• facebook
  • twitter
Wednesday, 9 July, 2025

চতুরঙ্গ

দীন দুনিয়ার মালিক বাদশা তো তাজ্জব। ‘ওতে আপনার কি হবে? আমি খবর পেয়েছি, আপনি দান-খয়রতে দাতাকর্ণ।’ খোজা এলবুর্জ পাহাড়ের মত অচল অটল।

প্রতীকী চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

তড়িঘড়ি লোকলশ্করসহ উজীর-ই-আলাকে পাঠিয়ে দিলেন খোজাকে পরম যত্ন সহকারে রাজদরবারে নিয়ে আসতে। খোজা আসামাত্র তখ্ৎ-ই-সুলেমান ত্যাগ করে বাদশা তাঁকে আলিঙ্গন করে পাশে বসালেন। মাথায় সোনার তাজ পরিয়ে দিলেন, গায়ে কাশ্মীরী শাল জড়িয়ে দিলেন, কোমরবন্ধে দমশ্কী তলওয়ার ঝুলিয়ে দিলেন। চতুর্দিকে জয়জয়কার।

সভাভঙ্গের পর বাদশা নিভৃতে ইতি-উতি করে, আশ-কথা পাশ-কথা কাড়ার পর অতি সন্তর্পণে তাঁর জাগীরের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। খোজা করজোড়ে ‘সে কি শাহ্-ইন-শাহ, আপনার যে পূত পবিত্র…ইত্যাদি’ বলে তিনি নিবেদন করলেন, রাজসম্মানই তাঁর পক্ষে যথেষ্ট।

বাদশাহ বিস্তর চাপাচাপি করার পর খোজা বললেন, ‘হুজুরের যখন নিতান্তই এ হেন বাসনা তবে হুকুম জারি করে দিন কাল সকাল থেকে যারা বউকে ডরায় তারা আমাকে একটি করে ডিম প্রতি সকালে দেবে।’

দীন দুনিয়ার মালিক বাদশা তো তাজ্জব। ‘ওতে আপনার কি হবে? আমি খবর পেয়েছি, আপনি দান-খয়রতে দাতাকর্ণ।’
খোজা এলবুর্জ পাহাড়ের মত অচল অটল। তবে তাই সই। ইরানী ভাষায় বলতে গেলে আলোচনার কার্পেট তখন রোল্ করে গুটিয়ে ঘরের কোণে খাড়া করে রেখে দেওয়া হল।

পরদিন ফজরের নামাজের সময় থেকেই হৈ-হৈ-রৈ-হৈ। এস্তেক রাজবাড়িতেও মমলেট-অমলেট নেই। কি ব্যাপার? যাদের বাড়িতে মুর্গী নেই তারা ফজরের আজানের পূর্বে ছুটেছে বাজার পানে। ডিম কিনে ধাওয়া করেছে খোজার ডেরার দিকে।
সেখানে ডাঁই ডাঁই হুদো হুদো আণ্ডার ছয়লাপ! আণ্ডার নবীন ব্রহ্মাণ্ড!

পাইকিরী ব্যবসায়ীরা চতুর্দিকে বসে!

সাতদিন যেতে না যেতে খোজা ঢাউস তেতলা হাওয়া-মঞ্জিল হাঁকালেন। পক্ষাধিককাল মধ্যেই বোখারার কার্পেট, সমরকন্দের রেশমী তাকিয়া, মুরাদাবাদী আতরদান, গোলাবপাশ, বিদরী আলবোলা, রাজস্থানের গোলাপী মার্বেলের ফোয়ারা, সরণ-দীপের (স্বর্ণদ্বীপ সিংহল) হাতির দাঁতের চামর, ব্যজনী!

বাদশা তো আজব তাজ্জব মানলেন।

(ক্রমশ)