেপি কিংবা মোদী মোটেই জাতগণনার পক্ষে ছিল না, এটা স্পষ্ট। এতদিন মোদী জাত গণনাকে ‘পাপ’ এবং ‘শহুরে নকশাল ভাবনা’ বলে কটাক্ষ করে এসেছেন। এখন ভোল বদলে তিনি জাতগণনা ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন এটা ছাড়া উপায় নেই। ভয় পেয়ে জাত গণনায় রাজি হলেও কেন্দ্র এর সময়সীমা এবং পদ্ধতি বিষয়ে কিছুই জানায়নি।

অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া সাধারণ পড়ুয়াদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা এমনিতেই ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই বিজেপি যদি সাধারণের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নিতে পারে, তাহলে বঞ্চিত কিংবা শোষিত অংশের জন্য পারবে না কেন? গত লোকসভা ভোটের প্রচারে মোদীজি বলেছিলেন, এ হলো সমাজকে বিভাজনের চেষ্টা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জাতি গণনার দাবিকে ‘দেশকে টুকরো করার চেষ্টা’ বলেছিলেন। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘কাটেঙ্গে তো বাটেঙ্গে’। আরএসএসের ঘরের ছেলে নীতিন গড়করির নিদান ছিল, ‘যাঁরা এই নিয়ে রাজনীতি করছে তাঁদের লাথি মেরে বের করে দেওয়া উচিত।’ কিন্তু রাজনীতিতে ভোট বড় বালাই। চলতি বছরের শেষে বিহার বিধানসভার ভোট। দু’বছর পরে ভোট হবে উত্তরপ্রদেশে। এই দুই হিন্দিভাষী রাজ্যেই জাতপাতের অঙ্কে ভোটের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। জনগণনার সঙ্গে জাতিগণনার ঘোষণা হলেও কবে তা শুরু হবে, কবেই বা শেষ হবে— তা নিয়ে কিছু জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও শুরুই হয়নি। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের বাজেটে জনগণনার জন্য মাত্র ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখায় আশঙ্কা হচ্ছে, তবে কি জাতিগণনার গাজর ঝুলিয়ে বিহারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছে মোদীর দল? বিজেপি তথা আরএসএসের পাল্টি খাওয়ার নেপথ্যের কারণ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নানা মত। কিন্তু ঘটনা হল, বিরোধীদের জাতি গণনার দাবিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে গেরুয়াবাহিনী। খোদ অযোধ্যার আসনে মন্দির নির্মাণ করেও পরাজয় এড়ানো যায়নি। অন্যদিকে, বিহারে নীতীশ কুমারের সরকার আগেই জাতি গণনা শেষ করে ফেলেছে। কংগ্রেস শাসিত একাধিক রাজ্যেও জাতিগণনা হয়ে গিয়েছে বা শেষ হওয়ার পথে। এই অবস্থায় প্রথমে বিহার এবং পরে উত্তরপ্রদেশে জয় নিশ্চিত করতে হলে বিরোধীদের মুখের গ্রাস কাড়তে জাতি গণনার ঘোষণা ছাড়া অন্য পথ খোলা ছিল না বিজেপির কাছে।