• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

চতুরঙ্গ

৩১শে জানুয়ারী হইতে ৪ঠা ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ‘বার্লিনে রক্তাক্ত জানুয়ারী’ শীর্ষক কতকগুলি প্রবন্ধ লিখিলাম।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

সংখ্যায় ইহারা অল্প, কিন্তু যুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষায় ইহারা উত্তীর্ণ হইয়াছে। ইহাদের দেখিয়া লোকের মনে আশা জাগিয়াছিল যে যুদ্ধের পরে এই দলটিকেই কেন্দ্র ক রিয়া এমন একটি সেনাবাহিনী গড়িয়া উঠিবে যাহারা সত্যের দাবীকে ভবিষ্যতের সর্বপ্রকার আঘাতের হাত হইতে রক্ষার সংকল্প গ্রহণ করিবে। সত্যের দাবীই ত’ সামাজিক সুবিচারের দাবী, আর কর্মের মধ্য দিয়া সত্যের বিকাশই ত’ সামাজিক সুবিচার।

Advertisement

‘‘চিন্তার স্বাধীনতার ঘোষণাবাণী’র (Declaration of Independence of Thought) মধ্য দিয়া আমি এই সৈনিকগণকেই সম্মিলিত হইবার আহ্বান জানাই। ১৯১৯ সালের ১৬ই মার্চ এই ঘোষণাবাণী রচিত হয়, ২৬শে জুন, ‘ল্যুমানিতে’ পত্রিকার উহা প্রকাশিত হয়। স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা ছিল সত্যই বিস্ময়কর। এক বৎসরের মধ্যে এই সংখ্যা কয়েক শত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেনাবাহিনী কত শূন্য, কত ব্যর্থ, কত আত্মপ্রবঞ্চিত। এই আমার স্বপ্নভঙ্গের, আশাভঙ্গের প্রথম অভিজ্ঞতা, প্রথম হইলেও তীব্রতা ইহার কম নহে। যুদ্ধবিরতির পর প্রথম কয়েক বৎসরের মধ্যেই বুঝিতে পারিলাম এই ধরনের অভিজ্ঞতা আরও আমার ভাগ্যে আছে।

Advertisement

স্পষ্টই বুঝিতে পারিলাম নিরাপরাধকে দণ্ডদানের দায়িত্ব হইতে নিজেকে মুক্ত করাই স্বাধীনতা নহে। সংঘর্ষের তপ্ত আবহাওয়া হইতে দূরে ধীর শান্তভাবে, সমগ্রভাবে বিচার করিয়া স্বচ্ছ যুক্তিবলে সিদ্ধান্তটিকে অবজ্ঞাত উৎপীড়িত ন্যায়ধর্মের সেবায় নিয়োগ করাই প্রকৃত চিন্তার স্বাধীনতা। আমি লা ফন্টেনের সেই জ্যোতিষীর মত নই। যখনই কোনো মজ্জমান ব্যক্তির আর্তনাদ আমার কানে আসে তখনই আমি বিপন্ন মানুষের সাহায্যে ছুটিয়া যাই; এবং যখনই দেখি (যেমন আজ দেখিতেছি) অন্য কেহ তাহাকে ডুবাইয়া মারিতেছে, বিপন্নকে বাঁচাইবার জন্য হত্যাকারীরর সহিত সংগ্রাম করিতে আমি প্রস্তুত হই। এই কয়বৎসর আমি নির্জন পাঠকক্ষ হইতে বারম্বার ছুটিয়া সংঘর্ষের মধ্যে গিয়া দাঁড়াইয়াছি; যে চিন্তাকে ভাবিতাম ‘সংগ্রামের ঊর্ধ্বে’ তাহার সহিত যুদ্ধে প্রত্যক্ষ যোগদানের প্রয়োজনের আপাতবিরোধের সমাধান করিয়াছি।

১৯১৯ সালের প্রথম কয়মাস জার্মানীতে কয়েকটি সাংঘাতিক ঘটনা ঘটিয়া গেল— লীবনেক্ট ও রোজা লুক্সেমবুর্গ নিহত হইলেন; বিজয়ী দেশের বুর্জোয়া শাসকগণের উদ্যোগে এবং জার্মানীর সোস্যাল ডেমোক্রাটিক দল ও সমরালিপ্সু, অভিজাত শ্রেণীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্মার্টাসিস্ট বিপ্লব দমন করা হইল। আমি সংগ্রামের একেবারে কেন্দ্রস্থলে গিয়া দাঁড়াইলাম।

৩১শে জানুয়ারী হইতে ৪ঠা ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ‘বার্লিনে রক্তাক্ত জানুয়ারী’ শীর্ষক কতকগুলি প্রবন্ধ লিখিলাম। প্রবন্ধগুলি ল্যুমানিতে পত্রিকায় (১৬ই, ১৭ই, ১৮ই ফেব্রুয়ারী সংখ্যায়) ও লাভনির অ্যাঁতেরনাসিয়নাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধগুলিতে জার্মানীর হত্যাকাণ্ডের আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যদিও কোনো রাজনৈতিক দলের বাঁধাবুলি আমার ছিল না, তথাপি সত্য ঘটনার নির্মম সাক্ষ্য আমাকে স্থির থাকিতে দিল না; আমি তীব্র নিষ্ঠুর ভাষায় সোস্যাল ডেমোক্রাটিক দলের কলঙ্কময় ভূমিকাকে আক্রমণ করিলাম।

(ক্রমশ)

Advertisement