• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হাসিনা ফিরতে চান

শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর দাবি, প্রতিটি খুনের সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে চান। ই-মেলের মাধ্যমে সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা দ্বিধাহীন ভাবে বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই দেশে ফিরতে চাই, যদি সেখানে বৈধ সরকার থাকে, আইনশৃঙ্খলাজনিত সন্ত্রাস না থাকে, স্বাধীন মত, শাসনকার্য পরিচালনা করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। তখন থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। সেখান থেকে নানা বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের নানা অনৈতিক কাজের সমালোচনা করেছেন। আবার তিনি আওয়ামী লিগ কর্মীদের একতাবদ্ধ হয়ে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইও চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিকে বাংলাদ্শে বর্তমান সরকারের শাসনে যে অরাজকতা চলছে এবং বিস্তারিত বিবরণ দেন। তদারকি সরকারের প্রধান পাকিস্তানপন্থী এবং জামাইতে ইসলামি এবং মৌলবাদীদের চাপে পড়ে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে যার দিনক্ষণ এখনও সঠিকভাবে স্থির হয়নি, আওয়ামী লিগকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, যদি তাঁর দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া না হয়, তাহলে নির্বাচনই প্রহসনে পরিণত হবে। কারণ বাংলাদেশে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ আওয়ামি লিগের সমর্থক। তাঁরা নির্বাচনকে মেনে নেবে না— ভোট বয়কট করবে। এই প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, তাঁর দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা শুধু অন্যায়, অনৈতিক নয়, আত্মঘাতীও। সরকার যদি কার্যকর ব্যবস্থা চায় তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। আর সত্যিই যদি তা করা হয়, তাহলে সেই নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে না।

Advertisement

গত ১৫ মাস হল শেখ হাসিনা ভারতে আছেন— এখানে থেকেই তিনি বাংলাদেশে ইউনূস খানের অবৈধ সরকারের আমলে কী চলছে, তার সব খবর রাখেন। বাংলাদেশে শাসন বলে কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। ছোটবড় অনেক শিল্প সংস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার কর্মী এখন পথে বসে। কর্মসংস্থান দিনদিন সঙ্কুচিত হচ্ছে।

Advertisement

সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম অত্যাচার চলছে। তাদেরকে নিজ নিজ ধর্মপালনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়াশুনার বদলে রাজনীতি নিয়েই বেশি চর্চা ও আলোচনা চলছে। ছাত্রশ্রেণিও দ্বিধাবিভক্ত। তারা পড়াশোনা ছেড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছে।

শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর দাবি, প্রতিটি খুনের সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। তাহলেই সত্য উদঘাটিত হবে। আওয়ামী লিগকে দূরে সরিয়ে রেখে বাংলা থেকে নির্বাচন হলে, লিগের সমর্থকরা কোন দলের প্রার্থীদের ভোট দেবে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, ‘আওয়ামী লিগের ভোটদাতাদের অন্য কোনও দলকে সমর্থনের কথা বলছি না। তিনি আশা করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত হয়ই, তাহলে আওয়ামী লিগকে ভোটে অংশগ্রহণ করতে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ মুজিবের প্রতিষ্ঠিত দলকে ভুলে যায়নি।

দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা, কবি-সাহিত্যিকরাও চান না আওয়ামি লিগকে ভোটে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করা হোক। কারণ তাহলে লক্ষ লক্ষ আওয়ামী লিগ সমর্থকরা তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন এবং সেটা নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের সংসদের আসন সংখ্যা ৩০০। গত সাধারণ নির্বাচনকে এই দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গড়েছিল। তবে ওই দলের শাসনে অনেক অনৈতিক কাজ হয়েছে দেশের বিশিষ্ট জনেরাও মনে করেন। আর তার কারণেই এই সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছিল। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একটি স্বচ্ছ শাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেকের অভিযোগ, তিনি তাঁর পরিবারের স্বার্থ বেশি করে দেখেছেন, যা জনসাধারণ ভালোভবে নেননি। তাঁর দলের শীর্ষ নেতারা তা জানতেন। কিন্তু তা নিয়ে বলার সাহস পাননি।

বাংলাদেশে এখন ১২ কোটি ৬০ লক্ষ ভোটদাতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামি লিগের সমর্থক সংখ্যা বেশ বেশি। তাঁদের বাদ রেখে নির্বাচন হয় কী করে তাঁদের প্রশ্ন। বিশ্বের সব রাষ্ট্রই চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং সব প্রতিষ্ঠিত দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। অনেক দেশই আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিরুদ্ধে। যে দেশের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ আওয়ামি লিগের সমর্থক— সেই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা গণতন্ত্র পরিপন্থী। সবাই চায় বাংলাদেশে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ ভোটের পর গণতান্ত্রিক সরকার
প্রতিষ্ঠিত হোক।

Advertisement