হিংসার রাজনীতিকে ঘৃণা

ভারতের ঐক্য,সম্প্রীতি এবং সুমহান ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন জানালেন দেশের প্রথিতযশা,শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক এবং সাংবাদিকরা।

Written by SNS New Delhi | April 6, 2019 9:53 am

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি (Photo: IANS)

ঘৃণার রাজনীতি দূরে সরিয়ে রেখে ভারতের ঐক্য,সম্প্রীতি এবং সুমহান ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন জানালেন দেশের প্রথিতযশা,শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক এবং সাংবাদিকরা। সংখ্যায় ওঁরা দুশো জন, দেশে ভোটের নামে, রাজনীতির নামে, গণতন্ত্রের নামে এমন যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে আরো ঘটবে,তাতে বেদনাহত এবং বিস্ময়াভূত হয়ে আবেদনপত্রে সই করেছেন।তাঁরা আশা করেছেন, শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক এবং যাঁরা দেশে  একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে,সেই অশুভ শক্তির বিনাশ হবে।ভারতের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবকে যারা কালিমালিপ্ত করতে চাইছে, তারা যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।

এই আবেদনপত্রে সই করেছেন- অমিতাভ ঘোষ, অসিত চৌধুরী, রমিলা থাপার, রুক্মিণী ভাইয়া নায়ের, কিরণ নাগরকার,শশী দেশপান্ডে,নবনীতা দেবসেন সহ আরো অনেকে।

তাঁরা আবেদনে বলেছেন, দেশে এখন হিংসার রাজনীতি চলছে, চলছে বিরোধের রাজনীতি, ধর্ম জাতপাত নিয়ে অসহিষ্ণুতা এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদ স্বনির্ভর একটা অপচেষ্টা।এসবকে রুখতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে জনমত জাগ্রত করতে হবে।তাঁরা বলেছেন, সামনে সাধারণ নির্বাচন- শাসক দল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখন তাঁদের প্রার্থীদের হয়ে ভোট প্রচারে নেমেছেন।এই কাজে দলের নেতাকর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে যেভাবে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিয়েছেন,তা গর্হিত,নিন্দনীয় ।ঘৃণার রাজনীতি চলছে এবং মানুষের মনকে বিষাদ করে তোলা হচ্ছে। এর আশু অবসান হওয়া দরকার।তারা দেশের জনগণের কাছে আবেদন করেছেন,তাঁরা যেন ঘৃণার রাজনীতি পরিহার করে বিবেকের নির্দেশ মেনে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করেন।

এই লেখক,শিল্পী,সাহিত্যিকরা আবেদনপত্রে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু কোনও দল ও মতের সমর্থকরা তাদের কঠোর সমালোচনা করে ওই আবেদনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।তাঁরা জোরের সঙ্গে বলেছেন,ভারতে ভোট নিয়ে এমন কিছু ঘটছে না যাতে তাদের গেল গেল রব তুলতে হবে।নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার চলে,সেখানে নেতারা তাঁদের মনের কথা ব্যক্ত করেন।এতে দোষের কি দেখলেন তাঁরা?

শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কিন্তু মনে করেন, এই লেখকেরা উপযুক্ত সময়েই সরব হয়ে মানুষকে এই হিংসা ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছেন।ভোট বলেই যার মুখে যা আসবে তাই বলবে,এমন হওয়া উচিত নয়।আবেদনকারীদের অভিযোগ,ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে- অথচ দেশের সংবিধান ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। মুক্তচিন্তা, মুক্তমনের লেখার বিরুদ্ধে কিছু সুবিধাবাদী লোক এখন বিশেষভাবে সক্রিয়। যাঁরা ছবি নির্মাণ করেন, তার বিষয়বস্তু কারোর পছন্দ না হলেই তাঁদের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, ছবি প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।মানুষের স্বাধীন চিন্তাধারা আসছে, ক্ষমতাবানদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই তার উপর জোরজুলুম নেমে আসছে।

তাঁরা আশা করেন, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে- মানুষে মানুষে বিভেদ ঘুচবে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি থামবে,বিভেদের অবসান ঘটবে।যাঁরা হিংসা ছড়াচ্ছেন, ঘৃণার রাজনীতিতে মদত দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় যাঁরা আছেন তাঁরা কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন।সমাজের যাঁরা অবহেলিত, যাঁরা পিছিয়ে আছেন,তাঁদের অভাব অভিযোগের কিনারা হবে এবং এমন একদিন আসবে যখন তাঁরা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নাগাল পাবেন।সকলের জন্য কর্মসংস্থান,সকলের জন্য বাসস্থান এবং ভয়-ভীতি মুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে।তাহলেই গণতন্ত্রের বিকাশ হবে এবং ভারত আরো সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে।

বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের প্রচার এখন তুঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এখন প্রচারের আসরে।আজ প্রচারকালেই এমন সব বিষয় উত্থাপন করা হচ্ছে, এমন ব্যক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে, এমনভাবে হিংসার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর।সুতরাং এই সময়ে সুস্থ ও ভয়ভীতিমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য আবেদন কাজে দেবে বৈকি!