• facebook
  • twitter
Wednesday, 20 August, 2025

কমছে বৃদ্ধির হার

গত অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে দেখা গিয়েছিল, অর্থনীতির অগ্রগতির গতিবেগ খুবই কম। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে।

প্রতীকী ছবি।

তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদী ২০২৪ সালে। কোভিড পরবর্তী সময়কালে সেই বছরেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল সর্বনিম্ন। গত চার বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার কখনও এতটা কমেনি। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বছর বা ২০২৪-২৫ সালে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মূলত, শিল্প-কারখানার উৎপাদনের শ্লথগতির ফলেই আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। বিগত বছরে কারখানার উৎপাদনে বৃদ্ধির হার মাত্র ৪.৫ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর বা ২০২৩-২৪-এ আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৯.২ শতাংশ। সে সময় কারখানার উৎপাদনে বৃদ্ধির হারও ১২.৩ শতাংশ ছিল।

গত অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে দেখা গিয়েছিল, অর্থনীতির অগ্রগতির গতিবেগ খুবই কম। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে। পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, সেই তুলনায় শেষ তিন মাস বা জানুয়ারি-মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু এই তিন মাসেও কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৪.৮ শতাংশে আটকে থেকেছে। এক বছর আগেও এই তিন মাসে কারখানার উৎপাদন ১১.৩ শতাংশ হারে বেড়েছিল। কারখানার উৎপাদনে এই ভাটার টান সার্বিকভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে টেনে নামিয়েছে। ফলে গোটা অর্থ বছরের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশেই থমকে গিয়েছে। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের প্রাথমিক অনুমান অবশ্য এমনটাই ছিল। কিন্তু বাস্তব হলো, কোভিডের বছর ২০২০-২১-এর পরে আর্থিক বৃদ্ধি এতখানি কম হয়নি।

সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, গৃহস্থের খরচ ২০২৪-২৫-এ ৭.২ শতাংশ হারে বেড়েছে। আগের বছরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৬ শতাংশ। কিন্তু যে মাপকাঠিতে নতুন লগ্নি মাপা হয়, সেই সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র মিলিয়ে নতুন সম্পদ বৃদ্ধির হার বিগত অর্থ বছরে ৭.১ শতাংশে নেমে এসেছে। যা তার আগের বছরে ছিল ৮.৮ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ যুক্তি দেখিয়েছেন, হতে পারে চার বছরে বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন। কিন্তু এখনও ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার বড় অর্থনীতিগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি। জানুয়ারি-মার্চে ৭.৪ শতাংশের আর্থিক বৃদ্ধি প্রমাণ করে, অর্থনীতির ইঞ্জিন এখনও জোর গতিতে ছুটছে। কারখানার উৎপাদনের করুণ দশা নিয়ে নাগেশ্বরণের যুক্তি, ‘কারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজ হয়েছে। তার ফল সময়ের সঙ্গে দেখা যাবে।’

বিরোধী কংগ্রেস দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ অবশ্য কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘কারখানার উৎপাদনের ছবি উদ্বেগজনক। সেই বাস্তব না মেনে নিয়ে সরকার এখন গল্প বানাচ্ছে। কারখানার উৎপাদন বাড়াতে ১১ বছর আগে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ চালু হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, এর ফল দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে আটকে থাকলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০৪৭-এ ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য কীভাবে পূরণ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গত আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, বিকশিত ভারত বা উন্নত অর্থনীতির জন্য দু’দশক ধরে টানা ৮ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি প্রয়োজন। নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম বলেছেন, ২০৪৭-এ দেশের জিডিপি ৩০ লক্ষ কোটি ডলার হতে হলে, আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। কারখানার উৎপাদনে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি প্রয়োজন। জিডিপি’র ২৫ শতাংশ কারখানা ক্ষেত্র থেকে আসতে হবে। এখন জিডিপি’র মাত্র ১৭ শতাংশের মতো কারখানা থেকে আসে।

সরকারের জন্য স্বস্তির কথা হলো, গোটা অর্থ বছরেই কৃষিক্ষেত্রের ছবি ভাল ছিল। অর্থ বছরের শেষ বেলায় নির্মাণ ক্ষেত্রেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। পরিষেবা ক্ষেত্রে গত অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.২ শতাংশ, যা আগের বছরের ৯ শতাংশের থেকে কম।

মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার মতে, জানুয়ারি-মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হারে যে গতি দেখা দিয়েছে, তা এপ্রিলেও অব্যাহত ছিল। তাঁর মতে, মূল্যবৃদ্ধির হার কমে এসেছে। ঋণে সুদের হার কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক বৃদ্ধি ও কম মূল্যবৃদ্ধির সময়কাল দেখা যাবে। এর সঙ্গে শহুরেও বেকারত্বের হার কমছে। নাগেশ্বরণের অবশ্য মত, চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৩ থেকে ৬.৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে।