পূর্ব প্রকাশিতর পর
জাহাজে প্রথম দু’একদিন ঠিক আঁচা যায় না, শেষ পর্যন্ত কার সঙ্গে কার পাকাপাকি দোস্তী হবে। কোন্ মঁসিয়ো কোন মাদমোয়াজেলের পাল্লায় পড়বেন, আর হ্যার্ কোন্ ফ্রাউ ব ফ্রলাইনের প্রেমে হাবুডুবু খাবেন, কোন্ মিসিস কোন্ মিস্টারের সঙ্গে রাত তেরোটা অবধি খোলা ডেকে গোপন প্রেমালাপ করবেন। এ তিনটির বেলা কিন্তু সবাই বুঝে গেল এটা ইটার্নেল্ ট্রায়েঙ্গল। আমি অবশ্য গোঁসাইয়ের মত প্রথমটায় ভাবলুম, হার্মলেস ব্যাপারটাও হতে পারে।
মেয়েটি ফরাসির, ছেলে দুটোর একটা মারাঠা, আরেকটা গুজরাতি বেনে। প্যারিস থেকেই নাকি রঙ্গরস আরম্ভ হয়েছে। বোম্বাই অবধি গড়াবে। উপস্থিত কিন্তু আমরা তিনজনারই মনে প্রশ্ন জাগলো, আখেরে জিতবে কে?
শুনেছি, এহেন অবস্থায় দুজনাই স্পানিয়ার্ড হলে ডুয়েল লড়ে, ইতালীয় হলে একজন আত্মহত্যা করে, ইংরেজ হলে নাকি একে অন্যকে গম্ভীরভাবে স্টিফ বাও করে দু’দিকে চলে যায়, ফরাসী হলে নাকি ভাগাভাগি করে নেয়।
প্রথম ধাক্কাতেই গুজরাতি গেলেন হেরে। মারাঠাটা চালাকী করে ডবল পয়সা খর্চা করে দু’খানি ডেক-চেয়ার ভাড়া করে রেখেছিল পাশাপাশি। বেনের মাথায় এ বুদ্ধিটা খেললো না কেন আমরা বুঝে উঠতে পারলুম না। মারাঠা নটবর সেই হুরীকে নিয়ে গেল জোড়া ডেক-চেয়ারের দিকে—স্যর ওয়ালটর রেলে যে রকম রানী ইলিজাবেথকে কাদার উপর আপন জোব্বা ফেলে দিয়ে হাত ধরে ওপারের পেভমেন্টে নিয়ে গিয়েছিলেন।
দু’জনা লম্বা হলেন দুই ডেক-চেয়ারে। বেনেটা ক্যাবলাকান্তের মত সামনে দাঁড়িয়ে খানিকটা কঁই-কুঁই রে কেটে পড়লো।
আমার পাশের ফরাসী বললে, ‘ইডিয়ট!’ জর্মন শুনে বললে ‘নাইন, আখেরে জিতবে বেনে।’ ‘এ্যাঁপসিবল্!’ ‘বেট?’ ‘বেট!’ ‘পাঁচ শিলিঙ?’ ‘পাচ শিলিঙ!’
আড্ডার দিকে ভালো করে একবার তাকিয়ে নিয়ে চাচা বললেন, ‘বিশ্বাস করো আর নাই করো, আস্তে আস্তে জাহাজের সবাই লেগে গেল এই বাজি ধরাধরিতে! বুকিরও অভাব হল না। আর সে বেট্ কী অদ্ভুত ফ্লাকচুয়েট করে। কোনোদিন ভোরে এসে দেখি জর্মনটা গুম্ হয়ে বসে আছে—যেন জাহাজ একটা কনসানট্রেশন ক্যাম্প—আর ফরাসীটা উল্লোসে ত্রিং ব্রিং করে পলকা নাচ নাচছে। ব্যাপার কি? পাক্কা খবর মিলেছে, আমাদের পরীটি কাল হাত দু’টো অবধি মারাঠার সঙ্গে গুজুর-গুজুর করেছেন। বেনে মনের খেদে এগারোটাতেই কেবিন নেয়। ফরাসী এখন সক্কলের গায়ে পড়ে থ্রি টু ওয়ান অফার করছে। সে জিতলে পাবে কুল্লে এক শিলিং, হারলে দেবে তিন শিলিং। নাও, বোঝ ঠ্যালা! আর কোনোদিন বা খবর রটে, বেনের পো জাহাজে ক্যাম্বিসের চৌবাচ্চায় হুরীর সঙ্গে দু’ঘণ্টা সাঁতার কেটেছে— মারাঠা জলকে ভীষণ ডরায়। ব্যস, সেদিন বেনের স্টক স্কাই হাই!
ইতিমধ্যে একদিন বেনের বাজার যখন বড্ড ঢিলে যাচ্ছে তখন ঘটলো এক নবীন কাণ্ড। হুরী ও মারাঠা তো বসতো পাশাপাশি কিন্তু লাইনের সর্বশেষে নয় বলে হুরীর অন্য পাশে বসতো এক অতিশয় গোবেচারা ভালো মানুষ নিগ্রো পাদ্রী।
(ক্রমশ)