প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা : আরব উপদ্বীপে বন্যা ও গাঙ্গেয় অববাহিকায় জলকষ্ট

Written by SNS May 10, 2024 1:11 pm

শোভনলাল চক্রবর্তী

‘চেরাপুঞ্জির থেকে/একখানি মেঘ ধার দিতে পার গোবি সাহারার বুকে?”— গত শতাব্দীর কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ঘুমের ঘোরে’ কবিতার এই প্রশ্ন যে আসলে একটি চ্যালেঞ্জ, সে-কথা বলে দেওয়ার দরকার হয় না৷ কিন্ত্ত, বহু-উদ্ধৃত এই স্পর্ধিত প্রশ্নটি যে স্বয়ং সূর্যের উদ্দেশেই ছুডে় দিয়েছিলেন অধুনা-বিস্মৃত এই কবি, তা হয়তো অনেকেই মনে রাখেননি৷ আজ, এই একুশ শতকের তৃতীয় দশকে হাজির থাকলে তিনি সবিস্ময়ে এবং সভয়ে দেখতে পেতেন যে ‘কিরণ-ঝাঁটার হিরণ-কাঠিতে কেন চোখে মার খোঁচা’ গোছের মৃদুমন্দ অভিযোগের তোয়াক্কা না করে সূর্যদেব তাঁর চ্যালেঞ্জটিকে বেমালুম উল্টে নিয়েছেন: গোবি সাহারার বুক থেকে অগ্নিবলয়কে তুলে এনে ফেলেছেন তাঁর সুজলা শ্যামলা জন্মভূমির বুকে৷

চৈত্রের মধ্যপর্ব থেকেই বঙ্গভূমি দারুণ অগ্নিবাণে জ্বলছে৷ গ্রীষ্মকালে আবহাওয়ার উত্তাপ বাড়বে, স্বাভাবিক৷ কিন্ত্ত পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া রাজস্থানের থেকে বেশি তপ্ত হয়ে উঠবে, এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলার কোনও উপায় নেই৷ ঋত্বিক ঘটক তাঁর ছবিতে একটি সংলাপ দিয়েছিলেন, “ব্রহ্মান্ড পুড়ছে৷ ” আজ ব্রহ্মাণ্ড, বাস্তবিকই, পুড়ছে৷ রূপকার্থে নয়, বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত তার পুডে় যাওয়ার হিসাব কষে চলেছেন এবং ক্রমাগত ঘোষণা করে চলেছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন তথা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ থেকে ভয়াবহতর দুঃসংবাদ৷ এই গ্রহে এর আগে, অন্তত গত পঞ্চাশ কোটি বছরের মধ্যে, পাঁচ বার বড় রকমের ‘এক্সটিংশন’ বা মহাপ্রলয় ঘটেছে, যে প্রলয়ে অতি অল্প সময়ের অবকাশে ধ্বংস হয় প্রাণিকুল-সহ প্রকৃতির এক বিরাট অংশ৷ কিন্ত্ত সেই ধ্বংসে গ্রহবাসীদের প্রত্যক্ষ বা সচেতন কোনও ভূমিকা ছিল না— যেমন, সাডে় ছ’কোটি বছর আগেকার পঞ্চম মহাপ্রলয়ে বিলুপ্ত ডাইনোসররা ছিল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার৷ কিন্ত্ত গত এক দশকের মধ্যে যে ষষ্ঠ ‘এক্সটিংশন’-এর আসন্ন বিভীষিকার চেতাবনি ক্রমশই বিরাট আকার ধারণ করছে, সেই প্রলয়ের পিছনে প্রধান দায়িত্ব এই পৃথিবীর একটি এবং একটা মাত্র প্রজাতির, তার নাম মানুষ৷

দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যতের কিছুমাত্র পরোয়া না করে এক দিকে তার সমস্ত সম্পদ যথেচ্ছ ভোগ করার ও অন্য দিকে সেই ভোগ থেকে সঞ্জাত উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনা তার মাটিতে, জলে ও হাওয়ায় ছুডে় ফেলার যে অতুল এবং অ-পূর্ব কীর্তি মানুষ চালিয়ে এসেছে, তার ফলে প্রকৃতি-পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত৷ জলবায়ু পরিবর্তন তারই পরিণাম, বিশ্বপৃথিবী ক্রমাগত অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হতে থাকার ঘটনা সেই পরিণামের অন্যতম প্রধান ও প্রকট রূপ৷ এই মুহূর্তে যে অ-স্বাভাবিক উত্তাপে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরা আক্ষরিক অর্থে তীব্র যন্ত্রণা ও তীব্রতর বিপদের সম্মুখীন, তা ওই বিশ্বব্যাপী সঙ্কটের অঙ্গ৷ ব্রহ্মাণ্ড পুড়লে ঘরও বাঁচবে না৷ আরব উপদ্বীপ অঞ্চলে শুষ্ক আবহাওয়ার জেরে ভারী বর্ষণ তো দূর স্থান, বৃষ্টিই ডুমুরের ফুল৷ অথচ সম্প্রতি তুমুল ঝড়বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত হল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-র রাজধানী

দুবাই-সহ অন্যান্য শহরের জনজীবন৷ দুবাইয়ে যেখানে বার্ষিক গডে় ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক বৃষ্টির পরিমাণ সে দেশের দেড় বছরের গড় বৃষ্টিপাতের সমান৷ এই অতিবর্ষণের ফলে পড়শি রাষ্ট্র ওমানেও হতাহত হয়েছেন বেশ কিছু মানুষ৷ পরিস্থিতি এমন শোচনীয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ উপযুক্ত নিকাশিব্যবস্থার অভাব৷

এ-হেন ভারী বর্ষণের পরে সমাজমাধ্যমে দাবি ওঠে, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা ‘ক্লাউড সিডিং’ ঘটাতে গিয়েই ঘটেছে এমন বিপর্যয়৷ ক্লাউড সিডিং এমন এক প্রযুক্তিগত পদ্ধতি,  যেখানে মেঘকে বৃষ্টি উৎপাদনের জন্য প্রভাবিত করা হয়৷ উড়োজাহাজের মাধ্যমে করা যেতে পারে ক্লাউড সিডিং৷ এর সাহায্যে সিলভার আয়োডাইড-এর মতো ছোট ছোট কণা বা অণুকণা ছডি়য়ে দেওয়া হয় মেঘের উপরে৷ ফলে জলীয় বাষ্প খুব সহজেই ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে,  মেঘে বীজ বপনের বিষয়টি এমনিতেই বিতর্কিত, যে-হেতু এই প্রক্রিয়া বাস্তবে কত কার্যকর, তার কোনও পোক্ত প্রমাণ এখনও মেলেনি৷ তা ছাড়া, আবহাওয়ার উপরে এর নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিও অস্পষ্ট৷ তৎসত্ত্বেও গত কয়েক দশক ধরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম প্রান্ত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো খরা পীডি়ত অঞ্চলের প্রশাসন এই ধরনের প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করে আসছে বৃষ্টি উৎপাদনের আশায়৷ শুধু তা-ই নয়, চিন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, মেক্সিকো এবং ভারতের মতো অনেক দেশই এখন ঝুঁকেছে এই প্রক্রিয়ার দিকে৷ চিন যেমন সেচের কাজে সুবিধার কারণে হামেশাই ব্যবহার করে থাকে এই প্রক্রিয়া৷ এমনও শোনা গিয়েছে, বেজিং অলিম্পিক্সের সময়ে আকাশ পরিষ্কার রাখতে এই প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছিল তারা৷ তবে সমাজমাধ্যমে ‘মেঘে বীজ বপন’-এর দাবি নস্যাৎ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুবাইয়ের অতি বৃষ্টির মূলে রয়েছে এই অঞ্চলেরই সাধারণ আবহাওয়ার প্রক্রিয়া যা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছে মনুষ্যসৃষ্ট পরিবেশ পরিবর্তনের জেরে৷

রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও)-র সদ্য প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে জলবায়ু, আবহাওয়া এবং জল-সংক্রান্ত বিপর্যয় গোটা বিশ্বে এশিয়ার চেয়ে বেশি আর কোনও অঞ্চলে ঘটেনি৷ তাপপ্রবাহ থেকে বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা— পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংখ্যার বিচারে এবং তীব্রতার নিরিখে এ-যাবৎ বৃদ্ধি পেয়েছে গোটা বিশ্বেই৷ তবে সমস্যাটি সাম্প্রতিক কালে এশিয়ায় অনেক বেশি তীব্র, যে-হেতু গ্রিনহাউস গ্যাসের জেরে বিশ্ব গডে়র তুলনায় আরও দ্রুত তপ্ত হয়ে উঠছে এই অঞ্চলটি৷ এই সময়ে চিন, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পডে় প্রখর তাপপ্রবাহের কবলে, যা প্রভাবিত করে বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে৷ ‘স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া’ নামক ডব্লিউএমও-র ওই রিপোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ৭৯টি জল-সংক্রান্ত বিপর্যয় ঘটে, যার সিংহভাগই ছিল বন্যা এবং ঝডে়র ঘটনা৷ এতে নব্বই লক্ষ মানুষ প্রভাবিত হন, মৃতু্য হয় দু’হাজারের বেশি৷ উষ্ণতা বাষ্পীভবন বৃদ্ধি করে, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাডে়, যা অতিবৃষ্টিরূপে নেমে আসে বহু স্থানে৷ অন্য দিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছয় গত বছর৷ উষ্ণ সমুদ্র থেকে নিঃসৃত তাপ শক্তি বৃদ্ধি করে ক্রান্তীয় ঝড়ঝঞ্ঝার৷ বিশ্ব জুডে় হিমবাহ গলে সমুদ্রে মিশে যত বাড়াচ্ছে সমুদ্রের জলস্তর, তত বৃদ্ধি পাচ্ছে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির প্লাবনের আশঙ্কা৷

লক্ষণীয়, পরিবেশ পরিবর্তনের জেরেই বর্তমানে চরম আবহাওয়ার নানা ঘটনাক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে৷ যার অন্যতম শুষ্ক অঞ্চলে অতিবর্ষণ এবং বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে খরা৷ মনে রাখতে হবে, বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত থাকলে, তা জলভাগ থেকে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে৷ দুবাই যে-হেতু পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত, তাই জলীয় বাষ্প বিপুল পরিমাণে ঢুকে পড়ায় মরুশহরে ওই বিপর্যয় নেমে আসে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দিনে উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পেলে দুবাইয়ের মতো শুষ্ক অঞ্চলে বাড়বে অতিবৃষ্টির প্রকোপও৷ বিশ্বের অন্যান্য অনেক শহরের তুলনায় দুবাইয়ের অর্থ তথা প্রযুক্তির জোর বেশি থাকলেও, প্রকৃতির মর্জির কাছে তাকে নতিস্বীকার করতে হয়েছে৷ ফলে ইঙ্গিত স্পষ্ট: প্রকৃতির সঙ্গে ছেলেখেলা চলে না৷ একই সঙ্গে উষ্ণায়নের বিষয়টিও যে মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে, তা আরও এক বার বোঝা গেল কি?

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সাবধানবাণী আজ ঘোর বাস্তব— শুধু উপকূল বা পাহাড় নয়, সমতলের মানুষও আজ প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় বিপন্ন৷

আর তাই গাঙ্গেয় অববাহিকায় ঠিক উল্টো ছবি৷ কলকাতায় জলকষ্ট আসন্ন বলে সতর্কতা জারি করেছে কলকাতা পুরসভা৷ গঙ্গার জলস্তর দ্রুত নীচে নামছে, ভাটার সময় পুরসভা জল তুললে উঠছে শুধু কাদামাটি৷ গঙ্গার জল পরিস্রুত করে গোটা কলকাতায় সরবরাহ করে পুরসভা৷ অতএব উৎসে ঘাটতি হলে মহানগর বিপন্ন হবে৷ অপর যে কারণে সঙ্কট ঘনিয়ে উঠছে তা হল, ভূগর্ভের জলস্তর নেমে যাওয়া৷ কেন্দ্রীয় ভূগর্ভ জল পর্ষদের পঞ্চবার্ষিকী রিপোর্টে ধরা পডে়ছে যে, ২০১৭-২৩ সালের মধ্যে কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমেছে দু’মিটারেরও বেশি, জলভান্ডার কমেছে অন্তত আঠারো শতাংশ৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জলস্তর নেমেছে আড়াই মিটার, ক্ষয় হয়েছে সাতাশ শতাংশ জল৷ এই হারে ক্ষয় হতে থাকলে দু’টি সঙ্কট প্রবল হবে৷ এক, জল মিলবে না৷ আর দুই, জলে আর্সেনিকের পরিমাণ বাড়তে থাকবে৷

বিত্তবান পরিবারে নানা ভাবে পানীয় জল দূষণমুক্ত করে খাওয়ার উপায় থাকলেও, দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের সে উপায় নেই৷ এমনকি পুরসভা বা স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটি পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করলেও তাঁরা সম্পূর্ণ নিরাপদ নন, কারণ শস্য ও তরিতরকারিতে আর্সেনিক মিলছে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় (২০১৯) দেখা গিয়েছে যে, কলকাতার এক জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক দিনে ৭৬ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক গ্রহণ করছেন খাবারের মাধ্যমে৷ দীর্ঘ মেয়াদে তা যে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াবে, বিশেষত অপুষ্টদের, তাতে সন্দেহ নেই৷ জল উত্তোলনের হার কমানো না গেলে দ্রুত জলভান্ডার অর্ধেক হয়ে যাবে, সতর্ক করেছে পর্ষদ৷ কিন্ত্ত জলসঙ্কট কঠিন হয়ে যতক্ষণ দেখা না দিচ্ছে, ততক্ষণ এই ধরনের সতর্কবার্তায় কে-ই বা কান দেয়?

পর্ষদ পরামর্শ দিয়েছেন জল সংরক্ষণের, অপচয় কমানোর৷ প্রতিটি নাগরিকেরই এ বিষয়ে সতর্ক, সক্রিয় হওয়া দরকার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ কিন্ত্ত বিপদ ঘাডে়র উপর এসে গেলে নাগরিকের উপর সমাধানের দায় চাপিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সরে দাঁড়ানোর পরিচিত অভ্যাসটিও জনস্বার্থের বিপরীতে যায়৷ প্রতি বছর ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া মহামারির আকার নিলে পুরসভা প্রচারে নামে৷ নাগরিকের বিবেক ও কর্তব্যবোধের কাছে আবেদন করেই কাজ সারে৷ কিন্ত্ত সারা বছর পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের দ্বারা রোগ নিবারণের কাজ অবহেলিত হয়৷ তেমনই, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ভূগর্ভের জল উত্তোলনে নিয়ন্ত্রণ, এবং পুরসভার সরবরাহ করা পরিস্রুত জলের অপচয় নিবারণের জন্য পুরসভা কতটুকু সচেষ্ট?

কলকাতা পুরসভার নিজস্ব পরিসংখ্যান (২০২২) অনুসারে, প্রতি দিন প্রায় ১৫৪ কোটি লিটার জল পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয়৷ যার মধ্যে দৈনিক সাড়ে ৩৬ কোটি লিটার জল (২৩ শতাংশ) অপচয় হয়৷ কলকাতায় মাথাপিছু দৈনিক ১৫০ লিটার জল দেয় পুরসভা৷ সেই হিসেবে এ শহরে প্রতি দিন ২৪ লক্ষ লোকের ব্যবহারের জল নালা-নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যায়৷ তার অনেকটার জন্যই নাগরিক দায়ী, কিন্ত্ত পুরসভাও কি জল অপচয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দায়ী নয়?এর সঙ্গে ধরতে হবে বড় বড় আবাসন এবং জলব্যবসায়ীদের ভূগর্ভের জল উত্তোলন থেকে বিরত করতে পুরসভার ব্যর্থতাকে৷ বৃষ্টির জল সংরক্ষণে অবহেলার জন্যও জলের বিপুল অপচয় হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীদের মতে, জলের যথাযথ সংরক্ষণ করলে একটি গৃহস্থালির সত্তর শতাংশ জলের প্রয়োজনই মেটানো যায়, কিন্ত্ত ভারতে বৃষ্টির জলের মাত্র আট শতাংশ সংরক্ষিত হয়৷ রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প চলছে, কিন্ত্ত পুর এলাকায় কী উদ্যোগ করা হয়েছে? রাজ্য সরকারের দফতর, পুলিশ থানা এবং পুরসভার ভবনগুলি এ বিষয়ে কী দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, কী উদাহরণ রাখছেন স্বয়ং মহানাগরিক এবং তাঁর দলের মন্ত্রীরা? নাগরিককে যদি সত্যিই জল সংরক্ষণে উৎসাহিত করতে হয়, তবে তা করতে হবে কাজ দেখিয়ে৷ কেবল কথায় এই মহাসঙ্কট এড়ানো যাবে না৷