• facebook
  • twitter
Monday, 28 July, 2025

চতুরঙ্গ

আমার এলাকায় পৃথিবীর বৃহত্তম গাঁজার চাষ এবং গুদোম। ভারতে গাঁচার চাষ প্রায় নেই। আমি এ সব তত্ত্ব জানতুম না।— সমস্ত জীবন কাটিয়েছি আসামে, বরঞ্চ চায়ের খবর কিছুটা রাখি।

পূর্ব প্রকাশিতর পর

টোটেন নানাবটি কেস পড়ছিল। বললে, ‘আপনি কিসসুটি জানেন না, চাচা। আপনার জানা নেই, এ সংসারে মিথ্যাবাদী আছে এবং তার চেয়ে বড় মিথ্যাবাদীও আছে এবং সর্বশেষ স্ট্যাটিসটিশিয়ানদের কথা ভুলবেন না। ওদের মাল নিয়েই তো সরকার গুল মারে। নিত্যি নিত্যি কাগজে দেখতে পান না? আমি আপনার দোরে যাব কেন?’
‘তবে শোন্। নিশ্চিন্ত হয়ে বলি।’

পার্টিশনের বছর খানেক পরের কথা। আমার মেজদা ওতর বাংলার কোথায় যেন কি একটা ভাঙর নোকরি করেন। তাঁর সঙ্গে দেখা। আমরা এখন দুই ভিন্ন ভিন্ন স্বাধীন দেশের অধিবাসী। কিন্তু আমাদের ভিতর কোনো ঝগড়া-কাজিয়া নেই। এই অ্যাদ্দিন বাদে নেহরুজী আর আইয়ুব খান সায়েব সেটা বুঝতে পেরে আমাদের শুভ-বুদ্ধি এক্তেয়ার করেছেন। তা সে যাকগে।
হিন্দুস্থানের বিস্তর দরদ-ভরা তত্ত্বতাবাশ করে মেজদা শুধলে, ‘তোদের দেশে গাঁজার কি পরিস্থিতি?’
আমি একগাল হেসে বললুম, ‘‘স্বরাজ পেয়ে বাড়তির দিকে।’’

মেজদা আশ্চর্য হয়ে শুধালে, ’’সে কিরে? কোথায় পাচ্ছিস? আমি তো চালান দিতে পারছিনে।’’
আমিও অবাক। শেষটায় বোঝা গেল দাদা ছিলিম মেরে শিবনেত্র হওয়ার সত্যিকার গাঁজার কথা বলছে। আমি কি করে জানবো? আমি পাষণ্ড বটি,— দাদা ধর্মভীরু, সদাচারী লোক।
বললে, ’’শোন।’’

পার্টিশনের ফলে মেলা অচিন্তিত প্রশ্ন, নানা ঝামেলা মাথা চাড়া দিয়ে খাড়া হয়ে উঠলো এবং তারই সর্বপ্রধান হয়ে উঠে দাঁড়ালো গঞ্জিকা-সমস্যা।

গাঁজার এত গুণ আমি জানতুম না। শুনতে পেলুম, স্বয়ং জাহাঙ্গীর বাদশা নাকি গাঁজা খেয়ে উভয়ার্থে অচৈতন্য হয়েছিলেন। সেটা নাকি তুজ্ক-ই-জাহাগীরীতে আছে। গাঁজা ছাড়েন শেষটায় তিনি মনের দুঃখে। এর দাম অতি শস্তা বলে সেটা পোষায় না রাজা-বাদশাহের রাজসিক জাত্যভিমানে। সে কথা যাক্।

আমার এলাকায় পৃথিবীর বৃহত্তম গাঁজার চাষ এবং গুদোম। ভারতে গাঁচার চাষ প্রায় নেই। আমি এ সব তত্ত্ব জানতুম না।— সমস্ত জীবন কাটিয়েছি আসামে, বরঞ্চ চায়ের খবর কিছুটা রাখি। এসব গুহ্য রহস্যের খবর দিয়ে গাঁজা ফার্মের ম্যানেজার আমাকে একদিন দুঃসংবাদ দিলে, সে বচ্ছরের গাঁজা গুদোমে পচে বরবাদ হব হব করছে। ইণ্ডিয়াতে চালান দেবার উপায় নেই—অথচ সেখানেই তার প্রধান চাহিদা।’’

আমি শুধলুম, ‘‘কেন? তুমি নিজে খাও না বলে অন্য লোকেও খাবে না? এ তো বড় জুলুম!’
দাদা বললে, ‘‘কী জ্বালা! আমি শ্রীঘরবাস পছন্দ করিনে; তাই বলে আমি জেল তুলে দিয়েছি নাকি? সাধে কি বলি তুই একটা চাইল্ড প্রডিজি—ওয়াণ্ডার চাইল্ড—চল্লিশ বছরে তোর যার জ্ঞানগম্যি হল, আল্লার কুদরতে পাঁচ বছর বয়সেই সেটা তুই অর্জন করে নিয়েছিলি।’’

আমি চটে গিয়ে বললুম, ‘‘আার তুমি বিয়াল্লিশে।’’ —দাদা আামার চেয়ে দু’বছরের বড়।
দাদা বললে, ‘‘তোর রসবোধ নেই। ঠাণ্ডা হ।’’

রক্ফেলারদের দিকে তাকিয়ে বললুম, ‘এসব মাইনর বর্ডার ইনসিডেন্ট আমাদের ভিতরে কালে-কস্মিনে হয়, কিন্তু মিটমাট হয়ে যায় ‘আকাশ-বাণী’, ‘ঢক্কা-ডিংডমে’ পৌংছবার পূর্বেই।’

(ক্রমশ)