• facebook
  • twitter
Thursday, 18 December, 2025

বিপন্ন ধর্মনিরপেক্ষতা

বিজেপি সরকার সংবিধানকে শক্তিশালী করে তুলেছে বলে দাবি করে মোদীর অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে। তাঁর দাবি, কংগ্রেস গত ছয় দশকে ৭৫ বার সংবিধান সংশোধন করেছে।

প্রতীকী চিত্র

সংবিধান নিয়ে সম্প্রতি সংসদে দীর্ঘ ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ভাষণে একবারও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি উচ্চারণ করলেন না মোদীজি। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সংবিধানের নীতিভঙ্গের অভিযোগের কোনও জবাবই দিলেন না। ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার প্রশ্নে কোনও বক্তব্য না রেখেই কিছু গালভরা কথা আউড়ে ভাষণ দেন মোদী।

বিজেপি সরকার সংবিধানকে শক্তিশালী করে তুলেছে বলে দাবি করে মোদীর অভিযোগের তীর কংগ্রেসের দিকে। তাঁর দাবি, কংগ্রেস গত ছয় দশকে ৭৫ বার সংবিধান সংশোধন করেছে। যদিও সেই সংশোধনীতে যে ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দু’টি যুক্ত করার বিষয় ছিল, সেকথা উল্লেখ করেননি মোদী।

Advertisement

এদিকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষার ইস্যুতে সোচ্চার বিরোধী সাংসদরা। বিরোধী নেতা কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী তাঁর ভাষণে বলেছেন, বিজেপি যে হিন্দুত্বের প্রচার চালায় সেখানে ভারতের সংবিধানের কোনও স্থান নেই। ওরা মনুস্মৃতি চালু করতে চায়। সাভারকারের নাম উল্লেখ করে রাহুল গান্ধি বলেন, এই হিন্দুত্ববাদী নেতা নিজেই জানিয়েছেন ভারতের সংবিধান দেশের নয়, বিদেশি। মনুস্মৃতিকে দেশে সংবিধান হিসাবে মানার দাবি জানিয়েছিলেন সাভারকার। মোদী, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার এখন সেটাই কার্যকর করতে চাইছে বলে উল্লেখ করেন রাহুল।

Advertisement

বিরোধী সাংসদরা দেশে পিছিয়ে পড়া আর্থিক দুর্বল মানুষের উন্নয়নে জাতভিত্তিক সমীক্ষার দাবিতে সোচ্চার। পিছিয়ে পড়া অংশকে চিহ্নিত করে তাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তোলায় মোদীর ভাষণেও সংরক্ষণের কথা এসেছে। যদিও সংবিধানে সংরক্ষণকে যে দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে, তাতে তাঁর সমর্থন নেই বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদী। এই প্রসঙ্গে মোদীর বক্তব্য, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতেই সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধীরা প্রচার চালায়। কংগ্রেস অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির (ওবিসি) সংরক্ষণের বিরোধী ছিল। আম্বেদকর যখন সংরক্ষণের কথা বলেন, তাতে কংগ্রেস বিরোধিতা করেছিল। তারা মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টও মানেনি।

সেই কংগ্রেসকে সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে আক্রমণ করলেও ৩৭০ ধারা বাতিলে সংশোদনীর পক্ষে সওয়াল করেন মোদী। বিরোধী দল এবং জম্মু-কাশ্মীরের আপত্তি সত্ত্বেও একতরফা ৩৭০ ধারা বাতিলের সংশোধনী নিয়ে সাফাই গাইতে দেখা গেল তাঁকে। এভাবেই স্ববিরোধী মন্তব্যে ভরা ছিল মোদীর ভাষণ।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টে উপাসনাস্থল আইন লঙ্ঘন নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ওই আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন মসজিদে সমীক্ষার নামে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। হিন্দুত্বের জিগির তুলতেই এই অভিযান। বিজেপি ও সঙ্ঘের এই উদ্যোগ সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে সরাসরি আক্রমণ হেনেছে। মোদী সংবিধান আলোচনায় তাঁর দলের সংবিধানের নীতি অমান্য করা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। উল্টো তাঁর দাবি, সংবিধানের উপর আক্রমণে দায়ী কংগ্রেস। সংবিধান রক্ষা করছে বিজেপির সরকার।

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা আলতাফ আহমেদ সংসদে বলেছেন, বিজেপি সংবিধানের কথা কোন মুখে বলে? তারা জম্মু-কাশ্মীরে একের পর এক স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরাই সরব হয়েছেন, তাঁদের জেলে ভরা হয়েছে। ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বিনা বিচারে জেলে মারা গেলেন স্ট্যান স্বামী। জেলে বিনা বিচারে বন্দি হয়ে রয়েছেন গবেষক উমর খালিদ, মীরান হায়দার। তাঁদের সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মোদীর আমলে মণিপুরে ডাবল ইঞ্জিন সরকার সংবিধানকে পদদলিত করে চলেছে। সংবিধান রীতি-নীতিকে তোয়াক্কাই করছে না মোদী সরকার।

হিন্দুত্বের প্রকাশ ঘটাতে তাই মোদীর মুখে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি নেই। বিপন্ন আম্বেদকরের সংবিধান।

Advertisement