পূর্ব প্রকাশিতর পর
মুশকিল আসান অত সহজে হয় না। প্রথমত কোনো কোনো বর্ণনা ডায়ালগে প্রকাশ করতে হয়; তখন উপায়? সেটা তৈরি করে দেবে কে? সে-কলম আছে কার? রবীন্দ্রনাথের বারোটি গান নিয়ে যখন দম্ভী লেখকেরা মাঝখানে মাঝখানে ‘আপন’ গদ্য জুড়ে দিয়ে কিমপিয়ার (কঁপের) করেন, এবং দুই পাকা গানের মাঝখানে সেই কাঁচা বাঙলা শুনতে হয় তখন মনে হয় না থাক, বাবা, বাড়ি যাই?
Advertisement
কিন্তু সেইটেই প্রধান শিরঃপীড়া নয়। আসল বেদনা অন্যখানে। বইয়ের লেখা ডায়ালগ আর সিনেমায় উচ্চারিত কথাবার্তা এক জিনিস নয়। বই বন্ধুজনের সঙ্গে পড়ে শোনানো যায়—তার পাল্লা অদূর অবধি। নাট্যে, পর্দায় সেটা অত্যধিক ‘সাহিত্যিক’। অবশ্য নিছক ফিলিমের জন্য লেখা রাবিশের কথা এখানে হচ্ছে না।
Advertisement
অন্যদিকে, সিনেমার ভাষাতে যদি কোনো সাহিত্যিক মূল্যই না থাকে তবে সে ইসথেটিক পর্যায়ে উঠতে পারবে না। এই হল আমাদের দু-মুখো সাপ, ডিলেমা, প্যারাডকস্—যা খুশি বলতে চান বলুন।
অন্যদিকে সিনেমার ভাষাতে যদি কোনো সাহিত্যিক মূল্যই না থাকে তবে সে ইসথেটিক পর্যায়ে উঠতে পারবে না। এই হল আমাদের দু-মুখো সাপ, ডিলেমা, প্যারাডকস্—যা খুশি বলতে চান বলুন।
প্রথম যখন মানুষ পাথরের বাড়ি তৈরি করতে শিখল তখন পূর্বতন যুগের কাঠের বাড়ির অনুকরণে পাথরের বাড়ি তৈরি করতো; বাঙলা দেশে ইট চালু হওয়ার পর প্রথমটায় সে খড়ের চালের অনুকরণ করেছে; বেতারের বয়স হয়েছে—এখনো সে নাটক করার ‘থিয়েডারের’ (থিয়েটারের নয়) অনুকরণ করে—ফিলিম কেন অনুকরণ করতে যাবে?
ক্রন্দসী
—‘‘শ্যামার নামের মন্ত্রগুণে / উতলা নগররক্ষী আমন্ত্রণ শুনে / রোমাঞ্চিত; সত্বর পশিল গৃহ মাঝে / পিছে বন্দী বজ্রসেন নতশির লাজে / আরক্ত কপোল। কহে রক্ষী হাস্য ভরে, / ‘অতিশয় অসময়ে অভাজন ’পরে / অযাচিত অনুগ্রহ।’’
ওঃ ভাষার কী জেল্লায়! ‘অতিশয় অসময়ে অভাজন অযাচিত অনুগ্রহ—’ ‘অ’-য়ে ‘অ’-য়ে ছয়লাপ! তা-ও ইনসপেকটর জেনারেল্ অব্ পুলিসের মুখে!
গল্পটি সকলেরই জানা। রবীন্দ্রনাথ এটি কণেবর জাতক থেকে নিয়েছেন। আজকের দিনের ভাষায় বলতে গেলে রাজ্যপালের মেয়ের আঙটি হারিয়েছে। তুমুল কাণ্ড। স্বয়ং আই. জি. যখন চোর ধরে গবর্নমেন্ট হৌসের দিকে যাচ্ছেন তখন মনে করুন মাতাহরি তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনি কি তখন ‘উতলা’ এবং ‘রোমাঞ্চিত’ হবেন না? তাঁর মুখে কি তখন খৈ ফুটবে না, চোখ দুটো পলকা না নাচবে না! অবশ্য সামান্য ‘অ’ দিয়ে কবিত্বের প্রকাশ—রবীন্দ্রনাথ অতি মোলায়েম ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পুলিস এর বেশি আর কি কবিত্ব করবে? তবে কিনা রবীন্দ্রনাথ যখন কবিতাটি লিখেছিলেন সেদিনের তুলনায় আজকের পুলিশ বড্ড বেশি লেখা-পড়া করে আপন সর্বনাশ টেনে আনছে!
আমার অবস্থা হয়েছিল বজ্রসেনের। সে চোর।
আমি তখন বোম্বায়ে। আমার এক বন্ধু ব্যাঙ্কার। নাম জাভেরী—অর্থাৎ জহুরীর গুজরাতী সংস্করণ। এক বাঙালী ‘ফিলিম-এস্টারের’ শাদী।
(ক্রমশ)
Advertisement



